• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পরিকল্পনা সচিব মোঃ নূরুল আমিন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে, সকল কাজ দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে

প্রকাশ:  ২১ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি সপ্তাহে একনেকের সভা করেন। তিনি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো খুঁজে বের করেন এবং সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি প্রতিটি একনেকের সভায় আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেন, সে নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা সরজমিনে দেখার জন্যে আমার জেলা পর্যায়ে আসা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন উন্নয়ন কাজগুলো যেনো সমন্বিতভাবে হয়। দেখা গেলো যে, রাস্তার কাজ করে গেলো, কিন্তু পরক্ষণেই এসে পানির লাইন, গ্যাস লাইন অথবা মাটির নিচে ক্যাবলের কাজ করতে গিয়ে ভালো রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ি করা শুরু করে দিলো। এসব যাতে না হয়। যে কোনো কাজ করতে গেলে সেটির সাথে রিলেটেড যেগুলো আছে, সে রিলেটেড দপ্তরগুলোর সাথে সমন্বয় করে কাজ করলে আর এ সমস্যা হয় না। তাই সরকারের উন্নয়ন কাজগুলো যেনো সমন্বিতভাবে করা হয়।’
দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের বাস্তবচিত্র এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ম্যাসেজ কী-তা এভাবেই তুলে ধরলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সচিব ফরিদগঞ্জের কৃতী সন্তান মোঃ নূরুল আমিন। তিনি গতকাল রোববার সকালে চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের সূচনালগ্নে এ কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, কোনো কাজের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) যাকে-তাকে দেয়া যাবে না। যে যেই কাজের এক্সপার্ট, তাকে সে কাজের পিডি করতে হবে। আর একজনকে একটি কাজের প্রকল্প পরিচালক করতে হবে। একসাথে একজনকে কয়েকটি প্রকল্পের পিডি করলে একটাও ঠিকমতো হয় না। আবার দেখা গেছে যে, এক ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান একসাথে বহু কাজের ঠিকাদারি পায়। তখন দেখা যায় যে, একটি কাজও ঠিকমতো হয় না। যেমন জিকে শামীম। এই এক ব্যক্তির কারণে এখন বহু কাজ স্থবির হয়ে আছে। এমন জিকে শামীম সব জায়গায়ই আছে। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে, সকল কাজ দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে এখন দারিদ্র্যের হার শতকরা ২১ ভাগ। আর আমেরিকায় ১৮ ভাগ। আমি যেভাবে দিচ্ছি, তা যদি সঠিকভাবে, দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে আমাদের দারিদ্র্যের হার তখন ১৭তে নেমে আসবে। তখন আমরা আমেরিকাকে বলতে পারবো তোমরা এসে দেখে যাও আমার দেশ আজ কীভাবে এগোচ্ছে। তোমরা যে একসময় আমাদের বলেছিলে তলাবিহীন ঝুড়ি, দেখে যাও আজ আমরা তোমাদের ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম হবে। যেটির তিন দিক খোলা থাকবে, একদিক গ্যালারি থাকবে।
সভায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর তার দপ্তরের কাজের বিবরণ প্রসঙ্গে শাহরাস্তির ইউএনও বলেন, ওনারা উপজেলায় কী কাজ করেন তা আমরা জানি না এবং আমাদেরকে কখনো জানানোও হয় না। আমরা ওনাদেরকে ডেকে এনে জানতে হয়। উপজেলায় উন্নয়ন কাজ হবে, অথচ ইউএনওরা জানবে না বা তদারকি, খোঁজখবর নিতে পারবে না এটা কেমন কথা? একই অভিযোগ করেন অন্যান্য ইউএনও এবং কয়েকজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এর প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা সচিব বলেন, এ অভিযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই ইউএনও, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তাদেরকে সরকারি সকল উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। শুধু অবহিত করাই নয়, তারা তদারকিও করতে পারবেন।
সভায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেকটা অভিযোগের সুরে বলেন, উপজেলার ১৭টি বিভাগ আমাদের (চেয়ারম্যান) উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এসবের কাজ তদারকি করার কোনো সুযোগ আমাদের আছে কি না। আমরা যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সে বিষয়টি মনে হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট আমলে নিচ্ছে না। আমাদের অনেকটা অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। জবাবে সচিব বলেন, অবশ্যই আছে। শুধু এই ১৭টিই নয়, উপজেলার যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ দেখার ক্ষমতা এবং সুযোগ চেয়ারম্যানদের দেয়া আছে। তিনি বলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়াররা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের সাথে করে নিয়ে গিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখাবেন। কোনো ধরনের লুকোচুরি করা যাবে না।
জেলার এই সমন্বয় সভায় সরকারের উন্নয়ন ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বিগত দশ বছরের (২০০৮-২০০৯ এবং ২০১৮-২০১৯) বাস্তবায়িত এবং চলমান উন্নয়ন কাজের বিবরণ তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে : এলজিইডি, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, বিদ্যুৎ, বিআইডব্লিউটিএ ও শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সভাপ্রধানে সভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) আসাদুজ্জামান, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ উল্যাহ চৌধুরী, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, জেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি রেজ্জাকুল হায়দার প্রমুখ।
সর্বশেষ বক্তব্যে পরিকল্পনা সচিব বলেন, কোনো উন্নয়ন কর্মকা-ের ব্যাপারে কাউকে অন্ধকারে রাখা যাবে না। জনপ্রতিনিধি হতে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সবকিছু স্বচ্ছ থাকতে হবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও পার্সেন্টেজ থাকবে না। চাঁদপুরের সুনাম যেনো অব্যাহত থাকে। চাঁদপুরে ২১০টি প্রকল্প চলমান আছে। যা অনেক জেলায় নেই। এই প্রকল্পগুলো খুব দ্রুত শেষ করে ফেলতে হবে।

 

সর্বাধিক পঠিত