হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি
দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সঙ্কট থাকবে না, শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকবে
এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ সরকারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি
হাইমচর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছরপূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান ব্যাপক আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এ প্রথম কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে তাঁর যোগদান। এ বিষয়টি তিনি তাঁর বক্তব্যে খুব আনন্দের সাথে উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারলাম এ বিদ্যালয়টির বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষক সঙ্কট একটি বড় সমস্যা। তিনি বলেন, শুধু এ বিদ্যালয়েই নয়, দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সঙ্কট থাকবে না। আর শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা থাকবে। শিক্ষাখাতের সকল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমি চাঁদপুরের মানুষ বলে শুধু এ বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করবো তা নয়, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সঙ্কট ও শ্রেণি সঙ্কট অবশ্যই দূর করবো। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকারে সবকিছুই হয়। গত ১০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সামনে আরো হবে। কোনো অপশক্তি শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
হাইমচরের কৃতীসন্তান প্রয়াত আব্দুল্লাহ সরকারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিদ্যালয়টিসহ দুটি বিদ্যালয় তিনি হাইমচরে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি অবহেলিত এ জনপদ ও মানুষগুলোর জন্যে কাজ করেছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তাঁর মতো মানুষ এ এলাকায় জন্মেছে বলে নানাদিক থেকে পিছিয়ে থাকা হাইমচরে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে। নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলোর পাশে তিনি সবসময় ছিলেন। তাই আমি আজ তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। আজকের এ অনুষ্ঠানে আমি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ সরকারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বর্তমান হাইমচর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের হাইমচর আর ভাঙ্গনকবলিত হাইমচর নয়। এখন আর হাইমচরের কোনো জনপদ নদী ভাঙ্গে না। ২০০৮ সালে আপনারা আমাকে নির্বাচিত করার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাইমচরকে নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা হয়েছে। সারাদেশের উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে হাইমচরে উন্নয়নও দ্রুতলয়ে চলছে। আজকের এই পরিবর্তিত হাইমচরের জন্যে আমি খুবই গর্বিত। তাই এ এলাকার মানুষের সাথে আমার খুব আবেগের জায়গা থেকে অন্যরকম একটি সম্পর্ক রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বকে তোমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ভালো-মন্দ সবকিছুই তোমাদের সামনে আসবে। এখন তোমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমরা ভালোটাকে গ্রহণ করবে নাকি মন্দটাকে গ্রহণ করবে। দীপু মনি বলেন, আমরা শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠক্রমকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি মানবিকতাও তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে। নৈতিকতা ও মানবতাবোধ একটি জাতিকে সভ্যতার শিখরে নিয়ে যেতে পারে। একটি দেশের উন্নতি শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক দিয়ে দেখলে হয় না, তার মানবিক দিক অবশ্যই থাকতে হয়। আমরা সৌভাগ্যবান যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো মানবিকতাবোধসম্পন্ন নেত্রী আমরা পেয়েছি। তাঁর মানবিকতাবোধ চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাতে আমরা তাঁর কর্মী হিসেবে গর্ববোধ করছি। তিনি ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাদক ও জঙ্গিবাদমুক্ত সমাজ গঠনে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সকলের প্রচেষ্টা থাকতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে সে মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
ডাঃ দীপু মনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, সবকিছু করে দেয়ার দায়িত্ব কি শুধু সরকারেরই? আর সরকার তো আপনারাও। আপনারাই তো এ সরকারকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। তাই সকল দায়িত্ব তো শুধু সরকারের নয়। এ মিলনমেলায় এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনেক উঁচু জায়গায় আছেন। আমি আশা করবো, সকলের প্রচেষ্টায় এ বিদ্যালয়টি অনেক দূরে এগিয়ে যাবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সে লক্ষ্য নিয়েই শেখ হাসিনার সরকারের পথচলা।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক বিদ্যালয়ের ১৯৭১ ব্যাচের ছাত্র সুনীল কৃষ্ণ মাঝির সভাপ্রধানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের ১৯৭৭ ব্যাচের ছাত্র ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি ও হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী। অনুষ্ঠান মঞ্চে চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মঈনুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চাঁদপুর জেলা ও হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রসহ শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্বের আগে শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি পায়রা ও বেলুন উড়ান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র জিএম জাহিদ। শিক্ষামন্ত্রীকে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দন জানায়। এছাড়া বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত একজন ছাত্রকে নিয়ে ৫০ বছরপূর্তির কেক কাটেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিসহ অন্য অতিথিরা।