শাহরাস্তিতে খেলতে গিয়ে সাপের দংশনে এক শিশুর করুণ মৃত্যু


শাহরাস্তিতে বিষধর সাপের দংশনে সামির হোসেন (১০) নামে এক শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাছাল পাটোয়ারী বাড়ির মোঃ আমির হোসেনের ছোট ছেলে। সামির চেঙ্গাছাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে ঘরের পাশেই অন্য সহপাঠীদের সাথে খেলা করছিলো সামির। খেলার মাঝেই আনুমানিক সকাল ৯টার সময় তার ডান পায়ের গোড়ালিতে কিছু একটা কামড় দিয়েছে বলে টের পায়। কিন্তু আশপাশে সে কিছু দেখতে পায়নি বলে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে আবারও খেলায় মনোযোগী হয়ে পড়ে। এদিকে খেলায় খেলায় সময় অতিবাহিত হয় আর অপরদিকে তার পায়ের ব্যথাও বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। এভাবে পায়ের ব্যথা বাড়তে থাকলে বেলা সাড়ে ১০টার সময় সে তার মাকে বিষয়টা জানায়। পরে সন্দেহজনকভাবে পার্শ¦বর্তী বাড়ির এক ব্যক্তির নিকট গিয়ে সাপে কামড়ের বিষ নামিয়ে আনে তার মা। ভালো হয়ে যাবে ভেবে বিষয়টিকে আর বেশি গুরুত্ব দেয়নি তার পরিবার। এদিকে সময় যায় আর ছেলেটির শরীরে চেপে বসতে থাকে বিষের তীব্রতা। বিষের তীব্রতায় তার অবস্থার অবনতি হলে বিকেল ৪টায় হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাকে বাড়ি নিয়ে আসলে সর্প-দংশনে শিশু মৃত্যুর খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে একই উপজেলার নরিংপুর গ্রামের মাইজপাড়া ভূঁইয়া বাড়ির ইসমাইল হোসেন (৪০) নামে এক ওঝা (শাপের বিষ নামায় যে) ছুটে আসেন তার বাড়িতে। বহু চেষ্টার পর শিশুটিকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন ওই ওঝাও। পরে প্রায় রাত ১০টার সময় শিশুটি মারা গেছে বলে নিশ্চিত করে তিনিও স্থান ত্যাগ করেন।
এদিকে বেঁচে থাকার শেষ ভরসা যখন মিথ্যে হয়ে যায়, তখনই তার মা ও বোনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। দুই ভাই ও এক বোনের মাঝ থেকে হঠাৎ ছোট ভাইয়ের এ বিয়োগে আর্তচিৎকার করে কিছুক্ষণ পর পরই জ্ঞান হারাচ্ছিল তার বোন। শিশুটির লাশের পাশে বসে ‘বাবা তুই কি আর মা বলে ডাকবি না’ বলেই বুক ঝাপটিয়ে চিৎকার করছিলেন মা। খবর পেয়ে শিশুটিকে এক নজর দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসে হাজারও মানুষ।