জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান
সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার মতো কোনো ইস্যু দেখতে চাই না


চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা গতকাল ১২মে রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সভাপ্রধানে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিলো বিগত সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা ও অনুমোদন, জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংঘটিত অপরাধ চিত্র এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা পর্যালোচনা ইত্যাদি। সভার শুরুতে বিগত সভার প্রতিবেদন তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
চলমান পবিত্র মাহে রমজান এবং আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে চাঁদপুর শহরসহ বিভিন্ন সড়ক যানজটমুক্ত রাখা, অবৈধ যানবাহন চলাচল রোধ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, নদীতে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন বন্ধসহ জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এইচএম গিয়াস উদ্দিন, চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ইকবাল প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, এনএসআই চাঁদপুর-এর ডিডি মোঃ ফারুক আহমেদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, চাঁদপুর চেম্বার অব কামার্সের সভাপতি আলহাজ¦ মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, সিনিয়র সহ-সভপাতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু তাহের খান, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তাজ বিল্লাহ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান শরীফ, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কমিটির অন্যান্য সদস্য।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, ইদানিং চাঁদপুরে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে। সেসব ঘটনা জাতীয় পর্যায়ে ওঠে আসছে। যা সরকার এবং প্রশাসনের জন্যে বিব্রতকর। লোকালে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন ঘটনাগুলো ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে শক্তভাবে দেখতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে শক্তভাবে দেখা দরকার। তা না হলে সার্বিকভাবে পুরো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদকে ঘটনাগুলোর মনিটরিং করতে হবে।
তিনি নিরাপদ সড়ক বিষয়ে বলেন, পুলিশের ২১ জন ট্রাফিক দিয়ে পুরো জেলার ২৬ লাখ মানুষের নিরাপদ যাতায়াত অসম্ভব। এখানে কাজ করতে হবে যে যেখানে যে দায়িত্বে আছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হতে সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যেমন ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র দুর্যোগ থেকে রক্ষায় কাজ করেছি, এভাবে প্রত্যেকে যার যার অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। নানাভাবে ননস্টপ এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। রোড এক্সিডেন্ট যেমন হচ্ছে, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। ইভটিজিং প্রবণতা কিছু কমে আসছে। তারপরও কিছু ঘটনা হচ্ছে। শিক্ষার্থীসহ সকল মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে এবং এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে উপজেলা প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার মতো এসব ইস্যু আমরা দেখতে চাই না। সরকারের মহা উন্নয়ন কর্মকা-ের মধ্যে কিছু দুষ্টক্ষত আমাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রতারিত এবং প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের সকল জনপ্রতিনিধিকে নানা কাজে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। সত্যিকারে আমরা সবাই শান্তির জন্যে এ দেশটাকে উন্নয়নের এবং সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্যে কাজ করতে হবে। সামনে আমাদের সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ভিশন বাস্তবায়ন আমাদের করতে হবে।