উপজেলা সদরের প্রধানতম সড়কে অন্তহীন দুর্ভোগ
দুই অপেক্ষার প্রহর গুনছে ফরিদগঞ্জ পৌরবাসী


দুই অপেক্ষার প্রহর গুনছে ফরিদগঞ্জ পৌরবাসী। উপজেলা সদরের প্রধানতম সড়কটির সংস্কার নিয়ে তাদের এই অপেক্ষা। টেন্ডারের কার্যাদেশ দেয়ার জন্যে নগর উন্নয়ন প্রকল্প-২ কর্তৃপক্ষের অনুমতির এক অপেক্ষা, আরেক অপেক্ষা কখন শুরু হবে সংস্কার কাজ। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পৌরবাসী। বর্ষাকালে কর্দমাক্ত সড়ক ও শুষ্ক মৌসুমে ধূলিঝড়ে আক্রান্ত তারা। এ সড়কে চলতে গিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত এক দশকের বেশি সময় ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রধানতম সড়ক টিএন্ডটি তথা ওনুআ চত্বর থেকে কালিরবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটি মাঝে মধ্যে নামেমাত্র সংস্কার করা হলেও সংস্কারের কয়েক মাসের মাথায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে। স্থানে স্থানে গর্ত ও কার্পেটিং ওঠে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে যান চলাচলে ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে হতো পৌরবাসী ও উপজেলা সদরে আসা লোকজনকে।
বর্তমান মেয়র মাহফুজুল হক ২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসে সড়কটিকে মোটা দাগে সংস্কারের জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান সড়কটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বাসস্ট্যান্ড লিংক রোড ও হাসপাতাল রোড নূতন করে করার টেন্ডার দেয়। কাজ পায় পৌর কাউন্সিলর খলিলুর রহমানের পরিবার। নানা গুঞ্জনের মধ্যে দিয়ে কাজ শুরু হলেও ৪০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর কাজ ছেড়ে দেয় ঠিকাদার। কাজের মান ও অযথা হস্তক্ষেপসহ নানা বিষয়ে ঠিকাদার ও পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে ঝামেলার কারণে সড়কটির কিছু অংশ কার্পেটিং ও কিছু অংশ ম্যাকাডম অবস্থায় পড়ে থাকে। ঠিকাদার বাকি কাজ না করার ঘোষণা দেয়। ফলে আবার শুরু হয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। বর্ষায় কর্দমাক্ত সড়ক যেমন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে সড়ক থেকে উঠা বালি বাতাসে ভাসার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।
এরই মধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ পূর্বের টেন্ডারের কার্যাদেশ বাতিল করে দেয়। এরপর এলজিইডির নগর উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় সড়কটি আওতাভুক্ত হয়। এ আর উচ্চ বিদ্যালয় গেইটের সামনে থেকে উপজেলা ভূমি অফিস পর্যন্ত ১৮ ফুট চওড়া আরসিসি ঢালাই, লিংকরোড থেকে বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল সড়ক ও বাজারের উত্তর গলির ড্রেন সংস্কারসহ ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাজারের উত্তর গলির সড়কটি সিসি ঢালাইয়ের জন্যে প্রকল্পভুক্ত হয়।
গত ২০১৮ সাল থেকে টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ধানুয়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল আউয়াল এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। ইতিমধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ এগিয়ে গেলেও নগর উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর কর্তৃপক্ষের কাছে টেন্ডারের কার্যাদেশ দেয়ার জন্যে অনুমতি চায় পৌর কর্তৃপক্ষ। এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দ্রুত কাজ শুরু করার কথা বলা হলেও কার্যাদেশ না আসা পর্যন্ত জনগণকে ভোগান্তির শেষ দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সড়কটির মেরামতবিহীন অংশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলা দুষ্কর। সুস্থ মানুষও ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। দুরাবস্থার কারণে ক্রেতারা ফরিদগঞ্জ বাজারমুখী না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ।
এ ব্যাপারে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, নগর উন্নয়ন প্রকল্প-২ কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার জন্যে অনুমতিপত্র পাঠিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবদি তার জবাব আসেনি। জবাব পেলেই কার্যাদেশ দেয়া হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাউন্সিলার আঃ মান্নান পরান জানান, দ্রুত কাজ শুরু করার আশা রয়েছে।
পৌর মেয়র মাহফুজুল হক বলেন, এই সড়কটি নিয়ে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমি এজন্যে দুঃখিত। কাজ শুরুর জন্যে আমি মৌখিকভাবে ঠিকাদারকে বলেছি। আশা করছি চলতি মাসেই কাজ শুরু হলে পৌরবাসীর দুঃখ লাঘব হবে।
এদিকে পৌরবাসী আর আশার বাণী ও অপেক্ষার প্রহর গুনতে রাজি নয়। মানসম্মত ও টেকসই কাজ দ্রুত শুরুর দাবি করেছেন তারা।