• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলার ৭টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

বাছাইতে ৯৩ প্রার্থীর মধ্যে বাতিল ১১ ॥ এইচএম গিয়াসের পর এমএ কুদ্দুছও বিজয়ের পথে

প্রকাশ:  ০১ মার্চ ২০১৯, ০২:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য চাঁদপুর জেলার ৭টি উপজেলার প্রার্থীদের দাখিলকৃত মনোনয়ন যাচাই-বাছাই গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান এবং একই সময়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিনের কার্যালয়ে পৃথকভাবে এ বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। সাতটি উপজেলার ২৬ জন চেয়ারম্যান, ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ মোট ৯৩ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই রিটার্নিং অফিসারদ্বয় সম্পন্ন করেন। বাছাইতে পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ঋণখেলাপী, তথ্য গোপন, ভোটার আইডিকার্ডের নাম্বার ভুল এবং দাখিলকৃত ভোটার তালিকায় ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার কারণে ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে মতলব উত্তর উপজেলায় জাতীয় পার্টি থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী মোঃ সোহরাব হোসেন মিয়াজীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও তিনি পরক্ষণেই তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার বলেন, এটি অবশ্যই কার্যকর হবে, তবে যাচাই-বাছাই সময়ের পর। তাই বলা যাচ্ছে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এমএ কুদ্দুছ একক প্রার্থী হওয়ায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে। আর মতলব দক্ষিণেও এএইচএম গিয়াসউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে।  
চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ জন চেয়ারম্যান, ৪ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তার সপক্ষে দাখিলকৃত আড়াইশ’ ভোটার তালিকা থেকে ৫ জনের তদন্ত করতে গিয়ে ১ জনকে পাওয়া যায়নি। তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। তাই তার মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি হলেন মোঃ জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া। বাছাইতে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। তারা হলেন : আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ নূরুল ইসলাম (নাজিম) দেওয়ান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান (কালু) ভূঁইয়া (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী), কাজী মোঃ ইব্রাহিম জুয়েল (বিএনপি) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডঃ মহসিন খান। বাছাইয়ে বৈধ পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন : মোঃ আইয়ুব আলী বেপারী, মোঃ হারুনুর রশিদ হাওলাদার ও মোঃ নূরুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদা সুলতানা, শিপ্রা দাস ও আয়েশা রহমান।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। আর ৯ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ দুজন হচ্ছেন মোঃ জাকির হোসেন ও মোঃ নাছির উদ্দিন। এ দুজনও ভোটার তালিকায় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। অপরদিকে ৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহিদুল ইসলাম রোমান, স্বতন্ত্র মোঃ তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী), এনপিপির আব্দুল গণি, বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার ও যুবলীগ নেতা হাজী সফিকুর রহমানের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন : আবু সুফিয়ান, ওয়াহেদুর রহমান, তছলিম আহমেদ, এনামুল হক পাটওয়ারী, এমরান হোসেন, কামরুজ্জামান পাটওয়ারী ও পাভেল হোসেন পাটওয়ারীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোসাঃ সেলিনা আক্তার, মাজুদা বেগম, রিনা নাসরিন, হালিমা বেগম, রেবেকা সুলতানা ও রেহেনা বেগমের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদে ২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এমএ কুদ্দুছ ও জাতীয় পার্টির সোহরাব হোসেন মিয়াজী। অবশ্য সোহরাব হোসেন মিয়াজী পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। ৫ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্য থেকে ঋণখেলাপীর দায়ে ২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে মোতাহার হোসেন খানের ঢাকাস্থ সেনপাড়া অগ্রণী ব্যাংকে ঋণখেলাপী এবং জামাল হোসেনের ঢাকা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ঋণখেলাপী থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার তাদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছেন। অপর প্রার্থীরা হলেন : মোঃ আলাউদ্দিন সরকার, গিয়াস উদ্দিন  চৌধুরী ও মোঃ সেলিম মিয়া। এঁদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পারভিন আক্তার নামে ওই প্রার্থীর দাখিলকৃত ভোটার তালিকায় গড়মিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন : বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান নিলুফা আক্তার, তাহমিনা সুলতানা, শাহীনা আক্তার ও পারভীন কবির। এদিকে এ উপজেলায় জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী মোঃ সোহরাব হোসেন মিয়াজীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও পরক্ষণেই তিনি তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেন। এতে করে মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এমএ কুদ্দুছ এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আর কোনো মনোনয়ন জমা পড়েনি। তাই এএইচএম গিয়াস উদ্দিনও বিজয়ের পথে। ৬ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ঋণখেলাপীর দায়ে মোস্তফা কামাল রনির মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা ওছমানী নগরে ন্যাশনাল ব্যাংকে তিনি ঋণখেলাপী ও পূবালি ব্যাংকে ক্রেবিট কার্ডের খেলাপী থাকায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়। বৈধ অন্য পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন : মোঃ ফারুক পাটওয়ারী, এমএ আজিজ বাবু, মোঃ বাদল ফরাজী, মোঃ মুবিন সুজন ও মেহেদী হাসান। ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১ জনের মনোনয়ন ঋণখেলাপীর দায়ে বাতিল করা হয়েছে। তিনি হলেন হামিদা জিনাত। অপর ২ প্রার্থী ফেরদৌসি বেগম ও ফাতেমা আক্তারের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।  
হাজীগঞ্জ উপজেলায় ২ জন চেয়ারম্যান, ৪ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী মাঈনুদ্দিন ও ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী আমজাদ হোসেন মিরণের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন : খায়রুজ্জামান, গোলাম ফারুক মুরাদ, মজিবুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন খাদিজা বকাউল, শিউলি আক্তার, মুক্তা আক্তার, মির্জা শিউলি পারভীন ও পারভীন ইসলাম। এদের সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।   
কচুয়া উপজেলায় ৭ জন চেয়ারম্যান, ৩ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আমেনা আক্তারের মনোনয়ন বাছাইতে বাতিল করা হয়েছে। আমেনা আক্তার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেখান থেকে অব্যাহতি না নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। যার ফলে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন : আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান শিশির, স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবির, জিয়াউর রহমান হাতেম, আইয়ুব আলী পাটওয়ারী, সোহরাব হোসেন, সৈয়দ আব্দুল জব্বার বাহার ও ফয়েজ আহমেদ স্বপন। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন : শাহজালাল, মাহবুব আলম ও শাহপরান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন সালমা সহিদ, শ্যামলী বেগম ও সুলতানা খানম।  
শাহরাস্তি উপজেলায় ৫ জন চেয়ারম্যান, ৬ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্য থেকে ২ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে মোঃ আনোয়ার হোসেন শাহরাস্তি পৌরসভার ঠিকাদার। তিনি তার ঠিকাদারী হস্তান্তর না করেই প্রার্থী হয়েছেন। আর তোফায়েল আহমেদ ইরান ঋণখেলাপীর দায়ে তার প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়। পরে রিটার্নিং অফিসার হেলাল উদ্দিনের কাছে এ ২ জন বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় নিয়ে ওই সময়ের মধ্যেই তারা তাদের কাগজপত্র সংশোধন করে জমা দিয়েছেন। তবে বাতিল আদেশ অপরিবর্তিত রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁরা আপিল করলে সেখানে হবে। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুকবুল হোসেন, খিজির হায়দার, ইমদাদুল হক ও বাবুল মিজি। বৈধ পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন সাইফুল ইসলাম, ওমর ফারুক, সেলিম খান, ইব্রাহিম খলিল। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন শাহনাজ আক্তার, হাসিনা আক্তার, মোহসেনা আক্তার ও কামরুন নাহার।
এদিকে বাছাইতে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে সেসব প্রার্থী আগামী ১ মার্চ থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত আপীল কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করতে পারবেন। ৪ মার্চ ওই আপিলের শুনানী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।


সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ