দীর্ঘ বছর ফরিদগঞ্জে সেচ প্রকল্পের খাল খনন হচ্ছে না ॥ সঠিক সময়ে পানি না পেয়ে দিশেহারা কৃষক
প্রকল্পের ভেতরে কিছু অসচেতন লোক অপরিকল্পিতভাবে খালের বিভিন্ন স্থানে নানা স্থাপনা তুলে পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে : নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক), পাউবো


ফরিদগঞ্জে সিআইপি বেড়িবাঁধের খালের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ভরাটের কারণে সেচের পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ বছর খাল খনন না করায় সঠিক সময়ে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের খালে পানি আসছে না। পানি না আসায় বোরো আবাদে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষিবিদরা জানান, ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বীজতলা করার উপযুক্ত সময়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হয়। যা স্বাভাবিকভাবে চলে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হবে। ৪০ দিনের পর চারার বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমেই উৎপাদন কমতে থাকবে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের ৯ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার হেক্টর। উপজেলার আদশা, হামছাপুর, হুগলী, ত্রিদোনা, বৃহত্তর ষোলদানা, রাজাপুর, সাইসাঙ্গা, দত্রা, খাজুরিয়া, গুপ্টি ও সেনা হাটখোলা মাঠের কৃষকরা জানায়, পানির অভাবে তারা ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। শুরুতে কেউ কেউ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জমিতে পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে তা এখন নষ্ট হওয়ার পথে। এছাড়া অনেক স্থানে খাল ভরাটের কারণে সেখানে দেখে বুঝার উপায় নেই যে ওইস্থানে কোনো খাল ছিলো।
এ সম্পর্কে উল্লেখিত এলাকার কৃষক ইউপি সদস্য মোঃ শরীফ গাজী, জাকির হোসেন, সারোয়ার হোসেন, বাবুল দেওয়ান, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, ডাঃ শফিকুর রহমান, জসিম উদ্দিন, খোরশেদ আলম সুমন, সিদাম দাস, সুমন ও মমিন হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, এখন পর্যন্ত খালে পানি না থাকায় আমরা ধানের চারা রোপণ করতে পারছি না। ধানের চারার বয়স দিন দিন বেড়ে চলছে। অনেকের চারার বয়স ৬০ দিন পার হয়ে গেছে। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে হয়। তা না হলে উপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমতে থাকে। সঠিক সময়ে পানি না পাওয়ায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যের আশঙ্কা করছেন কৃষক।
খাজুরিয়া মাঠের স্কিম ম্যানেজার মামুন আখন্দ, হুগলী মাঠের স্কিম ম্যানেজার সুমন ও হাটখোলা মাঠের স্কিম ম্যানেজার আবুল কাসেম এ প্রতিনিধিকে বলেন, খালে পানি না থাকার কারণে সেচ দিতে পারছি না। পানির অভাবে কিছু এলাকায় রোপণ করা ধানের চারা নষ্ট হওয়ার পথে। পানি না থাকায় বোরো চাষাবাদ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
এ সম্পর্কে ওই এলাকার রাজনীতিবিদ বুলবুল আহম্মেদ বলেন, গুপ্টি পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের খালগুলো গত ২৫ বছরে একবারও খনন করা হয়নি। মূলত খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি না আসায় কৃষকরা পানি সঙ্কটে রয়েছে। গঙ্গাজলী ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে খাজুরিয়া-গুপ্টি এলাকার খালগুলো খনন করা হলে আগামীতে এই পানি সঙ্কট আর থাকবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, বোরো আবাদের স্বার্থে সব খালে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ আলী আফরোজ জানান, বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে পানি সঙ্কট দূর করতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোঃ রুহুল আমিন জানান, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের খালগুলোতে পহেলা জানুয়ারি পানি ছাড়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের ভেতরে কিছু অসচেতন লোক অপরিকল্পিতভাবে খালের বিভিন্ন স্থানে নানা স্থাপনা তুলে পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। এ বিষয়টি সমাধানকল্পে কৃষকের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।