• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজী মোহাম্মদ কাউছ মিয়ার আজ ৮৯তম জন্মদিন

প্রকাশ:  ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৩:১৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও প্রখ্যাত সমাজসেবক চাঁদপুরের কৃতী সন্তান হাজী মোহাম্মদ কাউছ মিয়ার আজ ২৬ আগস্ট সোমবার ৮৯তম জন্মদিন। ১৯৩১ সালের এইদিনে তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ^র ইউনিয়নে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বয়স আটাশি পার হলেও এখনো তিনি প্রাণবন্ত।
    কাউছ মিয়া মনে করেন, মানুষ যদি শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ থাকে, সেটি আল্লাহর রহমত। আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ সুস্থ থাকতে পারে না। এখনো প্রতিদিন তিনি ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেন। ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা ৬৯ বছর এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন সিআইপি মর্যাদার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বাধিক অ্যাওয়ার্ড। তিনি দেশের রাজস্ব খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সমগ্র বাংলাদেশে ৭ বার প্রথম স্থানসহ সর্বোচ্চ আয়কর দাতা হিসেবে টানা ১৪ বার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর এই ধারাবাহিক সাফল্য দেখে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তাঁকে সম্মানজনক আরেকটি ক্রেস্ট প্রদান করেন। এছাড়া সারাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের আয়কর প্রদানকারী পরিবারের কর বাহাদুর পরিবার এর খেতাবও পেয়েছেন হাজী মোহাম্মদ কাউছ মিয়ার পরিবার। ১৯৫৮ সাল থেকে আজ অবধি তিনি নিয়মিত রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে ট্যাক্স প্রদান করে আসছেন। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৭ সালে রাষ্ট্রীয় অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তির বিরল রেকর্ডের অধিকারী মোহাম্মদ কাউছ মিয়া।
    হাজী মোহাম্মদ কাউছ মিয়া ৮৯তম জন্মদিনে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করেন এবং সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
    প্রবীণ এই মানবসেবকের শুভ জন্মদিনে তাঁকে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে নিরন্তন ভালোবাসা এবং ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
    তিনি সততা এবং দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি কর্মজীবনে সফল ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি জীবনে মানবসেবায় এ যাবত বহু  সম্মাননা পেয়েছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো তিনি মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছেন। অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকায় তাদের মন থেকে তিনি যে দোয়া পেয়েছেন এটিই তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
    উইলিয়াম ল্যাঙলেট বলেছেন, যেখানে পরিশ্রম নেই, সেখানে সাফল্য নেই। সাফল্যের মূল চাবিকাঠিই
হলো পরিশ্রম, পরিকল্পনা, কাজ এবং সততা। বাংলাদেশের একজন সফল ব্যবসায়ী ও বরেণ্য খ্যাতিমান ব্যক্তি, সমাজসেবক হাজী মোঃ কাউছ মিয়া। যিনি তাঁর কর্মজীবনে এবং সমাজসেবায় আপন আলোয় দেশের একজন আলোকিত মানুষ তথা সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। শুধুমাত্র একজন সফল কর্মবীর হিসেবেই নয়, অসহায়-গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি দানবীর হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। একটি আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে এই মানুষটি গড়ে তুলেছেন তারাবুনিয়ায় বাবার নামে আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ডরোডে মায়ের নামে ফাতেমা খাতুন মাদ্রাসা। এছাড়া আল-আমিন স্কুলের পাশে ও গুয়াখেলা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন বোগদাদীয়া জামে মসজিদ ও মদিনা জামে মসজিদ। বর্তমানে এই দুটি মসজিদের তিনি মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করে আসছেন বহুকাল ধরে। পবিত্র কোরানে উল্লেখ আছে  ‘যারা তাদের সম্পদ দিন-রাত প্রকাশ্যে, গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে রাখা আছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো আফসোস করবে না। [আল-বাক্বারাহ ২৭৪]।
    তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বাঙালির প্রাণ বাঁচিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার পরিবারের অনেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশও নিয়েছেন। তাঁর নানা মৌলভী আবদুস সালাম জমিদার ছিলেন। জমিদার নানা মৌলভী আব্দুস সালাম সাহেবের চাঁদপুরের বাড়িতে বেড়ে ওঠা তার। ১৯৫০ সালে মায়ের কাছ থেকে মাত্র আড়াই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম জীবনে চাঁদপুরের পুরাণবাজারে একটি স্টেশনারী দোকান ছিলো তাঁর। সেখান থেকে গড়ে তুলেন ৫/৬টি দোকান। তাঁর মা বলেছিলেন, ‘ন্যায় পথে থেকে ব্যবসা করবে, আল্লাহ তোকে অনেক ধন-সম্পদ দিবে।’ মায়ের কথা অনুসরণ করে সারাজীবন সৎভাবে ব্যবসা করছেন তিনি। হাজী কাউছ মিয়া মনে করেন, ‘সৎভাবে ব্যবসা করেও ভালো ব্যবসা করা যায়। মানুষের অন্তরটাই আসল। অন্তর (দিল) পরিষ্কার থাকলে ভালো চিন্তা আসবেই।’ ১৯৫০ সালে তিনি ব্যবসা শুরু করে ১৯৫৮ সাল থেকে এ যাবত ট্যাক্স প্রদান করে আসছেন। তিনি মনে করেন সৎভাবে ব্যবসা করি, মন খুলে কর দেই। ব্যবসায় জীবনে তিনি ব্যাংক থেকে কখনো টাকা নেননি এবং কোনো খাদ্যপণ্য মজুদ করে ব্যবসা করেননি। বরং ব্যাংকই তাঁর টাকা খাটিয়ে ব্যবসা করে। এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি সমগ্র বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত ও সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেককে কর দেয়া উচিৎ। কারণ এটি রাষ্ট্রের হক। সকল ব্যবসায়ীর সময়মত কর দেয়া উচিত। এই নশ্বর পৃথিবীতে মৃত্যুর চেয়ে অনিবার্য সত্য আর কিছু নেই। জন্ম নিলে প্রতিটা মানুষকে একদিন মুত্যুর স্বাদ ভোগ করতেই হবে। এটাই বিধির বিধান। তবে ব্যক্তিবিশেষই এই মৃত্যুকে জয় করে মরেও বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। এই বেঁচে থাকার একমাত্র উপলক্ষ অথবা মাধ্যম হলো ব্যক্তির কর্ম। একজন মানুষ যেমন ভালো কাজের জন্য নন্দিত হয়ে বেঁচে থাকেন, তেমনি খারাপ কাজের জন্যেও নিন্দিত হন। ব্যক্তি জীবনকে সুন্দর, উদার ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ভালো কাজ অপরিহার্য। দেশের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক এলাকা ও নদীবন্দর চাঁদপুরের কৃতী সন্তান হাজী মোঃ কাউছ মিয়া তার প্রশংসিত কর্মময় জীবনের জন্য এই জেলার ধর্ম-বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের হৃদয়ে বিশেষ সম্মানের জায়গা দখল করে আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। বিশেষ করে বন্যা-দুর্গত মানুষের মুখে খাবার পৌঁছে দেয়া ছিলো তার মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত। শুধু বন্যা নয়, দেশের যে কোনো প্রান্তেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমি ধস, নদী ভাঙন ও বন্যা হয়েছে, সেখানেই তিনি ত্রাণ সাহায্য পাঠিয়েছেন।
    হাজী মোঃ কাউছ মিয়া বলেন, সব কথার শেষ কথা হলো, পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহ-ই হলো আমার মালিক। আমি তাঁর বান্দা। পৃথিবীতে আমরা আল্লার ইবাদত করতে এসেছি। তাঁর হুকুম পালন করতে এসেছি। আমরা কেউ এখানে চিরদিন থাকতে পারবো না। আল্লাহ ডাক দিলেই আমাদের চলে যেতে হবে। সবশেষে হাজী মোঃ কাউছ মিয়া বলেন, ‘মরণ আমায় ডাক দিয়েছে মরতে হবে ভাই, পরকালে দেখা হবে, এখন চলে যাই।’