ডাঃ দীপু মনির বাসায় হামলা : আহত অর্ধশত
পাল্টা হামলায় শেখ মানিকের বাড়ির গেট ভাংচুর
চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ দীপু মনির বাসায় বিএনপির মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আবার পাল্টা হামলায় বিএনপির প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসার গেট ভাংচুর হয়েছে। এ সময় বিএনপিরও প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। তবে এ ঘটনার সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাঃ দীপু মনি বাসায় ছিলেন না। তিনি তাঁর পূর্ব নির্ধারিত গণসংযোগ কর্মসূচি বাগাদী ইউনিয়নে ছিলেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নিজেই হামলার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি তখন তার বাসায় অবস্থান করছিলেন। সংবাদ শুনে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেগম মসজিদ এলাকার বেশ কিছু দোকানদার থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যারা আহত হয়েছেন তারা হচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদ ইকবাল নিটুু, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম রকি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্বাচন সমন্বয় টিমের সদস্য ফয়সাল আহমেদ, আসিফ রায়হান, ছাত্রলীগ নেতা ইউছুফ গাজী মুন্না, শুভ, ইয়াছিন, পাবেল, যুবলীগ নেতা তনু মোল্লা, মনির, এনায়েত, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাখাওয়াত খান, নূরুল হায়দার সংগ্রাম, ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত সর্দার, আরাফাত গাজী, রেজাউল কবির রেজা প্রমুখ। এদের মধ্যে ওয়াহিদ ইকবাল নিটু, রেজাউল ইসলাম রকি ও শুভ গুরুতর আহত হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তার বাসা থেকে গাড়ির বহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার জন্যে বের হন। বাসা থেকে বের হয়ে তার গাড়ির বহর নতুন বাজারের দিকে যেতে নিলে পথে পুলিশ তাদের গাড়ির গতিরোধ করে গাড়ি তল্লাশি করে। এ সময় বেশ কিছু মার্বেল ও গুলাইলসহ একটি মাইক্রো জব্দ করে পুলিশ। তখন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিমকে পুলিশ আটক করার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিমকে আটকের প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে অ্যাডঃ সলিম উল্যাহর সাথে শেখ মানিকও থানায় যান। এদিকে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক আটক হয়েছে বলে গুজব রটে। এ গুজব বিএনপির নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে শত শত নেতা-কর্মী থানার সামনে ও আশপাশে জড়ো হয়। শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক থানায় অনেকক্ষণ অবস্থান করার পর থানা থেকে বের হয়ে আসেন। তখন থানার সামনে রাস্তায় অবস্থান নেয়া নেতা-কর্মীদের শান্ত করেন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। পরে তিনি সকলকে নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে মেথা রোড হয়ে তার বাসার দিকে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী বেগম মসজিদ এলাকার কয়েকজন দোকানদার জানান, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মীর মিছিলটি যখন শেখ মানিকের বাসার ভেতরে প্রবেশ করেছিলো, তখনই ওই মিছিল থেকে ধর ধর করে ডাঃ দীপু মনির বাসার দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন দীপু মনির বাসার নিচে চাঁদপুর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিমুল হাসান সামনু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আবদুল মোতালেব, বর্তমান সভাপতি আতাউর রহমান পারভেজ, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রবিন পাটওয়ারীসহ প্রায় ১৫ জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বসে নিজেদের মধ্যে আলোচনারত ছিলেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ বিএনপির মিছিল থেকে তাদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ওই নেতা-কর্মীরা বিচলিত হয়ে পড়েন। অবশ্য বিএনপির কিছু নেতা তখন তাদের কর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। মুহূর্তেই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া করে। ধাওয়ার মুখে বিএনপির কর্মীরা শেখ মানিকের বাসার ভেতর চলে যায়। তখন মানিকের বাসার সামনে গেইট বন্ধ করে বিএনপির কর্মীরা ভেতর থেকে দীপু মনির বাসা লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। পাল্টা জবাবে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্র্মীরাও ইট ছুড়তে থাকে। এসব ইটের আঘাতে শেখ মানিকের বাসার গেটের গ্লাস ভাংচুর হয়। এভাবে প্রায় ২০ মিনিটের মতো উভয় পক্ষ সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ঘটনাস্থলে আসে। তখন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী ও মডেল থানার অফিসার ইনচার্জও ছিলেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই কিছুক্ষণ পরপর মানিকের বাসার ভেতর থেকে ইট ছুড়তে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সদর এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে আসে। বিকেল পর্যন্ত এ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এদিকে সন্ধ্যায় অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিমকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য
চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন জানান, আমরা সকালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গাড়ি তল্লাশি করি। তখন একটি মাইক্রোতে বেশ কিছু মার্বেল এবং গুলাইল পাওয়া যায়। সেটি আমরা জব্দ করি। এ সময় অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিমকে একটি মামলার আসামী হিসেবে আটক করা হয়েছিলো। পরে তিনি এ মামলায় যে জামিন নিয়েছেন সে জামিনের রি-কল দেখানোর পর সন্ধ্যায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
বিএনপি নেতা অ্যাডঃ সেলিমের বক্তব্য
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম বলেছেন, আমাদের প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ আমাদের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে প্রার্থীর বাড়ির ভেতরে ঢুকতেছিল। এমন সময় দীপু মনির বাসার সামনে থেকে আমাদের মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমাদের বহু নেতা-কর্মী আহত হন এবং আমাদের প্রার্থীর বাড়ির গেইট ব্যাপক ভাংচুর হয়।
ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মোতালেব ও বর্তমান সভাপতি আতাউর রহমান পারভেজ জানান, আমরা আমাদের প্রার্থী ডাঃ দীপু মনি আপার বাসার নিচে পূর্ব সাইডে বসা ছিলাম। বেলা প্রায় দেড়টার দিকে বিএনপির প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে একটি মিছিল পশ্চিম দিক থেকে এসে তার বাসায় ঢুকার মুহূর্তে হঠাৎ আমরা দেখলাম মিছিল থেকে দীপু আপার বাসার দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ছে। আকস্মিক এমন ঘটনায় আমরা হতবাক হয়ে যাই। পরে আমরা এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। তারা আরো বেশি করে ইট ছুড়তে থাকে। এরই মধ্যে খবর পেয়ে আমাদের যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চলে আসলে বিএনপির কর্মীরা শেখ মানিকের বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেইট বন্ধ করে দিয়ে ভেতর থেকে বৃষ্টির মতো ইট ছুড়তে থাকে আমাদের দিকে। এতে আমাদের প্রায় ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। এর মধ্যে কয়েজকজন গুরুতর জখম হয়।
বিএনপির যারা আহত হলেন
বিএনপি নেতাদের থেকে জানা গেছে, তাদের যে ক’জন আহত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নাছির উদ্দিন আকাশ, আনোয়ার মজুমদার, রাসেল শেখ, ফখরুল ইসলাম, রাজু বেপারী, হোসেন গাজী, রিপন গাজী, নাদিম খান, মোজাহিদ প্রমুখ।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ