চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে খাবার পানির মারাত্মক সঙ্কট ॥ মহাদুর্ভোগে রোগীরা


চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলা, পাশর্^বর্তী জেলা শরীয়তপুর, সখিপুর, লক্ষ্মীপুর ও রামগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্যে নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছিলো ৫০ শয্যার হিসেবে। এতে রোগীদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়া ও চিকিৎসাসেবার মান ভালো না হওয়ার কারণে হাসপাতালটিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ সেলিম ২৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও রোগীরা চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তারপরও চাঁদপুরের আশপাশের জেলার রোগীদের চাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালটিতে যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে তা পাওয়ার পরও চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক। হাসপাতালটিতে বড় ধরনের যে সমস্যা তা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। খাবার পানি সঙ্কটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। সরকারি এ হাসপাতালের নিজস্ব ডিপের পানি থাকলেও অতিরিক্ত আয়রনে তা রোগীরা ব্যবহার করতে পারছেন না। তাই হাসপাতালের আঙ্গিনায় টিউবওয়েল থেকেই পানি সংগ্রহ করে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন রোগীরা। কিন্তু কিছুদিন ধরে সেটিও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মহাদুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্যে চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন চাঁদপুরবাসী।
হাসপাতাল সংলগ্ন দোকানী কামরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ কোনো খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই তাদের দোকানে গিয়ে পানি সংগ্রহ করেন। কেউ কেউ হাসপাতালের সামনে থাকা কালেক্টরেট জামে মসজিদের অজুখানা থেকে আয়রনযুক্ত পানি সংগ্রহ করেন। আবার অনেকে কোনো উপায় না পেয়ে পাশর্^বর্তী ডাকাতিয়া নদী কিংবা পৌর পাঠাগার থেকে খাবার পানি এনে প্রয়োজন মিটাচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী সালমা আক্তার, গনি মিয়া ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা খাওয়াতো দূরে থাক ব্যবহারের জন্যও উপযোগী নয়। পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এ পানি দিয়ে ধোয়া-মোছা করলে কাপড় ও অন্যান্য জিনিস বিবর্ণ হয়ে যায়। গোসল করলে শরীর ও চুল আঠা আঠা হয়ে যায় এবং পুরো শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ শফিউল আলম জানান, হাসপাতালের নিজস্ব ডিপের পানি ভাল না হওয়ায় দীর্ঘ বছর ধরে তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যদিও ইতঃপূর্বে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। মেয়র বলেছিলেন পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি হাসপাতালে সরবরাহ করবেন। তবে আমাদের বিকল্প টিউবওয়েলটির কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, অতিশীঘ্রই তা মেরামত করা হবে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ আনোয়ারুল আজিমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, হাসপাতালে পানি সঙ্কট নিয়ে রোগীদের সমস্যা হচ্ছে, তা আমরা জানতে পেরে পৌর কর্তৃপক্ষকে পানি সরবরাহ করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবগত করেছি। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই পানি সমস্যার সমাধান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ জেলার রোগী ছাড়াও এখানে আশপাশের জেলার রোগীর চাপ অনেক। সব মিলিয়ে এখানে আরো শয্যা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৌরসভার পানি সরবরাহ পেতে আমাদের লিখেছেন কি না সেটা জানা নেই। অফিসে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।