পুরাণবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা ॥ ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও ভিন্ন বক্তব্য
চাঁদপুর জেলার বৃহৎ পাইকারী মোকাম পুরাণবাজারে গত ১৮ মার্চ সোমবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসী বেগমের নেতৃত্বে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের ওপর মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন পাইকারী দোকানে প্লাস্টিকের বস্তায় চিনি, ময়দা ও আটা পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর এ অপরাধে পাইকারী ব্যবসায়ী হাজী মান্নান এন্ড সন্সকে ১০ হাজার টাকা ও বাংলাদেশ এজেন্সীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ নিয়ে আটা ময়দা চিনি ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে-কোম্পানীগুলোই প্লাস্টিকের বস্তায় করে পণ্যসামগ্রী বাজারজাত করছে, আর আমরা সেগুলো আমদানী করছি। সেখানে অভিযান না চালিয়ে অর্থাৎ মূল জায়গায় প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার বন্ধ না করে মাঠ পর্যায়ে এসে আমাদের উপর খড়গ চালালে এটি আমাদের উপর অবিচার করা হয়। পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকের বস্তায় মালামাল আমদানী-রপ্তানী না করার পক্ষে আমরা মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু মূল জায়গায় হাত না দিয়ে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করায় তারা এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ বক্তব্য দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারের যে কোনো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে তা হতে হবে সর্বক্ষেত্রে কার্যকর। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ সকল সময়ই প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। চাঁদপুর আমদানী নির্ভর পাইকারী ব্যবসায়িক কেন্দ্র। এখানে বড় ধরনের কোনো মিল কারখানা নেই। চিনি, আটা ও ময়দা নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত এ সকল খাদ্য সামগ্রীর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিটি গ্রুপ, বসুন্দরা গ্রুপ ও ফ্রেস গ্রুপ হলো অন্যতম। এ সকল কোম্পানী সারাদেশে তাদের উৎপাদিত নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বাজারজাত করে থাকে প্লাস্টিকের বস্তায়। যা সারাদেশের ন্যায় আমরাও আমদানী করে থাকি। প্লাস্টিকের বস্তায় বাজারজাত করা খাদ্যসামগ্রী আমদানীর ফলে যদি আমাদেরকে জরিমানা করা হয়, তাহলে কোম্পানী কি আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে তাদের উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী প্লাস্টিকের বস্তায় বাজারজাত করা থেকে বিরত থাকবে? যদি তা না করা হয়, তাহলে আমাদেরকে এসকল খাদ্যসামগ্রী আমদানী বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। জরিমানার ভয়ে যদি আমরা এসব আমদানী বন্ধ করে দেই, তাহলে আমাদের ব্যবসা চলবে কী করে? আর চিনি আটা ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আমদানী যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বাজারে এর চাহিদা মিটাবে কে? ফলে আমদানী সঙ্কটের কারণে এসকল খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে বহুগুণ। কোম্পানীগুলো যদি পাটের বস্তায় মালামাল বাজারজাত করতো, তাহলে তো আমরা অবশ্যই পাটের বস্তার মালই আমদানী করতাম। তাই আগে কোম্পানীগুলোকে ঠিক করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাজারের মানিক মিয়া, শেখ হাবিবসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমরাতো মোকাম থেকে এসকল মালামাল আমদানী করে প্লাস্টিকের বস্তায় বাজারজাত করি না। মোকাম হতে যদি প্লাস্টিকের বস্তায় বাজারজাত না করা হতো এবং এসব মাল মার্কেটে ছাড়ার সময়ই যদি বাধা দেয়া হতো, তা হলেতো আমরা অপরাধীও হতাম না, আমাদেরকে জরিমানা গুণতেও হতো না।
মাননীয় জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের জোর দাবিÑতিনি যেনো ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করেন। যাতে আমাদেরকে এ ব্যাপারে জরিমানা না করা হয়। তারা এ ব্যাপারে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।