চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে সাঁড়াশি অভিযান


সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে, তবে প্রভাবশালীদের জন্যে দুই সপ্তাহ সময়, আর গরিবের দোকান তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥ চাঁদপুর শহর এবং হাইওয়ে রোডের পাশে ফুটপাত দখল করে কিংবা সরকারি খালি জায়গা দখল করে কোনো দোকানপাট গড়ে তুললে সেগুলো বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ করা হয়। এ ধরনের উচ্ছেদ অভিযান প্রশাসন থেকে চাঁদপুর শহরে বহুবার করা হয়েছে। গতকালও চাঁদপুর শহরের কোর্টস্টেশন এলাকায় সাঁড়াশি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। সে অভিযানে দেখা গেলো রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা অসহায় গরিব মানুষগুলোর টংয়ের মতো চায়ের দোকান, কলার দোকান, ফলের দোকান উচ্ছেদ করা হলো, অথচ সাথেই থাকা পাকা দোকানগুলোর গায়ে হাতও লাগায়নি প্রশাসন। উপরন্তু তাদেরকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে প্রশাসন প্রয়োজনীয় কাগজ দেখানোর জন্যে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-গরিবের টং দোকান তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করা হলো অথচ প্রভাবশালীদের পাকা স্থাপনার (দোকান) জন্যে দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হলো, এটা কি আইনের দৃষ্টিতে সমানভাবে দেখা হলো? তাই তো উচ্ছেদকালেই জনগণ প্রশ্ন তুলেছে-আইন কি তাহলে গরিবের জন্যই?
গতকাল সোমবার দুপুরে চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় রেললাইন লাগোয়া উত্তর পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত দোকানের মধ্যে ছিলো চায়ের দোকান, ফলের দোকান, কলার দোকান এমনকি মুচির (জুতা সেলাই কর্মী) দোকান। ছোট-বড় সবমিলিয়ে প্রায় ১০/১২টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহার, মাহবুবুর রহমান, চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া এবং পৌরসভার দুইজন কাউন্সিলরসহ উচ্ছেদ কাজে সহযোগিতার জন্যে পৌরসভার আরো ক’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা ছিলেন।
প্রশাসনের এ উচ্ছেদ অভিযানকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, এর ফলে এ জায়গাটি জঞ্জালমুক্ত হয়েছে, পরিষ্কার হয়েছে। শহরের প্রধানতম একটি জায়গায় এভাবে খুপড়িঘর, টং দোকান তুলে শহরের সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করা হয়। উচ্ছেদ করার পর পুরো খালি জায়গাটিতে কিছু একটা করা হলে এবং পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনে কিছু করা হলে তা অবশ্যই ভালো দেখাবে। এ লক্ষ্যে জনগণ অবশ্যই সাধুবাদ জানাবে।
কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ভিন্ন জায়গায়। তা হচ্ছে- কোর্টস্টেশন ঘুন্টি ঘরের পশ্চিম পাশে সব অবৈধ টং দোকান, খুপড়িঘর উচ্ছেদ করা হলেও সাথেই থাকা পাকা স্থায়ী স্থাপনা (দোকানগুলো, যা পুলিশ বক্সের পেছনে) অক্ষত ছিলো। অথচ সেগুলোরও কোনো বৈধতা নেই। সেজন্যে এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সেখানেই সাধারণ জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলেছে, আইন কি তাহলে গরিবের জন্য? উল্লেখ্য, রেলওয়ের ঘুন্টিঘর এবং পুলিশ বক্সের পেছনে তিনটি পাকা দোকান রয়েছে। যা স্থায়ী স্থাপনাই বলা যায়।
এ বিষয়ে এ প্রতিবেদক উচ্ছেদ অভিযানকালে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহারের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, ওই দোকানের মালিকরা কাগজপত্র দেখানোর জন্যে সময় নিয়েছে। কতদিন সময় দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৪ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। তখন এই প্রতিবেদক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বললেন, দুই সপ্তাহ সময়! এতোদিন! এটা কি তাদের কাগজপত্র তৈরি করার জন্যে সুযোগ করে দেয়া হলো না? গরিবের দোকান তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করলেন, অথচ প্রভাবশালীর স্থায়ী স্থাপনার জন্যে দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হলো। এটা কি আইনের দৃষ্টিভঙ্গি সমান হলো? আইন কি তাহলে গরিবের জন্য? এসব প্রশ্নের মুখে ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহার বললেন, বিষয়টা ঠিক এ রকম নয়। তারা বলেছে, তাদের কিছু কাগজপত্র আছে, আরো কিছু কাগজ ডিসি অফিসে আছে। ডিসি ইসমাইল স্যার থাকতে না কি তাদেরকে কী কাগজপত্র করে দিয়ে গেছেন, সেগুলো ডিসি অফিস থেকে তুলতে তারা ক’দিন সময় চেয়েছে, তাই ১৪ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এই তথ্যের আলোকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জেলা প্রশাসক জনাব ইসমাইল হোসেন চাঁদপুর থেকে চলে গেছেন প্রায় পাঁচ বছর হবে। তাঁর পরের ডিসি জনাব আব্দুস সবুর ম-লও বিদায় নিয়েছেন এক বছরের উপরে হয়। তাহলে এতো বছরেও ওইসব দোকানদারের কাগজপত্র এখনো ঠিক হয়নি-এটা কেমন যৌক্তিক কথা হতে পারে। শহরবাসীর দাবি, ওইসব পাকা স্থাপনার যদি বৈধ কোনো কাগজ না থাকে তাহলে সেখানে যেনো দ্রুত আইন প্রয়োগ হয়। সেগুলোও যেনো অনতিবিলম্বে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তখন প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং আইন যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি স্পষ্ট হবে।