• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ফের অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ:  ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পরিচয়ে ও শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হয়েছেন রফিকুল আমিন কাজল
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নিন্দা ও ক্ষোভ
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥ একের পর এক অনিয়ম, প্রতারণা ও তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ উঠছে ফরিদগঞ্জ এ আর. পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে। প্রতিটি অভিযোগের বিপরীতে রয়েছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি সম্বলিত নথিপত্র। তার বিরুদ্ধে এবারের অভিযোগ নিজের বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখিয়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ফরিদগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হওয়া। সেই সাথে নিজের শিক্ষা সনদ জালিয়াতিসহ শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক ক্যাটাগরির আবেদন ফরমে দিয়েছেন বিভ্রান্তিকর ও মনগড়া তথ্য।
জানা যায়, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭ তে ফরিদগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন ফরিদগঞ্জ এ. আর. পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন কাজল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রূপসা আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বশির আহমেদ। তাকে পেছনে ফেলে ১১টি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৮১ নম্বর পেয়ে উপজেলায় প্রথম হয়েছিলেন মোঃ রফিকুল আমিন। এই ৮১ নম্বরের মধ্যেই রয়েছে বড় একটি গোলক ধাঁ ধাঁ।
গত ০৮-০১-২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৮ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। যার স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৯৯.৫০.২০১৬/৬৮। পরিপত্রে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচন কলামের ১১নং নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়, যে সকল প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ নম্বর পাওয়ার জন্যে বিবেচিত হবেন। তবে নির্দেশিকার বিবরণীতে উল্লেখ থাকে 'সনদ যাচাই পূর্বক নম্বর প্রদান করতে হবে।' রফিকুল আমিন কাজল ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে আবেদিত ফরমে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান হিসেবে দাবি করেন এবং সে অনুযায়ী ৫ নম্বর পান তিনি। অথচ ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক নিশ্চিত করা হয় রফিকুল আমিন কাজলের বাবা আব্দুর রব পাটওয়ারী কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না এবং ফরিদগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত ৭৮১ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নামও নেই বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ তপাদার। সম্প্রতি নতুন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় সংযোজিত হওয়ার জন্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত ৩২৬ জনের তালিকাতেও তার বাবার নাম নেই। এছাড়াও শীঘ্রই ভাতাপ্রাপ্ত হবেন এমন ১৩জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতেও এ নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই।  একাত্তরে যুদ্ধকালীন সময়ে রফিকুল আমিন কাজলের বাবা আব্দুর রব পাটওয়ারী ফরিদগঞ্জ মধ্যবাজারে একটি ফার্মেসীতে ঔষধ বিক্রি করতেন বলে বাজারের একাধিক প্রবীণ ব্যবসায়ী নিশ্চিত করেছেন।
কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ তপাদার চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমার কাছে যত ক্যাটাগরির তালিকা রয়েছে তার মধ্যে কোনো তালিকাতেই আব্দুর রব পাটওয়ারী নামে কোনো ব্যক্তির নাম নেই। তবুও তার সন্তান একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হয়ে কিভাবে নিজের বাবাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন তা আমার জানা নেই। এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হতে এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।
ডেপুটি কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সারোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কোনো নথিপত্রে বদরপুর গ্রামের আব্দুর রব পাটওয়ারীর নাম নেই। তার সন্তান কেন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজের বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে জাতির সাথে তামাশা করেছেন তা আমাদের জানা নেই। আমি মনে করি এমন ঘৃণিত কাজের মাধ্যমে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে হেয় করেছেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক সমাজকে জাতির বিবেক বলা হয়। সেই শিক্ষক কর্তৃক এমন জঘন্য কাজে নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে রফিকুল আমিন কাজলের গ্রাম বদরপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রামের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফরিদগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আলী আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমি যে বাহিনীতে যুদ্ধ করেছি সেখানে গেরিলার সংখ্যা ছিলো ১৭৬ জন, সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিলো ৩৫ জন ও বিএলএফ-এর সদস্য সংখ্যা ছিলো ১২জন। যেহেতু আমি এ অঞ্চলে যুদ্ধ করেছি, তাই রূপসা ইউনিয়নের সকল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে আমি চিনি। আব্দুর রব পাটওয়ারী নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা রূপসা ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে নেই। আমি দীর্ঘ বছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছি। কাজল বিএসসির বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ কথাটি শুনে খুব বিব্রত ও লজ্জিত হচ্ছি। এ ধরনের মানুষ নিঃসন্দেহে জাতির কলঙ্ক। এমন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাঝে মাঝে লজ্জায় মুখ লুকাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুতি, এ ধরনের নকল মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত করে মুখোশ উন্মোচন করা হোক। তবে হয়তো মরেও শান্তি পাবো।
নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ তৈরি করে বিগত দিনে তিনি চাকরি লাভ থেকে শুরু করে এমন আরও বহু স্থানে অবৈধ সুযোগ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে।
শুধু মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতিই নয়, নিজের ব্যক্তিগত শিক্ষা সনদও জালিয়াতি করেছেন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য। মাউশির পরিপত্রে নির্দেশিকা ছকে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত ১নং কলামে উল্লেখ রয়েছে আবেদিত ব্যক্তি এসএসসি, এইচএসসি ও ডিগ্রি (পাস)/সম্মান পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হলে ৮ নম্বর, ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হলে ৫ নম্বর করে পাবেন এবং পি.এইচ.ডি./এম.ফিল/বি-এড/এম-এড-এর জন্যে অতিরিক্ত ২ নম্বর প্রদেয় হবে। কিন্তু কোনো আবেদিত ব্যক্তি কোনো বোর্ড পরীক্ষায় ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ হলে তিনি শূন্য (০) নম্বর পাওয়ার  জন্যে বিবেচিত হবেন।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৬ তে রফিকুল আমিন কাজল শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য গত ০৯-০৫-২০১৬ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি এসএসসি, এইচএসসি ও ডিগ্রি পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ দেখিয়ে প্রতি পরীক্ষায় ৫ নম্বর করে তিন পরীক্ষায় ১৫ নম্বর এবং বি-এড পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য অতিরিক্ত ২ নম্বরসহ শিক্ষাগত যোগ্যতা কলামে মোট ১৭ নম্বর পেয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের ৫ নম্বর সহ সর্বমোট ৭১ নম্বর পান। আবেদন ফরমটিতে উপরের সকল তথ্য সঠিক উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন ও তৎকালীন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোঃ শামছুল হক ভূঁইয়া পৃথক স্বাক্ষর প্রদান করেন। যদিও তার সকল শিক্ষা সনদ ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ বলে একাধিক তথ্যসূত্র রয়েছে। তারপরও একই বছর ফরিদগঞ্জ রূপসা আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ বিএসসি তার চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়ায় তিনি শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন।
পরের বছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭ তে ফের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার জন্যে আবেদন করেন তিনি। এ বছর পূর্বের সকল ক্যাটাগরি বহাল রেখে নতুন করে নির্দেশিকা ছকের ৮নং কলামে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর পান তিনি। ৮নং কলামটি ছিলো পেশাগত গবেষণামূলক সৃজনশীল প্রকাশনা বিষয়ক। যার বিবরণীতে রফিকুল আমিন কাজল উল্লেখ করেন, শিক্ষকদের পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠদানের লক্ষ্যে দৈনিক পাঠ পরিকল্পনা নামক একটি সৃজনশীল ল’চার্ট বই প্রকাশ করেন তিনি! অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ২০১৭ সালই নয়, তার কর্মজীবনে তিনি কোনো বই-ই প্রকাশ করেননি। বরং শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নিয়ে পাঠদান করেন কিনা তার জন্যে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষকদের 'শিখন-শিখানো কর্যক্রম’-এর যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তা যথাযথ ভাবে সকল শিক্ষক পালনের জন্যে প্রতি শিক্ষককে তিনি সরকারি 'শিখন-শিখানো কার্যক্রম' বইয়ের একটি নমুনা ছকের আদলে স্থানীয় প্রেস থেকে বিদ্যালয়ের খরচে একটি করে খাতা বানিয়ে দেন। খাতার উপরে 'সৃজনশীল ল' চার্ট' নামে কোনো নামই উল্লেখ ছিলো না। খাতাটিতে কয়েকজন শিক্ষক নিয়মিত লিখলেও অধিকাংশ শিক্ষকই তা এড়িয়ে গেছেন বলে জানা যায়। অথচ একটি খাতাকে তিনি প্রকাশিত বই দাবি করে ১০ নম্বর নিয়ে সর্বমোট ৮১ নম্বর পেয়ে ২০১৭ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হন।
২০১৭ সালের আবেদিত ফরমটিও কম্পিউটার কম্পোজ করে প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন ও তৎকালীন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ ড. মোঃ শামছুল হক ভূঁইয়া পৃথক পৃথক স্বাক্ষর প্রদান করেন। কম্পিউটার কম্পোজকৃত তথ্য বিবরণী ফরমে উল্লেখ করা হয়, মোঃ রফিকুল আমিন এসএসসিতে ১ম বিভাগ, এইচএসসিতে ২য় বিভাগ, ডিগ্রি (পাস)-এ ২য় বিভাগ ও বি-এডে ২য় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন! পরবর্তীতে কম্পোজ লেখার উপর হাতে লিখে এসএসসি ১ম বিভাগকে ৩য় বিভাগ ও এইচএসসি ২য় বিভাগকে ৩য় বিভাগ বানানো হয়। যদি হাতে লেখা তথ্যটি সঠিক হয় তবে তিনি ২০১৭ সালে ডিগ্রী ও বি-এড সহ শিক্ষাগত যোগ্যতা কলামে ১৭ নম্বরের স্থলে ৭ নম্বর পাওয়ার কথা। কারণ মাউশি কর্তৃক প্রকাশিত পরিপত্রের নির্দেশিকায় সকল পরীক্ষার ৩য় শ্রেণি বিভাগে উত্তীর্ণ হলে শূন্য নম্বর প্রদেয় হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। আর যদি কম্পিউটার কম্পোজটি সঠিক হয় তবে তিনি এসএসসিতে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার তথ্যটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হওয়া বিবরণী ছকের শিক্ষাগত যোগ্যতা কলামে রফিকুল আমিন কাজল দু'রকম তথ্য প্রদান করলেও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে স্কুল জাতীয়করণ সংক্রান্ত নিজ স্বাক্ষরিত নথিপত্রে তিনি এসএসসি ও এইচএসসিতে ৩য় বিভাগ বলে দাবি করেছেন।

বহুরুপী রফিকুল আমিন কাজল ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষণে ক্ষণে নিজের রূপ পাল্টিয়েছেন। স্বার্থ হাসিলের জন্যে নিজে সরকারি নথিপত্রে এসএসসিতে কখনো ১ম, কখনো ২য় এবং কখনো ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে দাবি করলেও তার সাথে ১৯৮০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া তার একাধিক সহপাঠী চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এসএসসি ও এইচএসসি দু'টোতেই ৩য় বিভাগ পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার বাবা যুদ্ধে অংশ না নিলেও মুক্তিযুদ্ধের সনদ না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে বহু কাজের তরী পার হয়েছেন অনায়াসে। সনদ ও তথ্য জালিয়াতি করা এমন একজন মানুষ কী করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বহাল থাকেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আলী আশরাফ বলেন, সাধারণত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মিথ্যা কথা বলেন না। তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হয়তো সেই বিশ্বাসের উপরেই তাকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে প্রাপ্য নম্বর দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি যদি প্রতারণা করেন তবে তা ঠিক করেননি। শিক্ষা সনদ নিয়েও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক হলে তাও দুঃখজনক। আগামীতে আমরা সবকিছু যাচাই বাছাই করেই সিদ্ধান্ত দিবো।
রফিকুল আমিনের ২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হওয়ার স্বীকৃতি সনদ ও ক্রেস্ট প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি অর্থাৎ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

নিজের বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে অতিরিক্ত ৫ নম্বর পেয়ে রফিকুল আমিন ২০১৭ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, নিজের বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে তিনি শুধু আমাদের শিক্ষক সমাজের সাথেই প্রতারণা করেননি, একাত্তরে যাঁরা রক্ত দিয়ে এই দেশটা স্বাধীন করেছেন এমন প্রতিজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথেই প্রতারণা করেছেন। আমরা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমি বিশ্বাস করি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার যোগসূত্র বা অবৈধ সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ করা অসম্ভব। রফিকুল আমিন ২০১৭ সালে ডিসি অফিস থেকে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের যে ক্রেস্ট গ্রহণ করেছেন তা ফিরিয়ে দিয়ে অনতিবিলম্বে শিক্ষক সমাজ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, বিগত দিনেও রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হয়। সনদ জালিয়াতি, অবৈধ নিয়োগ ও তথ্য গোপন করে একাধিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়াসহ তার বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগেরই তিনি প্রতিবাদ জানাননি। সকল অফিযোগ সত্যি বলেই কি তিনি নীরব ভূমিকায়? আর যদি তা-ই হয় তবে কেন তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ইতঃমধ্যে তার সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ফরিদগঞ্জ সাধারণ ছাত্র রক্ষা ঐক্য পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি ৭ দফা দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও প্রেরণ করেছে।

সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ

সর্বাধিক পঠিত