• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

পুরাণবাজার শহর রক্ষাবাঁধে ভাঙ্গন অব্যাহত ॥

প্রকাশ:  ০৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার শহর রক্ষাবাঁধে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন হরিসভা রাস্তার সাথে এসে মিশেছে মেঘনা নদী। তাই এখন পুরো মন্দির কমপ্লেক্সটিই হুমকির মুখে। এই ভাঙ্গনে ছয়টি বসতঘর ও তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সাথে প্রায় ২শ’ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। গত ৩ আগস্ট শনিবার রাত ৮টার দিকে হরিসভা এলাকার শহর রক্ষা বাঁধে আকস্মিক এ ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তলিয়ে যায় ক’টি বসতঘর। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকার মানুষজন। ভাঙ্গনের সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিগণ। তারা ভাঙ্গন কবলিত মানুষকে সান্ত¡না দেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে ধীরে ধীরে হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের রাস্তার পশ্চিম দিকে থাকা পৌরসভার বিদ্যুতের খুঁটিসহ গুপীনাথ সাহা, আদিনাথ সাহা, শম্ভুনাথ মজুমদার, ধ্রুব সাহা, দীপক দে ও বিমল দের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। একই সাথে বিলীন হয়ে যায় মানিক সাহা, সঞ্চয় চক্রবর্তী ও সুশান্ত মজুমদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ সকল বাড়ি-ঘরের পাশে থাকা বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নিরাপদ বাসস্থানের সন্ধানে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাতের অন্ধকারেই তারা ঘরে থাকা আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে থাকেন। অনেকেই সহায়-সম্বল বাসস্থান হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ভাঙ্গন পরিস্থিতি দেখতে হাজারো মানুষ জড়ো হয় ভাঙ্গনকবলিত স্থানে। এ সকল মানুষদের শান্ত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু ভাঙ্গনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন ভাঙ্গন কবলিত মানুষজন। রাত প্রায় ১২টার সময় শম্ভুক গতিতে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়। জানা যায়, রাতব্যাপী বালু ভর্তি মাত্র ৩শ’ জিও ব্যাগ ফেলা হয় ভাঙ্গন কবলিত স্থানে। এলাকাবাসীর সারারাত কাটে ভাঙ্গন আতঙ্কে। এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স। মন্দিরের গেইট বরাবর মূল সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ সড়কটিসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ি রক্ষায় প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় ভাঙ্গন কবলিত স্থান পরিদর্শনে ছুটে আসেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি ভাঙ্গনকবলিত স্থানসহ মন্দির এলাকা ঘুরে দেখেন এবং ভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি এলাকাবাসীকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন ভাঙ্গন প্রতিরোধে যা যা করণীয় আমি তাই করবো। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শওকত ওসমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জামাল হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর নাহার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, এনএসআই কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল হক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ রফিক উল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রাহয়ান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেঃ আশ্রাফুজ্জামান, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, পৌর কাউন্সিলর মোহম্মদ আলী মাঝিসহ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ভাঙ্গন কবলিত স্থান পরিদর্শনসহ ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম, বিপিএম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী, শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাধা গোবিন্দ ঘোপ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ও ব্লক ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা তদারকি করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সবসময়ই ভাঙ্গনের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও তারা আমাদের কথার কোনো মূল্যায়ন করেননি। তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করেছেন। তারা যদি আন্তরিক হতেন তাহলে হয়তো আমাদের বাপ-দাদার ভিটা বাড়ি হারাতে হতো না।

এলাকাবাসী গত রমজান থেকে এ পর্যন্ত ভাঙ্গন প্রতিরোধে ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙ্গনকবলিত স্থানে ৫৩ হাজার ৩৬০ বস্তা বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলার ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেন। বর্তমানে ভাঙ্গন কবলিত স্থানে প্রায় ৪০ হতে ৫০ ফুট গভীরতা দেখা যায়। কোনো কোনো স্থানে এ গভীরতা কম-বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে হরিসভা এলাকার শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় ৫শ’ মিটার এলাকা ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। এখনই যদি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হয় তাহলে ঐতিহ্যবাহী হরিসভা এলাকা বিলীন হয়ে যাবে নদী গর্ভে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে জেলার হাইমচর এলাকায় বড় ধরনের প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে বড় ধরনের পরিকল্পনা বা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে জানা যায়।