• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল ॥ নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পূর্বে টার্মিনাল ত্যাগ

প্রকাশ:  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে ২১ ফেব্রুয়ারিসহ টানা ৩ দিনের সরকারি ছুটি পাওয়ার পর শুক্রবার দুপুর থেকে যাত্রীরা তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্যে ঢাকা অভিমুখে রওনা দেয়। আর এ সুযোগে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ যাত্রী নিয়ে নিরাপত্তার দিক চিন্তা না করে নিজেদের ইচ্ছামতো ওভারলোড করে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। গত শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ তাদের ৮/৯শ’ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা থাকলেও প্রায় ৪ গুণ যাত্রী অর্থাৎ তিন হাজার হতে শুরু করে ৪ হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্যে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
নৌ-টার্মিনালে গিয়ে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছামতো ৩/৪টি লঞ্চে যে পরিমাণ যাত্রী বহন করে, সে পরিমাণ যাত্রী একটি লঞ্চে উঠিয়ে নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পূর্বে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। লঞ্চযাত্রী, নৌ-টার্মিনালে কর্মরত লঞ্চ মালিকের প্রতিনিধি ও এলাকার সচেতন ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেসব লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছে, সেগুলো হচ্ছে : দুপুর ১টায় সোনার তরী-২, দুপুর আড়াইটায় সোনার তরী-৬, দুপুর ৩টা ৪০ মিনিটে সোনার তরী-০, বিকেল ৫টায় বোগদাদিয়া-৭, বিকেল ৬টায় ইমাম হাসান-২, সন্ধ্যা ৭টায় ইমাম হাসান-৫। এতে যে কোনো সময় অন্য লঞ্চের ঢেউয়ের আঘাতে কাত হয়ে লঞ্চ ডুবে গিয়ে যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। লঞ্চের কেবিন, ১ম শ্রেণী, ২য় শ্রেণী, বিজনেস ক্লাস, ৩য় শ্রেণীর টিকেট শেষ হয়ে যাওয়ার পর যাত্রীরা ডেকে, ছাদ, ছাদের উপর, মাস্টার ব্রিজের সামনে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠেছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন লঞ্চ মালিকের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত মোঃ রুহুল আমিন হাওলাদার চাঁদপুর কণ্ঠের এ প্রতিনিধিকে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি  শহীদ দিবস উপলক্ষে ৩ দিনের ছুটিতে ঢাকা যাত্রীরা চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলায় এসেছে ছুটি ভোগ করতে। ২ দিন শেষ না হতেই আবার ঢাকা থেকে অভিমুখে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে জীবনের চিন্তা না করে মৌমাছির মতো ধাক্কাধাক্কি করে লঞ্চে উঠছে ৪/৫ গুণ অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে। যার ফলে ওভারলোডের কারণে লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ও আধা ঘণ্টা পূর্বে ছেড়ে ঢাকা যাত্রা করেছে। ১ জন কেরানীর স্থলে ৭/৮ জন কেরানী টিকেট কাটতে হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে নৌ-টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দিনের চাইতে রাতের বেলা যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। চাঁদপুর থেকে প্রতিদিন নিয়মিত এ রূটে ২২টি লঞ্চ চলাচল করছে। বিভিন্ন লঞ্চ ধারণ ক্ষমতার চাইতে ৩ গুণেরও বেশি যাত্রী নিয়ে রাতের অন্ধকারে চাঁদপুর নৌ-সীমানা থেকে পদ্মা-মেঘনা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকা অভিমুখে গেছে। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিলো। দিনের বেলা লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারাপারের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীরা দিনের আলোতে সাঁতরিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব হলেও রাতের আঁধারে দুর্ঘটনায় পড়লে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে বলে অভিজ্ঞজন মন্তব্য করছেন। তাদের মন্তব্য : জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা অভিমুখে পাড়ি জমিয়েছে।  
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্বাভাবিকের চাইতে বেশি যাত্রী গেছে। ওভারলোডিংও হয়েছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ-বন্দরের টিআই মাহাতাব উদ্দিনকে বলা হয়েছে অতিরিক্ত যাত্রী হলে নৌ-পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য। আমার কাছেও অভিযোগ আসার পর এ নির্দেশ দিয়েছি। চরমোনাই মাহফিলসহ বিভিন্ন উপলক্ষে লঞ্চ ভাড়া যাওয়ায় এ সমস্যা বেশি হয়েছে। ওভারলোড কমানোর জন্যে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে।