চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষ এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিচিতি সভা
ভালো চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষও হতে হবে : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষ এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিচিতি সভার মধ্য দিয়ে চাঁদপুর জেলাবাসীর বহু কাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত স্বপ্নের মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হলো। গতকাল ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ঐতিহাসিক দিনটিতে চাঁদপুর জেলাবাসীর কাক্সিক্ষত সে স্বপ্নের বাস্তবে পথচলা শুরু হলো। এদিন বেলা সাড়ে বারোটায় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এ পরিচিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এ স্বপ্ন পূরণের অগ্রনায়ক, চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, ডাক্তারি পড়া খুবই কষ্টের। তারপরও ভালোভাবে লেখাপড়া করে মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের দেশের সম্পদ হয়ে উঠতে হবে। ডাক্তারি পড়তে গিয়ে একেক সময় মনে হবে যে, কেনো ডাক্তারি পড়তে আসলাম। এতো কষ্ট জানলে অন্য কোনো বিষয়ে পড়তাম। কিন্তু যখন রেজাল্ট একটার পর একটা ভালো হতে থাকবে, তখন অবশ্য ভালোই লাগবে। আর সব কাজেই একটা তৃপ্তির জায়গা থাকে। যখন একজন মুমূর্ষু রোগী একজন চিকিৎসকের কাছে আসে এবং চিকিৎসক তার চিকিৎসা সেবা দেবার পর সে মানুষটি যখন সুস্থ হয়ে ওঠেন-তার যে তৃপ্তি, অন্য কাজের তৃপ্তির সাথে তার তুলনা করা যায় না। এখানেই ডাক্তারদের সকল কষ্ট ও পরিশ্রমের প্রশান্তি। তাই মেডিকেলে পড়ে ভালো ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হবারও চেষ্টা থাকতে হবে। আর ভালো মানুষ হতে হলে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের গ-ির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখলে হবে না। সাধারণ মানুষের মাঝে বিচরণ থাকতে হবে। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ এবং সেবার মানসিকতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বেশ দ্রুততার সাথে মেডিকেল কলেজ পেলাম। অচিরেই এটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজে পরিণত হবে। কলেজের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের জন্যে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশের জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অল্প সময়ের জন্যে এ সদর হাসপাতালের ৪র্থ তলায় ক্লাস কার্যক্রম চলবে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরো বেশি স্মরণীয় করে রাখতে সারাদেশে যে কটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, তার সবগুলোর ১ম বর্ষের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস আজ হয়েছে।
তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছি সত্য, কিন্তু ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাঙালি তার বিজয়ের পুরো স্বাদ পায়নি। সত্যিকার অর্থে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বিজয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এদিন দেশের লাখো-কোটি মানুষ তাদের নেতাকে ফিরে পেয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন আমাদের সকল প্রেরণার উৎস। সেই বিশেষ দিনে জাতির পিতার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ হবে এটা আমাদের কেবল দাবিই ছিলো না, স্বপ্নও ছিলো উল্লেখ করে ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমি যখন যেখানে গেয়েছি সেখানেই আমাকে অনেকে বলেছেন, আপা এখানে একটি মেডিকেল কলেজ করবেন কি না। সেই কথার উপরে আমার নিজেরও চাঁদপুরে একটা মেডিকেল কলেজ করার স্বপ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। একসময় ভেবেছিলাম হয়তো আর হবে না। কিন্তু আবার যখন নতুন করে মেডিকেল কলেজ দেয়া শুরু হলো, তখন আমার কাছে মনে হয়েছে এবার হয়ত চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ হবে, আর এটি হওয়া খুবই দরকার। তিনি বলেন, গতবছর ১ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চাঁদপুর এসেছিলেন। তিনি তখন চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ করার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। মাত্র সাত মাসের মধ্যে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মেডিকেল কলেজ ছিলো একটি স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্ন এখন বাস্তব। যার যাত্রা শুরু আজ থেকে। তাই আজকের দিনটি আমার কাছে খুবই স্মরণীয় দিন। ডাঃ দীপু মনি এ দিনটির সাথে তাঁর মেডিকেল শিক্ষার প্রথমদিনের স্মৃতির কথা স্মরণ করে বলেন, আমি যেনো সেই ১৯৮৩ সালের ৬ এপ্রিল দিনটিতে ফিরে গেলাম। মনে হচ্ছে যেনো আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে বসে আছি।
ডাঃ দীপু মনি বলেন, আজকে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষ এমবিবিএস কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কারণ, তিনি না হলে আমরা এ মেডিকেল কলেজ পেতাম না। তাছাড়া আজকে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি এবং উন্নতি, তার জন্যেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। চাঁদপুরের মানুষের প্রতিও আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। কারণ, তারা আমাকে তৃতীয়বারের মতো তাদের সেবা করবার সুযোগ দিয়েছেন।
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জামাল সালেহ উদ্দিনের সভাপ্রধানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ও সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও বিএমএ চাঁদপুর-এর সভাপতি ডাঃ সৈয়দ নূরুল হুদা ও জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন নবী মাসুম। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম আনোয়ারা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ রিদওয়ানুল হক। ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন লামিয়া নওরীন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক, ছড়াকার ও লেখক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কায়সার আহমেদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আনোয়ারুল আজিম, চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মঈনুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মোঃ সফিকুল ইসলাম, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া লিটন, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ¦ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, ডাঃ এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ী মোস্তাক হায়দার চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন আখন্দ, ইঞ্জিঃ আঃ রব ভূঁইয়া, আঃ রশিদ সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, সাহির হোসেন পাটওয়ারী, শিক্ষা ও মানব কল্যাণ সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান, সদস্য নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, আলী আরশাদ মিয়াজী, আইয়ুব আলী বেপারী, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল মুন্নাসহ, জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, অভিভাবক, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। আর তাতে কণ্ঠ মেলান প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত সবাই। ডাঃ হাবিবুর রহমান পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। গীতা পাঠ করেন উজ্জ্বল দাস। এরপর চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জামাল সালেহ উদ্দিন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, ডিডিএফপি, স্বাচিপ, বিএমএ, স্বাধীনতা সেবিকা পরিষদ, হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, চাঁদপুর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি, ডেন্টাল পরিষদ, স্বাস্থ্য সহকারী সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠন শিক্ষামন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। প্রধান অতিথি এমবিবিএস কোর্সের ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়া ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। সবশেষে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ৪র্থ তলায় ক্লাস শুরুর মধ্য চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হবার পর ডাঃ দীপু মনি এমপির এটাই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রথম সফর এবং প্রথম অনুষ্ঠান। তাই এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মী, শুভাকাক্সক্ষী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিলো ব্যাপক।