ভিক্ষার টাকায় স্ত্রীর জন্যে প্রতিদিন দু হাফ গরুর গোশত!


এক ভিখারী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিক্ষা করে যে টাকা উপার্জন করেন সে টাকার অর্ধেক দিয়েই স্ত্রীর মন রক্ষা করতে প্রতিদিন ২ হাফ গরুর গোশত ক্রয় করে নিয়ে যেতে হয়। এই ভিখারী মোঃ ফারুক মিয়া সওদাগর। এ গোশতের ভাগ মাঝে মধ্যে কিছু তার কপালে জুটলেও তার শিশুরা বঞ্চিত হয়। তার স্ত্রী খাদিজা বেগম কত মোটাতাজা তা’ তার কাছ থেকে জানা যায়নি। তবে তিনি মোটামুটি তাজাই দেখতে। তার সাথে আলাপকালে বুঝা গেছে, তার আয়-রোজগার ভালোই হয় প্রতিদিন। তিনি শহরে ভিক্ষা করে বেড়ানো অন্য ভিক্ষুকের মতো তেমন দুর্বল না। কাকডাকা ভোরে শহরের পুরাণবাজার পূর্ব শ্রীরামদী এলাকা থেকে বের হয়ে ভিক্ষা করতে করতে নতুন বাজার চলে আসেন। অর্ধেক দিনে মানুষের কাছে হাত পেতে প্রায় ২/৩শ’ টাকা উপার্জন করে চাউল, মাছ ও তরিতরকারি ক্রয় করে আবার চলে যান নিজ বাড়ি পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকায় পরের জায়গায় খুপড়ি ঘর করে থাকা স্ত্রী ও ২ সন্তানের কাছে। স্ত্রী-সন্তানের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বের হয়ে যান জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা করতে নতুনবাজার এলাকায়। বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে হাত পেতে কোনো দিন ২শ’ আবার কোনো দিন ৩শ’ টাকা উপার্জন করেন। ভিখারী ফারুক জানান, মাঝে মধ্যে আবার কোনো কোনো দিন ৬/৭শ’ টাকা আয়-রোজগার হয়। প্রতিদিন রাত ১০টা কি ১১টার মধ্যে ভিক্ষা করা শেষ করে শহরের পালবাজারের একটি হোটেল থেকে স্ত্রীর মন রক্ষাকল্পে ২শ’ ৪০ টাকার গরুর গোশত ক্রয় করে বাড়ি চলে যেতে হয়। কোনো কোনো দিন গোশতের টাকা রোজগার না হলে রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত ভিক্ষা করে থাকেন। বেশি আয়-রোজগারের টাকা স্ত্রী (তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও আদরের) খাদিজা বেগমের কাছে জমা রাখেন বলে জানান।
ফারুকের প্রতিদিন গোশত ক্রয় করার বিষয়টি জানাজানি হলে পালবাজারের উৎসুক ব্যবসায়ীরা বলেন, ফারুক স্ত্রীর মন রক্ষার জন্য ২ হাফ গরুর গোশত ক্রয় করে যখন বাড়ি নিয়ে যান তখন তার ২ শিশু থাকে ঘুমে। এতে ফারুকের শিশুরা গোশত খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। ভিক্ষুক ফারুকের এছাড়া উপায় যেনো নেই। তিনি সুন্দরভাবে জীবন চালাতে হলে স্ত্রীর মনতো রক্ষা করতেই হয়। অনেক কৌতূহলী লোক বলেন, ফেরি করে সনপাপড়ি বিক্রি করার জন্য ফেরিওয়ালারা ‘সনপাপড়ি’ উচ্চ স্বরে বলে থাকেন। সনপাপড়ি বড় মজা, রাজা খেলে রাণী তাজা। তবে ভিক্ষুক ফারুকের বিষয়টা ভিন্ন মাত্রার। তার স্ত্রী খেলে তিনি কি তাজা হবেন? সচেতন মহলের মতে, এ পৃথিবীতে শুধু ভিক্ষুক ফারুকই স্ত্রীর মন রক্ষা করেন না। অধিকাংশ পুরুষই তার স্ত্রীর মন রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
ফারুক মিয়া সওদাগর জানান, তার পিতা মৃত আবুল কাসিম সওদাগর। মাতা মৃত শেফালী বালা সওদাগর। বর্তমানে অন্যের জায়গায় পশ্চিম শ্রীরামদী পুরাণবাজার এলাকায় জাফরাবাদে বসবাস। তার পিতা একজন মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর মা অন্য স্থানে চলে যাওয়ায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। ফারুক জানান, এক সময় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করে জীবন কাটিয়েছেন। এখন আর পারেন না। বয়স ফারুকের ৩০ বছর হলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্যে কাজ করতে না পারায় তিনি ভিক্ষা করে জীবন কাটাচ্ছেন। তার রয়েছে ২টি মেয়ে সন্তান। একটি শিশুর নাম শান্তা ও অপরটির নাম রুমা। অসহায় ফারুক মিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের নিকট এক খ- জায়গা ও একটি ঘর পাওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানান। তিনি জানান, সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। তার বস্তি ঘরে পানি পড়ে বৃষ্টি আসলে। তিনি এ মুহূর্তে সরকারি টিন পাওয়ার জন্যে আশা করছেন একটু মাথা গুঁজে থাকার জন্যে। পালবাজারের অনেক ব্যবসায়ীর অনুরোধ : সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তর যেনো ফারুকের আবেদনে সাড়া দেয়।