• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে সিএনজি স্কুটার ও অটোচালকদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য ॥ যাত্রীদের নাভিশ্বাস অবস্থা

প্রকাশ:  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহর এখন বলতে গেলে সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের শহর হিসেবে খ্যাত। প্রধান সড়ক হতে শুরু করে অলিগলি সর্বত্রই এখন এ দু’টি যানবাহনের দখলে। এ দু’টি যানবাহনের উপদ্রব ও দৌরাত্ম্যে অন্য কোনো যানবাহন শহরে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে না। এমনকি মানুষ পায়ে হেঁটেও চলাফেরা করতে পারছে না এই সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের দৌরাত্ম্যের কারণে। তবে সবচেয়ে ভীতিকর অবস্থা দেখা যায় চাঁদপুর লঞ্চঘাট এলাকায় গেলে। সেখানে দিনেরাতে সবসময় সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের সীমাহীন দৌরাত্ম্য থাকে। এই দু’টি যানবাহন এবং এর চালকদের দৌরাত্ম্যে লঞ্চ যাত্রীদের পন্টুনের ভেতরে ঢুকা এবং পন্টুন থেকে বের হওয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। চালকদের চিৎকার চেঁচামেচি এবং যাত্রীদের নিয়ে টানা হেঁচড়া করার অবস্থা এমন জঘন্য পর্যায়ের, যা মোটেই মেনে নেয়ার মতো নয়। অন্য জেলার কোনো মানুষ চাঁদপুর এসে লঞ্চঘাটের এই চরম বিশৃঙ্খলা অবস্থা দেখলে তারা কোনোভাবেই চাঁদপুর সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করবে না। আর এর দায় চাঁদপুরের সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পৌর কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ তথা সুশীল সমাজ কেউই এড়াতে পারবে না।
    ঢাকার সাথে চাঁদপুরের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই আরামদায়ক, যানজটহীন ও কমসময় হওয়ায় এই রূটটি এখন খুবই জনপ্রিয় এবং ব্যস্ততম রূটে পরিণত হয়েছে। চাঁদপুর জেলা ছাড়াও রায়পুর-লক্ষ্মীপুরের মানুষ ঢাকায় খুব কম সময়ে এবং আরামে যাতায়াত করতে চাঁদপুর টু ঢাকা নদী পথকেই বেছে নিয়েছে। তাই প্রতিদিন প্রায় লাখের মতো মানুষ চাঁদপুর লঞ্চঘাটে আসা-যাওয়া করে। আর ফরিদগঞ্জ-রায়পুর-লক্ষ্মীপুরের মানুষ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে আসে অধিকাংশই সিএনজি স্কুটারে করে। এতে সহজেই অনুমান করা যায় চাঁদপুরের বাইরের তথা রায়পুর ও লক্ষ্মীপুরের কী পরিমাণ সিএনজি স্কুটার প্রতিদিন চাঁদপুর শহরে আসে।
    প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০ মিনিট কি ১ ঘণ্টা পর পর বিশাল আকারের লঞ্চ চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার ঢাকা থেকেও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে দিনে এবং রাতে অনেক লঞ্চ ছেড়ে আসে। তাই দিনে ও রাতে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম থাকে প্রতিদিন।
    চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালের সামনে বিশাল খালি মাঠ রয়েছে। সাথেই রয়েছে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। এই খালি জায়গাটি দিনে ও রাতের প্রায় সারাক্ষণ সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের দখলে থাকে। শত শত পরিমাণের এই দু’টি যানবাহন পুরো মাঠজুড়ে জটলা করে থাকে। আর এসব গাড়ির চালকরা ঘাটের পন্টুনের ভেতরে ঢুকে, গ্যাংওয়েতে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে এবং পন্টুন থেকে বের হওয়ার পথের মুখে জটলা করে দাঁড়িয়ে শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। তাদের মুখে শুধু ফরিদগঞ্জ-রায়পুর-লক্ষ্মীপুর ডাকই শোনা যায়। মাঝে মধ্যে হাজীগঞ্জ বলেও ডাকে। শত শত চালক একসাথে এমন চিৎকার করে ডাকাডাকি করতে থাকলে তখন সেখানকার অবস্থা যে কী ভীতিকর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে, তা না দেখে অনুভব করা যাবে না। পন্টুনের পুরো প্রবেশ পথজুড়ে যেভাবে তারা জটলাবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে পন্টুন থেকে স্বাভাবিকভাবে বের হওয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নেমে পন্টুন থেকে বের হতে ধাক্কাধাক্কি করে বের হতে হয়। সামান্য কয় কদম হাঁটতে যাত্রীদের গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে যায়। পন্টুনের বাইরেই শুধু নয়, অনেক সিএনজি স্কুটার ও অটোচালক পন্টুনের ভেতরে ঢুকে চিৎকার চেঁচামেচি ও যাত্রীদের নিয়ে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। আর ভাড়ার দরদাম নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাদানুবাদ তো আছেই। খুব কষ্টে পন্টুন থেকে বের হতে পারলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইকের জটলার কারণে। অথচ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ সকলেই এ রূটে চলাচল করে থাকে এবং ঘাটের এই চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা সবসময়ই চোখে পড়ে। কিন্তু সবাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেনো এ চরম বিশৃঙ্খলতা ও সিএনজি স্কুটার-অটোবাইকের দৌরাত্ম্যই এখানকার ঐতিহ্য।
    ঢাকা-চাঁদপুর নৌ রূটের যাত্রীরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এই হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে চায়। তারা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে সিএনজি স্কুটার ও অটোবাইক চালকদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে চায়। এ বিষয়ে তারা চাঁদপুরের প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।