শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব
বিসর্জনের পূর্বে চাঁদপুর শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা


প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। বিষাদ নয়, উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল ৮ অক্টোবর পূজারীদের সুবিধাজনক সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তারা তাদের প্রিয় দেবী দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন পর্ব শেষ করেন। এর মাধ্যমে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। এদিন সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে দেবীর বিসর্জন পর্ব শেষ হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে দেবী তাঁর স্বামীর গৃহ কৈলাশে ফিরে যান ঘোড়ায় চড়ে। দেবীর বিদায় পর্বের সকালে ভক্তহৃদয়ে নেমে আসে বিষাদের সুর। বিদায় পর্বে ছোট-বড় সকল বয়সের নারীরা ভক্তি-শ্রদ্ধা সহকারে তেল, সিঁদুর পরিয়ে দেবী দুর্গাকে রাঙিয়ে দেন শেষবারের মতো। তখন অনেক নারীর চোখের কোণ ভরে উঠে অশ্রুতে। এ যে জগৎ জননী মা দুর্গা, আবার ফিরে আসবেন একটি বছর পর, তখন হয়তো অনেকেই থাকবেন না, চলে যেতে হবে মায়াময় সংসারের মায়া ত্যাগ করে। এ চিন্তা-চেতনা থেকে তারা মায়ের চরণে শেষবারের মতো আবারো প্রার্থনা করেন তাদের সংসারের সুখ-শান্তিসহ আরোগ্য কামনায়। নারীদের তেল, সিদুঁর পরিয়ে দেয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিটি পূজা ম-পে। বিকেলে চোখে পড়ে খড়-মাটি দিয়ে গড়া দেবী প্রতিমার কাঠামো বিসর্জনের প্রস্ততি। চাঁদপুর শহরে সন্ধ্যার পর আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে শত শত নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরসহ সববয়সী মানুষের উপস্থিতিতে শুরু হয় বিসর্জন পর্ব। বিসর্জন পর্বে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় শহরের কালীবাড়ি, মিনার্ভা, গোপাল জিউর আখড়া, ঘোষপাড়া, পালপাড়া, হরিজন পূজাম-প, গুহ বাড়ি পূজা ম-প অংশ নেয়। তারা প্রতিমা সহকারে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌধুরীঘাট এলাকা সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্ব শেষ করেন। কু-ের বাড়ির পূজা ম-পও শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। তবে তারা প্রতিমা নয়, ঘট বিসর্জন দেন। এ সময় ঘাট এলাকাসহ নতুনবাজার-পুরাণবাজার সংযোগ সেতুতে দর্শনার্থী মানুষের উপস্থিতি ছিলো দর্শনীয়।
বিসর্জন পর্ব পূর্বক আনন্দ শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল সাহা, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি তপন সরকার, বিবেক লাল মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিৎ রায় চৌধুরী, সদস্য পরেশ মালাকার, হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, তমাল ভৌমিক, নেপাল সাহা, বিপ্লব চক্রবর্তী, অরূপ কুমার শ্যাম, গোবিন্দ সাহা, প্রবীর পোদ্দার, বিকাশ মজুমদার টিটু, গোপাল দাস, রনজিৎ সাহা মুন্না, কার্তিক সরকার, অমল রক্ষিত মনা, সদর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা, মুক্তিযোদ্ধা নির্মল রায়, প্রশান্ত কুমার সেন, সুকান্ত সাহা টিটু, সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুশীল সাহা, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চাঁদপুর শহর কমিটির সভাপতি রোটাঃ রিপন সাহা, সিনিয়র সহ-সভাপতি লিটন সাহা, সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস, চাঁদপুর মহিলা পরিষদের সভাপতি লীলা মজুমদার, সহ-সভাপতি কৃষ্ণা সাহা, স্বপ্না চক্রবর্তী, বুলি চক্রবর্তী, চন্দনা চক্রবর্তী, বিভিন্ন পূজা ম-পের নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ । সকলের উপস্থিতিতে বিসর্জনস্থল মিলনমেলায় পরিণত হয়। চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ নির্বিঘেœ বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন করতে বিসর্জনস্থলে আলোর ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেন।
শান্তিপূর্ণভাবে বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন করতে পুলিশ বিভাগের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। বিসর্জন পর্বে চাঁদপুর মিনার্ভা পূজা কমিটির নারীদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়। তারা তাদের সভানেত্রী রূপালী চম্পক ও বুলি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একই রংয়ের একই ডিজাইনের শাড়ি পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ায় শোভাযাত্রার জৌলুস আরো বৃদ্ধি পায়। গত ৪ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। ধর্মীয় বিশ^াসমতে দেবী এবার ঘোটকে চড়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। আবার ঘোটকে চড়েই কৈলাশ অর্থাৎ স্বামীর বাড়ি ফিরে যান। আর এ ঘোটকে আসা যাওয়া মানেই ঝড়-তুফানসহ প্রকৃতির বৈরী হাওয়া সৃষ্টি হওয়া। কিন্তু দেবীর আগমন ও গমনে তেমন কোনো প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি না হওয়ায় ভক্তবৃন্দ খুবই খুশি। তাই দেবী বিদায় বা বিসর্জন পর্বে দেখা যায়নি কোনো বিষাদের সুর। যা দেখা গিয়েছে তা হলো উৎসাহ আনন্দ। বড় বড় সাউন্ড বক্সের বিকট আওয়াজ আর লাল নীল আলোর ঝলকানি আর আনন্দ নৃত্যের মধ্য দিয়েই শোভাযাত্রা শেষে শহরের প্রতিমাগুলো চৌধুরীঘাট এলাকায় বিসর্জন দেয়া হয়।
এদিন পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স, পুরাণবাজার দাসপাড়া, কু-ের বাড়ি ও মজুমদার বাড়ি পূজা ম-পের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়নি। এ সকল প্রতিমা আগামী বছর পূজার সময় বিসর্জন দেয়া হবে বলে জানা যায়। এছাড়া পুরাণবাজার বারোয়ারী মন্দিরের দুর্গা প্রতিমাসহ পুরাণবাজারের অন্যান্য পূজা ম-পের প্রতিমা তাদের সুবিধা মতো রাত্রীকালীন সময় বিসর্জন দেয়া হয়েছে।
সুষ্ঠুভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হওয়ায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ জেলাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ।