• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে ৩শ’কোটি টাকার প্রকল্পের শহররক্ষা বাঁধে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন

প্রকাশ:  ০৪ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুরে মেঘনা নদীর শহর রক্ষাবাঁধের ব্লক ধসে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনস্থলে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের ৩শ’কোটি টাকার প্রকল্পের প্রায় ৩শ’মিটার এলাকার শহর রক্ষা বাধেঁর পুরানবাজার অংশে হরিসভা এলাকার সিসি ব্লকসহ ঐ এলাকার ১৫টি বসতঘর নদীগর্ভে  রাতের আধারে বিলীন হয়ে গেছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেছে।

রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকার সেমি পাকা ও টিনের ১৫টি বসতঘর ভেঙে নদী গর্ভে বিলিন হয়েগেছে। হুমকির মুখে রয়েছে হরিসভা এলাকার ৪টি মন্দির ও চলাচলের সড়ক। হুমকির মুখে থাকা বহু বসত ঘর ভেঙে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (৩ আগষ্ট) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ভাঙন শুরু হয়। রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘটনাস্থলে বালি ভর্তি ৫শ’ জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ভাঙনের শিকার পরিবার গুলো হচ্ছে-হরিসভা এলাকার গুপিনাথ সাহা, আদিনাথ সাহা, সম্ভুনাথ দে, সুশান্ত দে, মানিক সাহা, সঞ্জয় চক্রবর্তী, বিমল দে, দ্বীপক দে, ধ্রুবরাজ সাহা, সুনীল দে, শ্যামল দে, ওয়াদে আলী শেখ, অঞ্জু শেখ, আমজাদ আলী মুন্সি ও কার্তিক সাহা।

চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পরেই আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। গত বছরও একই স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি রক্ষায় স্পেশাল বরাদ্দ দেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন না করায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ভাঙন অব্যাহত থাকলে আরো বসতিসহ হরিসভা, কালি, স্কন ও লোকনাথ মন্দির মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
ত্রিনদীর প্রবল পানি প্রবাহের সাথে ঘূর্ণিস্রোত নদীর উত্তাল রুদ্ররূপ এখন ভয়ঙ্কর অবস্থা ধারন করেছে। চট্টগ্রাম-দক্ষিণাঞ্চল, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য রুটের সকল নৌযান চাঁদপুর নদী এলাকা অতিক্রমকালে পুরানবাজার শহর রক্ষাবাঁধের খুব কাছ দিয়ে চলাচল করছে। এতে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে অনুমান হচ্ছে, চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের বড় স্টেশন মোলহেড, পুরাণবাজার ঠোঁটা, হরিসভা ও রনাগোয়াল পর্যন্ত পয়েন্টে নদীর ব্যাপক গভীরতা রয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, পানির প্রবল চাপ ও ঘূর্ণিস্রোতে শহর রক্ষাবাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে তলদেশে বড় আকারে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। পুরাণবাজার হরিসভা পয়েন্টসহ চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের বিভিন্নস্থান দিয়ে আরো ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্ষার পানি নামার সময় ভয়াবহ ভাঙ্গনের আশঙ্কা আরো রয়েছে।
এদিকে ভাঙ্গনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান,পুলিশ সুপার মো: জিহাদুল কবির বিপিএম.পিপিএম, পাউবো চাঁদপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবুল, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী, কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝিসহ অন্যরা ভাঙ্গন স্থান পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওই স্থানটি রক্ষায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেন। নদীভাঙ্গন বিষয়টি স্থানীয় এমপি,মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা:দীপু মনি, পৌর মেয়রসহ নেতৃবৃন্দকেও জানানো হয়েছে।চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ৫শ’ জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, গত কয়েক বছরই একই স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। পুরানবাজার এলাকার শহররক্ষা বাধেঁর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরাণ বাজার এলাকার বাকী অংশ ভাল থাকলেও প্রায় ৩শ’ মিটার এলাকায় প্রতিবছর সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাৎক্ষনিক জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে ব্লক পেলে স্থায়ী বাঁধ দেয়া হবে।

ভাঙ্গনস্থানের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক  পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরানবাজার ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর শহীদ হোসেনসহ ফাঁড়ির পুলিশ টহলে রয়েছে। এ ছাড়া মানুষের যানমাল রক্ষায় চাঁদপুর উত্তর ফাঁয়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক এর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের ঘটনাস্থলে প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে।