‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ সাক্ষাৎকার
চাঁদপুরে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি শিক্ষামন্ত্রী


চাঁদপুরের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ শীর্ষক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। এখানে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররাও অংশ নেয়। খুদে এ শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব বেশ আন্তরিকতার সাথে দেন এবং শিক্ষার্থীরাও তা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শ্রবণ করে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ছিলো শিক্ষামন্ত্রীর গর্বিত পিতা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদকে নিয়ে।
‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানে জেলা শিক্ষা অফিস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা ও হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির বাছাইকৃত কিছু শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির কাছে হাসান আলী স্কুলের এক ছাত্র জানতে চায়- ‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনার বাবা একজন ভাষাসৈনিক ছিলেন। একজন ভাষা সৈনিকের কন্যা হিসেবে আপনার অনুভূতি কী? জবাবে ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমরা জানি, মা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি এ তিনটি আমাদের গর্বের। আমাদের মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। অনেকে প্রচ-ভাবে অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন, কারাবরণ করেছেন। সেই ভাষাবীরদের একজনই শুধু নন, একজন বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন আমার বাবা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ। যিনি ভাষা আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হিসেবে অবদান রেখেছেন। তাঁর সন্তান হিসেবে অবশ্যই আমি গর্ব অনুভব করি। আজকে সবচেয়ে বড় গর্ব বোধ হয় আমার, আমাদের বাবারা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে রক্ত দিয়েছেন, জেল জুলুম অত্যাচার ভোগ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা আমাদের স্বাধীনতা, লালসবুজ পতাকা পেয়েছি। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বুকে ধারণ করতে পারলে আজকের ছেলে-মেয়েরা সোনার মানুষ হতে পারবে। সেই সাথে সোনার বাংলা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে জানবে এবং সারাদেশে একটি জাগরণ সৃষ্টি হবে।
ডাঃ দীপু মনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন আমলের ১৪ বছরই জেলে কাটিয়েছেন। তাঁর সন্তান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন। তাঁর পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁরা দুই বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। আজকের নতুন প্রজন্মকে আমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে, জানাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুন্দর সোনার বাংলাদেশ কেবল এগিয়ে যাবে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে। এ দেশ হবে উন্নত, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যেখানে দারিদ্রতা, অন্যায় অবিচার থাকবে না। সেখানে সব মানুষ এবং আজকের শিক্ষার্থীরা পরিপূর্ণ বিকাশ হবার সুযোগ পাবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার একটি বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই।
সাক্ষাৎকারে আরো কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজনকে প্রশ্ন করেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ের ঘটনা জানতে চান। সে মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার মহসীন পাঠান। তাঁরা তাঁদের যুদ্ধকালীন একটি একটি ঘটনার কথা সংক্ষেপে তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, জেলা শিক্ষা অফিসার সফিউদ্দিন, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পপাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারীসহ অন্যরা এবং বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা নেছার ঐশী ও সাওছানা জাহান অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। মেন্টরের দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষক সরকার মোঃ সেলিম ও শরীফ হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে ৭ম শ্রেণির ছাত্র অনিক ও গীতা পাঠ করে ছাত্রী রাজ নন্দিনী সরকার।