মাতৃদুগ্ধ ভাতাতেও ভাগ বসালেন ইউপি সদস্যরা!


লোভ মানুষকে যে কতটুকু নীচে নামাতে পারে তার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত দেখালো চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউপির সদস্যরা। মাতৃদুগ্ধ ভাতাতেও তারা ভাগ বসালো। প্রতি কার্ডধারী থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে। গতকাল রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে চাঁদপুর শহরের ওয়্যারলেছ এলাকাস্থ সোনালী ব্যাংকে। ওই ইউনিয়নের মাতৃদুগ্ধ ভাতা নিতে আসা নারীরা এ অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগের বিষয়ে উপর্যুপরি ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ষোলঘরস্থ সোনালী ব্যাংক শাখায় গত কয়েক দিন ধরে মাতৃদুগ্ধ ভাতা দেয়া হচ্ছে। গতকালও পূর্বের নির্ধারিত কার্ডধারীরা এ টাকা নিতে এসে তারা মৈশাদী ইউপির মেম্বারদের হাতে হেনস্তা হন। অনেকে ওই মেম্বারদের সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। ‘কার্ড করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেক টাকা খরচ হয়েছে’ এমন অজুহাতে তারা টাকা নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাত-আট জন নারী বলেন, ‘আমরা বাংক থেকে ৯ হাজার ছয় শ’ টাকা করে পাই। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচে আসতেই আমাগো মেম্বাররা আমাদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নিয়ে গেছে। কোন্ কোন্ মেম্বার টাকা নিয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সব মেম্বারই জড়িত। সাংবাদিক ব্যাংকে আসছে শুইনা দুইজন মেম্বার চইলা গেছে। আমরা সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বললে মেম্বাররা আমাদের বাড়িতে যাবে, আমাদের ভাতার বই নিয়ে যাবে। এলাকায় গিয়ে আমাদেরকে অপদস্থ করবে। আমাদের নাম লিখেন না। আমরা এ ব্যাপারে আর কার কাছে কমু। আল্লাহর কাছে কমু।’
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক ষোলঘর শাখার ব্যবস্থাপকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাতৃদুগ্ধ ভাতার এক বছরের ৯ হাজার ৬শ’ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য গ্রাহকের সেবা নিতে যাতে বিঘœ না হয় সেজন্যে আমাদের সিকিউরিটি দিয়ে সারিবদ্ধ করে এ সেবা দিচ্ছি। গতকাল (আজ) মৈশাদী ইউনিয়নের ৭১ জনসহ মোট ১শ’ জনকে এ ভাতা দেয়া হয়। ‘ভাতা নিতে আসা মায়েদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়েছে কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে এ টাকা নিতে কোনো অতিরিক্ত টাকা দেয়া লাগে না। তবে মেম্বাররা টাকা নিচ্ছে জানতে পেরে ব্যাংকের কর্মকর্তারা তৎপর হয়ে উঠেন।
এ বিষয়ে মৈশাদী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মানিকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমি গত শনিবার ভাতাভোগী প্রত্যেক সদস্যকে আমার অফিসে এনে তাদের সাথে মিটিং করেছি, তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেছি। তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি এই ভাতার কার্ডসহ যাবতীয় সকল কাজে তাদের নিজস্ব কোনো খরচ নেই। কেউ যদি কোনো টাকা দাবি করে, কাউকে কোনো টাকা দিবেন না। তিনি আরও জানান, তিনি ক’জন সাংবাদিকের কাছ থেকে মেম্বাররা টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ শুনেছেন। কিন্তু কোনো ভাতাভোগী তার কাছে ফোন করেননি বা সরাসরি তিনি শুনেননি। তারপরেও যেই সকল ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের সাথে আলাপ করেছি, তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছি। তারা আমাকে বলেছে, আমরা আজকে ব্যাংকের আশেপাশেও যাইনি। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমরা টাকা নিয়েছি, তাহলে সকল শাস্তি মাথা পেতে নেবো।