মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে
চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পাঁচ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন


মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরে এবার ব্যাপক আয়োজনে বইমেলা হচ্ছে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং চাঁদপুর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় পাঁচ দিনব্যাপী এই অমর একুশে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন গতকাল করা হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকবে। গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। প্রথমে অতিথিগণ মেলার প্রধান গেটে ফুলের মালা দিয়ে তৈরি ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধন করেন। পরে মেলার স্টলগুলো পরিদর্শন করেন অতিথিরা। এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শওকত ওসমানের সভাপ্রধানে ও সাংবাদিক এমআর ইসলাম বাবুর সঞ্চালনায় উদ্বোধকের বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি-কালচারকে ধ্বংস করতে হয়। তাই পাকিস্তানিরা প্রথমেই আমাদের ভাষার ওপর আঘাত হানে। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্যে প্রাণ দিয়েছে বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। ইউনেস্কো আমাদের এ ভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই বিশ্বের সকল দেশে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশকে সোনার বাংলায় গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক চক্র তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বই পড়লে জ্ঞানের ভা-ার বৃদ্ধি পায়। আর সে লক্ষ্যেই এ বইমেলা। ঢাকায় ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বইমেলা হচ্ছে বহুকাল যাবৎ। গত ক’বছর যাবৎ চাঁদপুরেও বইমেলা হচ্ছে। চাঁদপুরে এ ধরনের আয়োজনে বইমেলা হবে এটা কখনো কল্পনায়ও ছিলো না। এ বছর ব্যাপক আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী বইমেলা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আরও কয়েকদিন বাড়িয়ে দেয়া হবে। চাঁদপুরে অমর একুশে বইমেলার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
সভাপতির বক্তব্যে শওকত ওসমান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ বইমেলাটি যেনো এবার সুন্দরভাবে করা হয়। শুধু জেলা শহরেই নয়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এবার প্রতিটি উপজেলায় বইমেলা হবে। রোববার ফরিদগঞ্জে শুরু হয়েছে, কাল (আজ) মঙ্গলবার হাজীগঞ্জে হবে। তিনি বলেন, বইমেলা হলো একটি চর্চা। এটিকে সংস্কৃতি চর্চাও বলা চলে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে বইমেলার মাধ্যমে আমরা সে চর্চা করছি। বইমেলা একটি শেখার স্থান। এটিতে লেখকের ও পাঠকের মিলনমেলায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, একুশের ও স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব করতে হবে। মন্ত্রীপরিষদের নির্দেশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেনো পালন করা হয়। বাঙালির এ অর্জনকে সারাবিশ্ব স্মরণ করছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যে জাতি রক্ত দিয়ে ভাষা অর্জন করেছে সে জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, পাঠকের মধ্য থেকেই লেখক বৃদ্ধি করতে হবে। লেখক আর পাঠকের মিলনমেলাই হলো বইমেলা।
আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক ও বইমেলা উদ্যাপন উপ-কমিটির আহ্বায়ক রোটাঃ কাজী শাহাদাত। উপস্থিত ছিলেন বইমেলা উদ্যাপন উপ-কমিটির সদস্য সচিব চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, বিএম হান্নান, বিশিষ্ট কবি, লেখক ও চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ্, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি তপন সরকার, চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশীদ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম সাইফুল হকসহ আরও অনেকে।
বইমেলায় সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে নৃত্যধারা ও আনন্দধ্বনি সংগীত শিক্ষায়তন। বইমেলায় অংশ নেয়া স্টলগুলো হলো ইসলামী পাঠাগার ও লাইব্রেরী, চাঁদপুর পৌর পাঠাগার, জেলা প্রশাসন-চাঁদপুর, চাঁদপুর ভ্যাকসিন সেন্টার, তওহিদ প্রকাশনা, চাঁদপুর লেখক পরিষদ, প্রথম আলো, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, শিল্পকলা ক্যান্টিন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, শিশু একাডেমি, ভক্তি বেদান্তর বুক স্টল, আল-মদিনা লাইব্রেরি, ন্যাশনাল লাইব্রেরী, তাজমহল লাইব্রেরি, প্রফেসর লাইব্রেরী, মাস্টার লাইব্রেরী, দোয়াগঞ্জল রেলওয়ে বুক স্টল, বইমেলা লাইব্রেরী, মোহাম্মদীয়া লাইব্রেরী, ইউনিক বুকস ও সততা স্টোর। এছাড়া পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও নিরাপত্তার স্টল রয়েছে।