• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ভাঙ্গন স্থানে হাজারো মানুষের উৎকণ্ঠা

প্রকাশ:  ০৫ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 ‘আগুনে পুড়লে ভিটেমাটিটা অন্তত থাকে, কিন্তু নদী ভাঙলে কিছুই থাকে না’। এ ভয় এবং আতঙ্ক এখন তাড়া করে ফিরছে পুরাণবাজারবাসীকে। বিশেষ করে হরিসভা ও রণাগোয়াল এলাকার মানুষগুলো এখন আতঙ্কিত এবং উৎকণ্ঠিত কখন যে তাদের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারা দু’টি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। কখন রাক্ষুসী মেঘনা হানা দিয়ে তাদের ভিটেমাটি নিয়ে যায় এ ভয়ে জেগে থেকে রাত কাটিয়ে দিয়েছে নদী পাড়ের এই মানুষগুলো। আবার অনেকে ভাঙ্গনের ভয়ে ঘরের মালামালসহ আসবাবপত্র সব সরিয়ে নিয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো এ দৃশ্য। এ রাত থেকেই হরিসভা এলাকায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন রূপ নেয়।
চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার রণাগোয়াল এলাকায় শনিবার দুপুরে হঠাৎ ব্লক বাঁধে ফাঁটল দেখা দেয়। এ ফাটল ক্রমশ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর হরিসভা মন্দিরের সামনে বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়। রাত ৮টার পর হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের প্রধান গেইটের সামনে শহর রক্ষা বাঁধের বেশ কিছু অংশ হঠাৎ ধসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে মরণ সাহা বাড়ির ৫টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় পুরো হরিসভা, রণাগোয়াল ও পুরান ফায়ার সার্ভিস এলাকায় ভাঙ্গন আতঙ্ক। শত শত নারী পুরুষ রাস্তায় নেমে আসে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণসহ কর্মীরাও চলে আসেন ঘটনাস্থলে। এছাড়া বিকেল থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে ছিলেন। রাত যত বাড়তে থাকে, ভাঙ্গনের পরিধিও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
রাত সোয়া ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ করুণ দৃশ্য। হরিসভা এলাকার দিকে যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য চোখে পড়ল, যা খুবই মর্মান্তিক এবং বেদনার্ত। যুদ্ধ লেগে গেলে মানুষ যেমন জীবন বাঁচানোর জন্যে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সহায় সম্বল যা কিছু সম্ভব তা নিয়েই রওনা দেয় শরণার্থীর মতো আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে, ঠিক সে অবস্থা দেখা গেলো শনিবার রাতে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে দেখা গেলো যে, নদীর কাছাকাছি অনেকেই ঘরের আসবাবপত্র ভ্যানগাড়ি, পিকআপ, রিক্সা ও অটোরিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে হাতে হাতে করে কাছাকাছি কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। রাত ২টার সময়ও একটি ঘর বিকট আওয়াজ করে নদীতে তলিয়ে যেতে চাক্ষুষ দেখা গেছে।
এদিকে শত শত নারী পুরুষ তখনও রাস্তায় ছিলো। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা উলুধ্বনি দিয়ে তাদের ধর্মীয় মতে প্রার্থনা করতে লাগল। সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। অনেকের চোখ অশ্রুসিক্ত। পুরো এলাকার হাজারো মানুষ রাতভর জেগে ছিল কখন তাদের ভিটেমাটি তলিয়ে যায় নদীতে এ ভয়ে।
এদিকে রাত আড়াইটা পর্যন্তও ঘটনাস্থলে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। তিনি রাতে ঘটনা শোনার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবিরও ঘটনাস্থলে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। তাঁদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য কর্মকর্তাগণও ছিলেন। এছাড়া প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী, হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝি, চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, চেম্বারের পরিচালক গোপাল সাহা, লোকনাথ মন্দির ও আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ রোটাঃ রিপন সাহাকেও রাত আড়াইটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।