চাঁদপুরে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনে প্রস্তুতি সভা
বইমেলাকে আরো উপভোগ্য ও মানসম্মত করা হবে : জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান


চাঁদপুরের মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদ্যাপনকল্পে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। সভার শুরুতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান গত বছরে চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির বিবরণ এবং সরকারি নির্দেশনা তুলে ধরেন। সভায় এবারো গত বছরের কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরকারি কর্মসূচির সাথে মিল রেখে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি পালন করবো। বিগতদিনে চাঁদপুরে যে সব কর্মসূচি পালিত হয়েছে সেগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। দিবসটি উপলক্ষে চাঁদপুরের বই মেলাকে আরো উপভোগ্য ও মানসম্মত করা হবে। উপজেলাগুলোতেও বই মেলাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করতে তিনি ইউএনওদের প্রতি আহ্বান জানান। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় এমপি মহোদয়দের উপস্থিতি নিশ্চিত করতেও বলা হয় ইউএনওদেরকে। এছাড়া স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও সংবাদ প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি। মহান এই দিবসটি সুন্দরভাবে উদ্যাপন করার জন্যে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির বিপিএম পিপিএম, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ এ কে এম মাহাবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর স্থানীয় প্রতিনিধি অ্যাডঃ সাইফুদ্দিন বাবু, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ।
সভায় গত বছরের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার পর এবারো সে সব কর্মসূচি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে : আগামী ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি মোট ৬দিন প্রতিদিন সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একইস্থানে বই মেলার আয়োজন, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় শহীদ মিনারে কবিতা আবৃত্তি ও নাটিকা মঞ্চায়ন, ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের স্থানীয় সকল দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার উদ্যোগে শহরের নতুন বাজার সড়ক, অঙ্গীকার পাদদেশ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর, শপথ চত্বর, ইলিশ চত্বর, চিত্রলেখার মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সড়কে বাংলা বর্ণমালা ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকল স্কুল, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতিসহ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দিবসের প্রত্যুষে শহীদ দিবসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সঙ্গীত পরিবেশন সহকারে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রভাত ফেরী বের করবে। ওইদিন শহীদদের স্মরণে জেলার সকল স্কুল, কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন, সকল স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পাঠ, স্বরচিত ছড়া ও কবিতা প্রতিযোগিতা এবং কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে সর্বসাধারণের জন্যে একুশ সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা করতে হবে। জেলার সকল মসজিদে বাদ জোহর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের উপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা এবং ভাষা শহীদদের অমর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৮টায় একই স্থানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা হবে।
উল্লেখ্য, বইমেলা ও প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়সীমা পরিবর্তনও হতে পারে। এসব উদ্যাপনে উপ-কমিটির সাথে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সভায় জানানো হয়।