১৬ বছর পর ভোট দিবে ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের জনগণ


রাত পোহালেই ২৫ জুলাই দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট। ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান পদে ভোটদানের জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুণছে ১৭ হাজার ৬৩০ ভোটার। ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে তীব্র আশার পাশাপাশি আতঙ্কও বিরাজ করছে। ইতিপূর্বে হওয়া নির্বাচনগুলোর কারণে তাদের এ আতঙ্ক। সর্বশেষ ২০০৩ সালের উপ-নির্বাচনে সর্বশেষ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এ ইউনিয়নে। তারপর উচ্চ আদলতে রিটজনিত কারণে এতোবছর ভোট হয়নি। ১৬ বছর পূর্বে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুজনিত কারণে পদশূন্য হওয়ায় অবশেষে নির্বাচন হচ্ছে এখানে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। ৯টি মেম্বার পদে পুরুষ প্রার্থী রয়েছেন মোট ৪১ জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা মেম্বার পদে মহিলা প্রার্থী হয়েছে ৯ জন। ভোটার রয়েছে ১৭ হাজার ৬৩০ ভোট। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৮৯৬ জন। মহিলা ভোটার ৮ হাজার ৭৩৪ জন। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা রয়েছে ৯টি। মোট ৫২টি বুথের জন্য ১৬৩জন কর্মকর্তা ছাড়াও পর্যাপ্ত পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ এবং নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে প্রশাসন। এছাড়া র্যাব, বিজিবি এবং পুলিশের সমন্বয়ে চার স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। যারা সকলেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের সমর্থক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রয়েছে সাইফুল আলম সোহেল খান (নৌকা)। বাকি ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসেন রিপন (আনারস), আকবর পাটওয়ারী (চশমা), শফিকুর রহমান (মোটরসাইকেল) ও রেজাউল ইসলাম (টেলিফোন)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সোহেল খান (নৌকা) উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হিসেবে দীর্ঘ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলমগীর হোসেন রিপন (আনারস) সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। বাকি তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ কিংবা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী না হলেও এরা সরকার দলীয় সমর্থক বটে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে আনারসের। এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের লোকজন থাকার সাথে সাথে আনারসের পক্ষেও বিপুল কর্মী-সমর্থক রয়েছে। নেতা-কর্মীদের ধারণা, এই নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যকার বিভেদ কাজ করছে। যারা নৌকার পক্ষে রয়েছেন, তাদের প্রতিপক্ষরা রয়েছেন আনারসের দিকে।
এ ইউনিয়নে গিয়ে কথা হয় প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ জনগণের সাথে। বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির ভোটাদের দাবি, এ ইউনিয়নটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এখানে যদি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট হয় তাহলে যে প্রার্থী বিএনপির ভোটারদের ভোট নিতে পারেন তাহলে সেই প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত হবে।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোহেল খানের জয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলা থেকে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা ওই ইউনিয়নে গণসংযোগের পাশাপাশি নির্বাচনী সভা করে এখন ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
উক্ত ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নূর মোহাম্মদের ছেলে আলমগীর হোসেন রিপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার প্রয়াত বাবার আদর্শের স্মৃতিচারণ করে নির্বাচনী প্রতীক আনারসের জয় নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আকবর পাটওয়ারী তার নির্বাচনী প্রতীক চশমার জয় নিশ্চিত করতে ঘরে বসে ছিলেন না। বাকি স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী সফিকুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলামকে নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায় নি। তবে পুরুষ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থীরা দলবল নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে তাদের নির্বাচনী প্রচার অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রার্থীরা এখন অভ্যন্তরীণ প্রচারণা ও ভোটের চুলচেরা হিসাব-নিকেশ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভোটারই বলছে, ১৬ বছর পর ভোটারগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারবো তো? নাকি ক্ষমতার প্রভাবে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আবারো আরেকটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা হবে? এভাবে নানা প্রশ্ন উঠছে স্বয়ং প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ভোটারসহ বিভিন্ন মহল থেকে।