চাঁদপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ ও পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান
একজন মানুষ ততো বড় হতে পারে যতো বড় স্বপ্ন সে দেখতে পারে : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি


চাঁদপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ ও পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০১৯-এর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৬ মার্চ শনিবার চাঁদপুর শহরের সেরা এই তিন বিদ্যাপীঠের বার্ষিক এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১১টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ, বেলা সাড়ে ১২টায় চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে এবং বিকেল ৩টায় পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিজ নিজ কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন। চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ প্রফেসর কায়সার আহমেদ এবং পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন কলেজ গভর্নিংবডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলহাজ¦ মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, অনেক অর্জন আছে। কিন্তু আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। সেজন্যে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হবে। একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুনত্ব আনা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ আরো উন্নত হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তুকিছু কিছু শিক্ষক নীতি বিরুদ্ধ কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের নোট বই, গাইড বই লাগে না। কিন্তু অনেক শিক্ষক নোট বই, , গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন এবং জোর করে তাদের কোচিং করতে বাধ্য করছেন।
গড়ে সব কোচিং বন্ধ করে দেয়া বা কোনো কোচিং করা যাবে না এম কথা ঠিক নয়। সকল কোচিং খারাপ না। পিছিয়ে পড়া বা দুর্বল শিক্ষার্থীর জন্যে কোচিং থাকতে পারে। কিন্তু যখন কোনো শিক্ষক ক্লাসে ঠিকমতো না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করেন, নোট বই, গাইড বই কিনতে বাধ্য করেন, সেটিই হলো কোচিং বাণিজ্যি। যা নৈতিকতা বিরোধী। এসব বন্ধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশাসনের লোকদের সহযোগিতা লাগবে। গাইড বই থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রশাসনকে এ বিষয়টি দেখতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, ধূমপান মুক্ত ক্যাম্পাস, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস লেখা থাকে। মনে হয় ধূমপানের মতো বর্জনীয় এবং খারাপ বস্তুর সাথে রাজনীতিকে এক করে ফেলা হয়। তবে রাজনীতি খারাপ নয়। রাজনীতির নামে অপরাজনীতি খারাপ। আমি নিজে রাজনীতির ফসল এবং আজকের বাংলাদেশ রাজনীতিরই ফসল। রাজনীতি না থাকলে আমাদের ভাষাসহ অনেক অর্জন আসতো না। তবে রাজনীতি সবাই করবে না, কিন্তু সকলকে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। তাই শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বিমুখ করবেন না।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, এ ক্ষণজন্মা এদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি ধাপে ধাপে আমাদের এগিয়ে নিয়েছেন, যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করেছেন। ৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। যুদ্ধের সময় জাতির পিতা জেলে থাকলেও তাঁর সেই ডাকেই এদেশের মান্ষু স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে অনেক অগেই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হতো। আজকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর সঠিক নেতৃত্বে দেশের সার্বিক সেক্টরে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ ততবড় হতে পারে যতবড় স্বপ্ন সে দেখতে পারে। তাই স্বপ্ন দেখতেই হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, আর সেটি বাস্তবায়ন করেন। যার ফলশ্রুতিতে দেশে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হচ্ছে, মহাকাশে স্যাটেলাইট যাচ্ছে, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলি নদীতে ক্যানেল তৈরি হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ডাঃ দীপু মনি বলেন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হচ্ছে শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন মানুষের খেলোয়াড় মাঝে মনোভাবটি সৃষ্টি হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মনোভাব কাজে লাগবে। শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি তোমরা দেশপ্রেম ও নীতি নৈতিকতা শিখবে। নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। দেশের অগ্রযাত্রায় দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে তোমরা যার যার অবস্থান থেকে সামিল হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা মাদকমুক্ত থাকবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে নিজেদের দূরে রাখবে এবং কোনো ধরনের ইভটিজিংয়ে জড়িত হবে না, দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ব হবে।
তিনি আরও বলেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, আমার মা এই কলেজের ছাত্রী ছিলেন। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি উপমহাদেশের একজন মহান এবং আলোকিত মানুষ। তাই তোমরা এই কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য লালন এবং ধারণ করবে। আমি এই কলেজের উন্নয়নে সবসময় পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আর পুরাণবাজার কলেজের সাথে আমি নিজে জড়িত। এখানে শিক্ষার আর সৌন্দর্য্যরে অপার সম্মিলন গড়ে ওঠেছে। পিছিয়ে থাকা একটি বিদ্যাপীঠকে যে কীভাবে তুলে আনা হয়, তার অনন্য দৃষ্টান্ত পুরাণবাজার কলেজ। এর পেছনে অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের নিরলস পরিশ্রম এবং অভাবনীয় সৃজনশীল চিন্তা-চেতনার কথা তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। একই সাথে তিনি পুরাণবাজারে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করায় মরহুম আঃ করিম পাটওয়ারীসহ ব্যবসায়ীদের অবদানকে তিনি স্মরণ করেন এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এদিন জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এই তিন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য আয়োজন আর উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনসিসির ময়নামতি রেজিমেন্ট কমান্ডার লেঃ কর্নেল সালাহ উদ্দিন আল মুরাদ জী, জেলা আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ডেন্ট এএসএম আজিম উদ্দিন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোহর আলী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এম তারিক উল্লাহ, অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত, প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, এনএসআই উপ-পরিচালক এবিএম ফারুক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী, হাসান ইমাম বাদশা, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম নূরু, জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতাউর রহমান পারভেজ প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ মাসুদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, চাঁসক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য আলহাজ¦ মোস্তাক হায়দার চৌধুরী, ডাঃ এসএম সহিদ উল্লাহ, ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক রূপক রায়, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী।
এছাড়া রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণসহ আরো অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।