• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

সাহিত্য একাডেমীতে সদ্যপ্রয়াত লেখক পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীর স্মরণসভায় বক্তাগণ

তিনি ছিলেন সাদা মনের কর্মময় মানুষ

প্রকাশ:  ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরের সদ্যপ্রয়াত লেখক, সংগঠক ও  সংস্কৃতিকর্মী পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীর স্মরণে সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুরের আয়োজনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় একাডেমী মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
    সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে সভায় চাঁদপুরের নবীন-প্রবীণ লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীরা পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন। এ সময় বক্তারা তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রু সজল হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট লেখক পীযূষ কান্তি বড়–য়া।
    স্মরণসভায় বক্তব্যকালে তরুণ লেখক আজিজুর রহমান লিপন বলেন, পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী স্বচ্ছ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে বড় করে দেখে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন।
    সাংস্কৃতিক কর্মী খায়রুজ্জামান বলেন, তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। সব বয়সী মানুষের সাথে নিঃসঙ্কোচে মিশে যাওয়ার স্বভাব তাঁর ছিলো।
    আবৃত্তিশিল্পী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি ছিলেন আমার গুরু ও শিক্ষক। তিনি সত্তরোর্ধ্ব বয়স নিয়েও সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা আমাদের দক্ষ ও আন্তরিক অভিভাবককে হারালাম।
    আবৃত্তিশিল্পী আমির হোসেন বাপ্পী বলেন, পীযূষ দা এ সমাজের ব্যতিক্রম মানুষ ছিলেন। তিনি ভালো শিল্পী হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়ার উপর বেশি গুরুত্ব দিতেন।
    লেখক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান বলেন, তাঁর আর্থিক বিশালতা ছিলো না, কিন্তু তাঁর আত্মা ছিলো বিশাল। আমরা তাঁর ¯েœহ পেয়েছি, অপার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। সাহিত্যের কাজে যতোবারই তাঁর সহযোগিতা চেয়েছি, তাঁর সহযোগিতা পেয়েছি।
    শিক্ষক আবু সায়েম বলেন, উদার মনের মানুষ ছিলেন পীযূষ দা। সাংগঠনিকভাবে অনেক কাজ আমরা একসাথে করেছি। তিনি তাঁর লক্ষ্য ঠিক রেখে নিরলস কাজ করে যেতেন।
    গল্পকার কাদের পলাশ বলেন, তিনি চলে গেছেন ভাবতেই পারিনি। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে চাঁদপুরবাসীর মনে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন।
    বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন বিশ্বাস বলেন, তাঁর সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। সাংগঠনিক সম্পর্কের বাইরে তাঁর পরিবারের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিলো। তিনি দেশকে ভালোবেসে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে গেছেন।
    লেখক ও সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পীযূষ কান্ত রায় চৌধুরী সক্রিয় নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যকর্মী ছিলেন। লেখালেখির সূত্রে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। তিনি আমাদের নানা কাজে সবসময় পাশে ছিলেন এবং সহযোগিতা করেছেন।
    কবি ইকবাল পারভেজ বলেন, তিনি ছিলেন সাহিত্যসেবী ও দক্ষ সংগঠক। তাঁর সাথে বন্ধুত্ব ছিলো। তাঁর সাথে চলাফেরা করতে করতে আমরা তাঁর স্বজন হয়ে গিয়েছিলাম।
    গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহা বলেন, যে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখতাম। সবার কাছেই তিনি ভালো মানুষ ছিলেন।
    প্রবীণ লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদার বলেন, পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন। তিনি সাহিত্য সমালোচনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতেন। তাঁকে কখনো রাগ হতে দেখিনি।
    লেখক ও প্রাবন্ধিক পীযূষ কান্তি বড়–য়া বলেন, তিনি আমাদের প্রিয় মানুষ, প্রিয় স্বজন ছিলেন। তাঁর পরিবারের সাথে আমার পরিবারের গভীর বন্ধুত্ব ছিলো। আমরা তাঁর কাছে ঋণী।
    সঙ্গীতশিল্পী রূপালী চম্পক বলেন, পীযূষ দার কর্মবহুল স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর মতো কর্মাগ্রহী মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। তাঁর ভেতর কোনো অহংবোধ ছিলো না। তিনি আমাদের অনেক বেশি সহযোগিতা করেছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
    প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির বলেন, তাঁর অনেক লেখার প্রুফ আমি দেখেছি। অনেক লেখা আমি চাঁদপুর কণ্ঠে ছেপেছি। তাঁর সাথে বেশিরভাগই লেখালেখি নিয়ে কথা হতো। অনেক বছর ধরে তাঁর সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, কিন্তু তাঁর মধ্যে কখনো আন্তরিকতার ঘাটতি দেখিনি।
    লোক গবেষক প্রকৌঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, পীযূষ দা সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক সংস্কৃতিকর্মী ও লেখক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা কেবল একজন শিল্পী নয়, একজন ভালো মানুষকে হারিয়েছি। তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ছিলো, আছে এবং থাকবে।
    সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত বলেন, পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি চাঁদপুরের সংস্কৃতি ও সাহিত্যাঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা অনেক বেশি শোকাহত। তাঁর প্রয়াণের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরের সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের একজন সুহৃদ ও প্রিয় মানুষকে হারালো। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
    প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী বলেন, পীযূষ আমার ছাত্র ছিলো। চাঁদপুরে দীর্ঘদিন সে আনন্দ নিয়ে শিল্পচর্চা করতো, প্রচুর লিখতো। সে গান লিখতো, গান গাইতো। কবিতা লিখতো, কবিতা আবৃত্তি করতো। শিল্পচর্চা করে সে অনেক আনন্দ পেতো, আমাদেরও আনন্দিত করতো। আমি পীযূষ কান্তি রায়ের আত্মার পরম শান্তি কামনা করি। পরম করুণাময় যেনো তাঁকে যথাস্থানে রাখেন।
    অধ্যক্ষ প্রফেসর বিলকিস আজিজ বলেন, পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী তাঁর কর্মের মাধ্যমেই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর সরব পদচারণা ছিলো। সাহিত্য একাডেমীতে তাঁর সক্রিয় পদচারণা মনে রাখার মতো।
    স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সদস্য এসবি বর্ণ। পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীকে স্মরণ করে লেখা পাঠ ও তাঁর কবিতা আবৃত্তি করেন সঙ্গীতশিল্পী রূপালী চম্পক, ছড়াকার খান-ই-আজম, ফাতেমা আক্তার শিল্পী, আবু বকর সিদ্দিক, আছিয়া আক্তার মিথিলা, হাসান বেপারী, নিলয় দাস ও নিবিড় দাস। পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীর লেখা গান পরিবেশন করে প্রতœ পীযূষ বড়–য়া ও প্রখর পীযূষ বড়–য়া।
    স্মরণ সভায় আরো অংশ নেন কবি ও অনুবাদক সালাহ উদ্দীন, কবি ফেরারী প্রিন্স, ফয়সাল মৃধা, সংস্কৃতিকর্মী শান্ত, নিঝুম খান, ইয়াছিন দেওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।