• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মেঘনা এক্সপ্রেস চলাচলের সময় গেইটম্যানের দায়িত্বে অবহেলা

অধিকাংশ সময় খোলা থাকে চাঁদপুর কোর্টস্টেশন রেলগেইট ॥ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা

প্রকাশ:  ১০ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রূটে চলাচলকারী ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেস আসা-যাওয়ার সময় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চাঁদপুর কোর্টস্টেশনের ব্যস্ততম রেলগেইট অধিকাংশ সময় খোলা থাকে। এ স্টেশনের দায়িত্বে থাকা গেইটম্যানের অবহেলার কারণে ট্রেন চলাচলের সময় প্রায় দিনই বন্ধ করা হয় না এ রেলগেইটটি। ফলে যে কোনো মুহূর্তেই বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
    স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যবৃন্দ জানান, মাসের মধ্যে ৮/১০ দিনই গেইটম্যানরা তাদের কর্মস্থলে থাকেন না। ফলে সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে কোর্টস্টেশন রেলগেইটটি। অন্যদিকে সকাল ৫টার পর মেঘনা এক্সপ্রেস চাঁদপুর থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় এ গেইটটি খোলা থাকে। অথচ ভোরেও এ গেইট দিয়ে চলাচল করে অনেক যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থেকে এ রূটে মেঘনা এক্সপ্রেস নিয়মিত যাতায়াত করছে। তাই যে কোনো দিন অসতর্কতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা যদি ট্রেন আসতে দেখে প্রায়ই গেইট বন্ধ না করতেন তবে এতদিনে কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতো।
    অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রেন আসার সময় রেলগেইট বন্ধ না করার কারণে মেঘনা এক্সপ্রেসের সাথে একটি মাইক্রোবাসের (চট্ট-১১-৪৯৪২) সংঘর্ষ থেকে অল্পের জন্যে বেঁচে গিয়েছিলেন ১৯ যাত্রী। চাঁদপুর পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সেদিন ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছিল যাত্রীরা।’ এ ঘটনার সময় গেইটম্যান মফিজুর রহমান মফিজকে স্টেশনের আশেপাশে দেখা যায়নি। তাকে না পেয়ে পরে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা কোর্টস্টেশন মাস্টার মোঃ শাহজাহান ও শফিকুর রহমানকে বিষয়টি অবগত করেন।
    ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমিনুল ইসলাম, নাইটগার্ড সেলিম গাজীসহ কমিউনিটি পুলিশ টহল সদস্য ভুট্টু জানান, ওইদিন মেঘনা এক্সপ্রেস চাঁদপুর কোর্টস্টেশন অতিক্রম করার সময় একটি মাইক্রোবাস রেলক্রসিং পার হওয়ার জন্যে আসে। এ সময় কোর্টস্টেশন এলাকার গেইটম্যান মফিজুর রহমান মফিজ কর্মস্থলে না থাকায় রেলক্রসিংয়ের ২ পাশের ২টি গেইট খোলা ছিল। ঘটনার সময় নাইটগার্ড সেলিম গাজী মেঘনা এক্সপ্রেস দেখে চিৎকার দিয়ে হাত উঠিয়ে মাইক্রোবাসটিকে থামান। নতুবা মেঘনা এক্সপ্রেস ও মাইক্রোবাসটির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। আর তা হলেই অকালে ঝরে যেত ১৯ প্রাণ। সেদিন গেইটম্যান মফিজুর রহমান জানান, অধিকাংশ সময় গেইটম্যান না থাকলে স্থানীয় দোকানদার, কমিউনিটি পুলিশ কিংবা এলাকাবাসী ট্রেন দেখে গেইট বন্ধ করে দেয়। তিনি দাবি করেন, এ ধরনের ভুল শুধু আমার একারই হয় না, সকলেই করে থাকে।
    অধিকাংশ দিন গেইট খোলার রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে গেইটম্যান মফিজুর রহমান মফিজ ওইদিনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে তার কর্র্তৃপক্ষকে না জানাতে এবং রিপোর্ট  না করার জন্যে এ প্রতিবেদককে  বলেন।
    এ ব্যাপারে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ ও গেইটম্যানদের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন, আমি এ ঘটনার বিষয়ে মোটেও অবগত নই। আপনাদের মাধ্যমে এখনই জানলাম। আমি ঘটনা সম্পর্কে জেনে দায়িত্বে অবহেলার সত্যতা পেলে গেইটম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
    উল্লেখ্য, চাঁদপুর শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রেলক্রসিং হচ্ছে কোর্টস্টেশন রেলক্রসিংটি। এখানে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা যেমন জনসাধারণের যাতায়াত থাকে, তেমনই যানবাহনও চলাচল করে। ২০১৮ সালে গেইটম্যান মফিজুর রহমান দায়িত্বে থাকাকালীন কয়েকবার এ ধরনের বড় দুঘর্টনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তখন মফিজুর রহমান আর দায়িত্বে অবহেলা করবেন না বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে দায়িত্বে থেকে যান।
    স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দাবি, গেইটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে যে কোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনায় হতে পারে প্রাণহানি। তাই খুব দ্রুত গেইটম্যানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কোর্টস্টেশন রেলগেইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান তারা।