নিয়ন্ত্রণহীন অটোবাইকের দৌরাত্ম্য চাঁদপুরবাসী আর কতদিন দেখবে?
নিয়ন্ত্রণহীন অটোবাইকের দৌরাত্ম্যে চাঁদপুর শহরে চলাচল করাটা এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন দিন এ সমস্যা প্রকট হচ্ছে। একে তো অসংখ্য অটোবাইক, তার উপর আবার নেই কোনো এর নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ এ যানবাহনটি সড়কে চলাচলে যেনো নিয়মকানুনের কোনো বালাই নেই। যত্রতত্র পার্কিং, স্ট্যান্ড এবং যেখানে-সেখানে থামানো। কখনো রাস্তার মাঝখানে, আবার কখনো রাস্তাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে এই অটোবাইক। পেছনে কোনো যানবাহন আটকা পড়লো, না মানুষ আটকা পড়লো তা নিয়ে অটোবাইক চালকদের কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু যানবাহন নয়, চাঁদপুর শহরে মানুষের চেয়ে অটোবাইকের সংখ্যাই যেনো বেশি দেখা যাচ্ছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কে চলাচল করা এ যানবাহনটির যন্ত্রণায় শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। যততত্র পার্কিং আর সড়কজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে শহরে এখন দীর্ঘ যানজট থাকে সবসময়। দেখা গেছে যে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং মোড়ে মাঝ বরাবর অনেক অটোবাইক জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রীর আশায়। আবার রাস্তার মাঝখানে থামিয়েই যাত্রী উঠানো এবং নামানো হয়। মনে হয় যেনো তাদের বাপের বাড়ির উঠান। এই চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা এখন চাঁদপুর শহরের প্রধান সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত বিরাজমান থাকলেও এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের কারোরই যেনো কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষগুলো।
চাঁদপুর পৌরসভার লাইসেন্স শাখা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার লাইসেন্সধারী অটোবাইকের সংখ্যা হচ্ছে বর্তমানে ২ হাজার ২শ’ ৫০টি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই সংখ্যা হবে তিন গুণেরও বেশি। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে অটোবাইকের আধিক্য এমন পর্যায়ের, যেনো পিঁপড়ার মিছিল, অর্থাৎ একটার পর একটা অটোবাইক লেগে আছেই।
এদিকে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চাঁদপুর শহরের ভেতরে প্রধান সড়কগুলোর অবস্থানের আলোকে কী পরিমাণ যানবাহান শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করলে তা সহনীয় বা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে, এর হিসেব কোনো দপ্তরেই নেই। অর্থাৎ এ বিষয়টি নিয়ে কেউ চিন্তাও করে না।
চাঁদপুর শহর বলতে প্রধানত যে অংশটুকু বুঝায় তা হচ্ছে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে পশ্চিমমুখী কুমিল্লা রোড (করিম পাটওয়ারী সড়ক) এবং স্টেডিয়াম রোড হয়ে শপথ চত্বর, নতুনবাজার, কালীবাড়ি, চৌধুরী ঘাট ও বড় স্টেশন এলাকা পর্যন্ত। যা খুবই ছোট্ট এরিয়া। এসব এলাকায় যাতায়াতে যে সড়কগুলো ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে করিম পাটওয়ারী সড়ক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, হাজী মহসিন রোড, জেএম সেনগুপ্ত রোড, মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক (সাবেক কুমিল্লা রোড), পালবাজারের সামনে সড়ক, স্ট্র্যান্ড রোড এবং বড় স্টেশন লঞ্চঘাটমুখী নিশি রোড ও মাদ্রাসা রোড। এ সড়কগুলো এমনিতেই খুবই সরু এবং একইভাবে সড়কগুলো খুবই ব্যস্ততম। এ সড়কগুলোতেই অটোবাইকের উপদ্রব থাকে সবচে বেশি। দীর্ঘ সময়ের যানজট থাকে সড়কগুলোতে। বিশেষ করে কালীবাড়ি তথা ওয়ানমিনিট মোড় থেকে চৌধুরী ঘাট পর্যন্ত, হকার্স মার্কেটের সামনে থেকে শপথ চত্বর এলাকা, ঘোষপাড়া পুল থেকে শপথ চত্বর এলাকা এবং মাতৃপীঠ স্কুল সংলগ্ন চৌরাস্তা মোড় সর্বক্ষণ থাকে যানজট তথা অটোবাইকের দখলে। যে কোনোদিন উল্লেখিত সড়কগুলো ঘুরলেই অটোবাইকের এই আধিক্য এবং উপদ্রব দেখা যাবে। আর এ অবস্থা দেখে চাঁদপুরের বর্তমান পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির পিপিএম জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় এবং ঢাকা থেকে একজন সিনিয়র সাংবাদিক চাঁদপুরে বেড়াতে এসে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক সৌজন্যমূলক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে ব্র্যান্ডিং হলেও শহরের অবস্থা দেখে তো মনে হলো ‘অটোর বাড়ি চাঁদপুর।’
এদিকে বৈধের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অবৈধ অটোবাইক যে চাঁদপুর শহরে রয়েছে তার জ¦লন্ত উদাহরণ দেখা গেলো মাত্র ক’দিন আগে নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনী যখন চাঁদপুর শহরে আসলো তখন। ৩০ ডিসেম্বরের আগে যে দিন থেকে সেনাবাহিনী চাঁদপুর শহরে মহড়া দেয়া শুরু করলো, সেদিন থেকেই দেখা গেলো শহরের ভিন্ন রকমের এক চিত্র। সে ক’দিন দেখা গেলো, আগে যে পরিমাণ অটোবাইক শহরে দেখা গেছে তার অর্ধেকও রাস্তায় নেই। হঠাৎ যেনো কোথাও উধাও হয়ে গেছে অর্ধেকেরও বেশি অটোবাইক। ভোটের দিন ছিলো রোববার, এর আগে বুধবার থেকে দেখা গেছে সেই ভিন্ন রকমের চিত্র। এ যেনো নতুন এক চাঁদপুর শহর। অবস্থা দেখে তখন মনে হলো শুধু অবৈধ গাড়িই নয়, মনে হলো অবৈধ কোনো মানুষও তখন চাঁদপুর শহরে ছিলো না। কিন্তু নির্বাচন শেষে সোম-মঙ্গলবার থেকে সেই পুরানো অবস্থায় ফিরে আসলে চাঁদপুর শহরের চিত্র। আবার শহরের সকল সড়ক অটোবাইকের দখলে। এ ভোগান্তি ও দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় চাঁদপুরবাসী। নিয়ন্ত্রণহীন অটোবাইকের দৌরাত্ম্য থেকে চাঁদপুর শহরের মানুষকে মুক্তি দিতে করণীয় ঠিক করতে পৌর কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সাংবাদিক ও শহরের গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরামর্শ সভা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন ভুক্তভোগী জনগণ। আর এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন চাঁদপুরবাসী।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ