ব্রিজের কাজ শেষ না হতেই ফাটল ॥ এলাকাবাসীর বিক্ষোভ


ব্রিজের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। সবেমাত্র ঢালাইর কাজ শেষ হয়েছে। এখনো সেন্টারিং খোলা হয়নি। অথচ এখনই ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থল হচ্ছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের মধ্য বাখরপুর গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী পুনরায় ব্রিজটি করার দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বরাবর অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ব্রিজটি নির্মাণে অনিয়মের কারণে গত শুক্রবার দুপুরে এলাকাবাসী ঠিকাদারের প্রতিনিধি সাহাবুদ্দিন ও চিকন আলীর সামনে বিক্ষোভ করেছে এবং উত্তেজনায় ফেটে পড়ে।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের মধ্য বাখরপুর গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রচেষ্টায় প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ হচ্ছে। মধ্য বাখরপুর এলাকার কাশেম খানের বাড়ির সামনে খালের উপর কাঠের পুল দিয়ে ১ ও ২নং ওয়ার্ডের মানুষ চলাচল করতো। সেই পুলটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৫ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এখানে পাকা ব্রিজটি নির্মাণ হচ্ছে। সে ব্রিজের কাজ চলতি অবস্থায় রয়েছে। গত এক সপ্তাহ পূর্বে এই ব্রিজের উপরের অংশ ও রেলিংসহ বিভিন্ন অংশে ঢালাই দেয়া হয়। দেখা গেছে যে, ঢালাইয়ের সেন্টারিং খোলার পূর্বেই ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারের দুর্নীতি ও কাজে ব্যাপক অনিয়মের কারণে এবং এ কাজটি তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তদারকি না করায় কাজের এই অবস্থা। এলাকাবাসী শুক্রবার দুপুরে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। খবর নিয়ে জানা যায়, সরকার দলীয় এক ঠিকাদার গত এক মাস পূর্বে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি সেখানে না গিয়ে তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোক দিয়ে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করান। অভিযোগ উঠেছে, কাজ তদারকি করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই রাতের বেলায় ব্রিজটির উপরের অংশে ঢালাই দেয়া হয়। তখন কাজে অনিয়ম হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা কাজটি ভালোভাবে করার জন্যে অনুরোধ জানান ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে। এতে করে এলাকাবাসীর সাথে ঠিকাদারের লোকজনের বাগ্বিত-া হয়। কাজটি তড়িঘড়ি করে শেষ করে চিকন আলীরা চলে যায়। তারপরই দেখা দেয় ফাটল। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, ব্রিজের ঢালাইয়ের সেন্টারিং না খুলতেই দুই পাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রিজ নির্মাণকালে সিলেকশন বালু দেয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন সাদা বালু দিয়ে কাজে অনিয়ম করেছে। এছাড়া সিমেন্টের পরিমাণ ঠিক মত দেয়া হয়নি। বর্তমানে রেলিংয়ের বিভিন্ন স্থানে আস্তর খুলে ও খসে পড়ছে।
এ ব্যাপারে ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মিজি জানান, ঠিকাদারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই নবনির্মিত এই ব্রিজটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। রড, সিমেন্ট ও বালুর পরিমাণ কম দেয়ার কারণে ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে। উপজেলার পিআইও রফিকুল ইসলাম কাজটি তদারকি না করার কারণে ঠিকাদারের লোকজন রাতের বেলায় ব্রিজে ঢালাই দিয়েছে। এ কারণে কাজ এত নিম্নমানের হয়েছে, যে কোনো সময় ব্রিজটি ধসে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলার পিআইও মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ব্রিজটি করা হচ্ছে। যদি কাজে অনিয়ম হয়, তা হলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সরজমিনে তদন্ত পূর্বক অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে এখনও ঠিকাদারকে বিল দেয়া হয়নি। অনিয়মের জন্যে সে বিল পাবে না।