• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ডাকাতিয়া নদীতে ভেসে উঠছে মৃত-অর্ধমৃত মাছ

খাঁচায় চাষকৃত মাছও মরে সাফ

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

গত দু’দিন যাবত ডাকাতিয়া নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার মাছের পাশাপাশি নদীতে খাঁচায় চাষকৃত মাছও মরে ভেসে উঠছে। এসব মাছ ৫০-১০০ টাকা কেজি দরে নদী তীরবর্তী বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে রঘুনাথপুর, ঢালীঘাট, ইচলী, গাছতলা ব্রিজ এলাকা হতে সাহেব বাজার ও শাহতলী পর্যন্ত নদীর পাড়ে নদীর সাধারণ মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি এবং খাঁচায় চাষকৃত তেলাপিয়া ও অন্যান্য মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন উপায়ে মৎস্য শিকারিরাও অস্বাভাবিক পরিমাণে মাছ গত দুরাতে শিকার করছে বলে জানা যায়। বড় বড় চিংড়ী মাছও পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে।
ঠিক কী কারণে নদীর মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে (দেশ এনার্জি) নদীতে হয়তো কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ফেলার কারণে এমনটি ঘটতে পারে।
এদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাঁচায় মাছ চাষ করা মৎস্য চাষিরা। অন্যদিকে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা এ সুযোগে স্বল্পদামে মাছ ক্রয় করতে পারছে বলেও জানা যায়।
ডাকাতিয়া নদীতে হঠাৎ মাছে মড়ক লাগায় দেশীয় প্রজাতির মাছসহ আড়াই হাজার ভাসমায় খাঁচায় চাষকৃত কোটি টাকার মাছ মরে ভেসে উঠছে। লোকসানের মুখে পড়েছে আড়াই শতাধিক জেলে। বেকার হচ্ছে চার শতাধিক শ্রমিক।
চাঁদপুর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে ২০০২ সাল থেকে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। বর্তমানে শহরের নতুনবাজার-পুরানবাজার সেতু থেকে গাছতলা চাঁদপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় ডাকাতিয়া নদীতে আড়াই হাজার ভাসমান খাঁচায় চাষ করা হয় কার্প জাতীয় মাছ। এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে আড়াই শতাধিক জেলে।
ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষী মোঃ তাজুল ইসলাম গাজী বলেন, ডাকাতিয়া নদীতে আমার ৮টি খাঁচা রয়েছে। এসব ভাসমান খাঁচায় তেলামিয়া, রুই, কাতল মাছ চাষ করছি। গত ক’দিনে হঠাৎ মাছে মড়ক দেখা দেয়ায় সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। কী কারণে হচ্ছে, তা বলতে পারছি না। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
মৎস্য চাষে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সোহেল গাজী জানান, প্রতিবছর প্রতিটি খাঁচায় স্বল্প সংখ্যক মাছ মারা গেলেও গত ৬ অক্টোবর থেকে ডাকাতিয়া নদীতে ভাসমান চাষকৃত আড়াই হাজার খাঁচার শত শত মণ মাছ মরে ভেসে উঠছে। দীর্ঘদিন মাছ চাষ করলেও এ ধরনের মাছে মড়ক কখনো দেখিনি। পানি দূষণ নাকি অন্য কোনো কারণে মাছগুলো মরে যাচ্ছে তা বলতে পারছি না।
চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাষ চাষ সমিতির সভাপতি মোঃ আলমগীর মিয়াজী বলেন, কয়েকদিন যাবত মাছ মরা শুরু হলেও মঙ্গলবার বেশি পরিমাণ মাছ মরে ভেসে উঠতে শুরু করে। খাঁচায় চাষকৃত মাছ তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেলসহ ডাকাতিয়া নদীর দেশীয় মাছ তথা বাইম, আইড়, কালিবাউস মাছও মরে পানিতে ভেসে উঠছে। কী কারণে হঠাৎ মাছ মরে ভেসে উঠছে তা আমরা বলতে পারছি না। মাছ মরে ভেসে উঠায় চাষীরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি জানান, চাঁদপুরের খাঁচায় মাছ চাষে আড়াইশ’ জন চাষী রয়েছেন। তাদের এই মৎস্য খামার কাজে চার শতাধিক শ্রমিক জড়িত রয়েছে। নদীতে মড়ক লাগায় এই কাজে জড়িত জেলে ও শ্রমিকরা এখন বেকার হওয়ার পথে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, নদীতে মাছ মরার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খাঁচায় চাষকৃত মাছ ও নদীর অনেক মাছ মরে পানিতে ভেসে রয়েছে। এতে মাছ চাষীদের আনুমানিক ৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে পানিতে অ্যামোনিয়া, পিএইচ ও অক্সিজেনের পরিমাণ ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিকদের জানিয়েছি। তারা পানি, মাটি ও মরা মাছ পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাঁচায় মাছ চাষের পাশে নদীতে অবৈধভাবে ‘ঝাঁক’ তৈরি করার কারণে কচুরিপানার জটলা সৃষ্টি হয়। তখন পানির অক্সিজেন ক্ষমতা কমে যায়। ‘ঝাঁক’ দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে ‘বিষ’ দেয়ায় ‘খাঁচায় মাছচাষে’ প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে হয়তো খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ ‘অক্সিজেন’ সংকটে মারা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীর তীরে দুুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকায় সেখানকার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানির প্রভাবেও ‘মাছ মারা’ যাচ্ছে কিনা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।


 

 

সর্বাধিক পঠিত