গ্রামাঞ্চলে ট্রাক্টর চলছে বীরদর্পে
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়কে দায়ী করলেন জনগণ


ট্রাক্টর নামক যে যন্ত্রদানব রয়েছে, এটি সড়কে চলাচল অবৈধ হওয়ায় চাঁদপুরের প্রশাসন থেকে এটি সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত বহু আগে থেকে জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ফোরামের একাধিক সভায় নেয়া হলেও তা বিগত জেলা পুলিশ সুপার শামছুন্নাহারের আগে কেউ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। শামছুন্নাহার এ জেলায় পুলিশ সুপার পদে যোগদান করার পর তিনি এ বিষয়ে কঠোর হন। কিন্তু তারপরও শহরে এবং প্রধান সড়কে এটি চলাচল বন্ধ হলেও গ্রামাঞ্চলে চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। যার কারণে রাস্তার ক্ষতি এবং মানুষের জান মালের ক্ষতি হয়েই যাচ্ছে। যে ট্রাক্টরের বলি হলো সর্বশেষ গত শনিবার মহামায়া-ছোটসুন্দর সড়কে একজন সিএনজি স্কুটার যাত্রী। গুরুতর আহত আরো কয়েক জনের মধ্যে একজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এই দুর্ঘটনায় যারা বেঁচে আছেন তারা হয়ত স্বাভাবিক জীবনে আর কখনো ফিরে আসতে পারবেন না।
এদিকে ট্রাক্টর নামক অবৈধ এই যানবাহনটি গ্রামাঞ্চলে যে এখনো চলাচল করছে তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং এ বিষয়ে উদাসীনতার কারণেই চলাচল করছে বলে জনগণ জানান। গতকাল রোববার চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফোন করে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর ইউএনওকে লিখিতভাবে গ্রামের রাস্তায় ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করতে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও কেনো বন্ধ হচ্ছেনা তা আমাদের বুঝে আসছে না। কার স্বার্থে এবং কোন্ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই অবৈধ যানবাহনটি রাস্তায় চলছে ? এর ফলে গতকাল (শনিবার) আমার এক প্রাক্তন ছাত্রের প্রাণ গেলো। এই বয়োবৃদ্ধ সচেতন মানুষটি এর জন্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং এলাকার প্রভাবশালীদের দায়ী করলেন। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের জনগণও বলেছেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা যদি এ বিষয়ে আন্তরিক হন এবং কঠোর হন তাহলে অবশ্যই গ্রামে ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করা যাবে। দেখা গেছে যে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া থাকায় ভয়ে সাধারণ জনগণ কিছু বলতে পারছে না। ছোটসুন্দর বাজার এলাকায় দু’টি বালু মহাল রয়েছে। এ বালু বহন করা হচ্ছে ট্রাক্টর দিয়ে। যে ট্রাক্টরের আঘাতে গত শনিবার আবুল হাসানাত তপাদার (৫৫) নামে আলগী তপাদার বাড়ির একজন প্রাণ হারালেন। আরো তিনজন গুরুতর আহত হন।
এ বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমার সাথে। তিনি জানান, ট্রাক্টরের ব্যাপারে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। এখন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলাচল করলে সব জায়গায় তো প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলার লোকজন যাওয়া সম্ভব নয়। এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং সচেতন গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও তো দায়িত্ব আছে। তারাও তো এটি চলাচলে বাধা দিতে পারে। এ বিষয়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের কঠোর নির্দেশনা দিবেন বলে জানান।
শুধু চাঁদপুর সদর নয়, প্রত্যেক উপজেলায় গ্রামাঞ্চলে ট্রাক্টর চলাচল করছে এখন বিনা বাধায়। বিশেষ করে ইটভাটা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ট্রাক্টর চলাচল করে থাকে খুব বেশি। মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায় তো কখনো ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করাই যায়নি বলে জানান এ দুই উপজেলার জনগণ। প্রশাসনও এ দুই উপজেলায় এ ব্যাপারে কখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে জনগণ দাবি জানিয়েছে, তাঁরা কঠোর উদ্যোগ নিয়ে যেনো পুরো জেলায় ট্রাক্টর চলাচল শূন্যের কোটায় নিয়ে আসেন।