• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর-৩ আসনে মহাজোট প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নিজের পরাজয় আঁচ করতে পেরেই জঘন্য মিথ্যাচার করছে, তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি : ডাঃ দীপু মনি এমপি

প্রকাশ:  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ দীপু মনির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। গতকাল শনিবার চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডাঃ দীপু মনি ছাড়াও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মুখ্য দু’জন এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত রায় নন্দী বক্তব্য রাখেন। এছাড়া জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
    এ সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুর-৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক মহাজোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করেছেন সে সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। একই সাথে ওইসব মিথ্যাচার ও বানোয়াট বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মহাজোট নেতৃবৃন্দ।
    গত শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ঐক্যফ্রন্টের সাংবাদিক সম্মেলনে যে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তার প্রতিটি অভিযোগ খ-ন করেছেন ডাঃ দীপু মনি এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ। ডাঃ দীপু মনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তাদের সংবাদ সম্মেলনে যে সব অভিযোগ করেছেন তা জঘন্য মিথ্যাচার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছ্ইু নয়। তিনি বলেন, আমি যেদিন দলের মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে চাঁদপুর আসি, তখন লঞ্চঘাটে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগম হয়েছে। জনগণ নিজ থেকেই ¯্রােতের মতো এসেছে। এটি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কোনো প্রোগ্রাম ছিলো না। আমি জনগণকে সাথে নিয়ে লঞ্চঘাট থেকে পায়ে হেঁটে কালীবাড়ি পর্যন্ত এসেছি। এরপর আমাদের দলের অস্থায়ী কার্যালয়ের ভেতরে নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছি। অথচ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কী জঘন্যভাবে মিথ্যা বলেছে যে, আমরা নাকি সেদিন রেলগেট বন্ধ করে সমাবেশ করেছি। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন, তারা নাকি ৪/৫ জন লোক একসাথ হতে পারছেন না। এটাও যে কত জঘন্য মিথ্যাচার তা চাঁদপুরের পত্রিকাগুলোই প্রমাণ। পত্রিকায়ই তো দেখা যায় তাদের নেতা-কর্মীরা দলবেঁধে প্রার্থীসহ গণসংযোগ করছেন, সভা-সমাবেশ করছেন। তার পোস্টার-ব্যানারও সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। এমনিভাবে দীপু মনি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের লিখিত সকল অভিযোগ খ-ন করে তা প্রত্যাহার করে নিতে তার প্রতি অনুরোধ জানান।
    দীপু মনি বলেন, আসলে কোনো অভিযোগ করা উদ্দেশ্য নয়, তারা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অন্য কিছু খুঁজছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মিথ্যা, অমূলক নানা কল্পকাহিনী তৈরি করে একটি ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করা, যাতে পরবর্তীতে এ নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারে। কারণ, তিনি (শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক) ইতঃমধ্যে তার পরাজয় আঁচ করতে পেরেছেন। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই আগ থেকে অপপ্রচার এবং যত ধরনের মিথ্যাচার আছে তা চালাচ্ছেন। পরাজয়ের আশঙ্কা তাদের মধ্যে যে নাড়া দিচ্ছে, সে জন্য আগ থেকেই তারা মিথ্যাচার করছে। আমরা যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই জনগণের চমৎকার সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু তারা তো সেভাবে সাড়া পাচ্ছে না। জনগণ যে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছে তারা তা বুঝে ফেলেছে। এ জন্যই তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আর নানা মিথ্যাচার ও কল্পকাহিনী তৈরি করছে।
    ডাঃ দীপু মনি তাঁর নিজের এবং দলের স্বচ্ছ ও ভদ্র রাজনীতির কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা তথা আমার দল আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে সর্বদা সচেষ্ট আছি। আর এর বিপরীতে কেউ যদি মিথ্যাচার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে কলুষিত করতে চায়, তাহলে জনগণই এর জবাব দেবে। আমাদের ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক নয়। দীপু মনি বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দায়িত্বশীল এবং সংবিধান ও আইন রচনাকারী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম, বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার দায়িত্বে রয়েছি। আমি আইন, নির্বাচন আচরণবিধিসহ সকল কিছুতে অনেক বেশি সচেতন। আমি এমন একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছি, যে পরিবারটি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পেয়েছে। আমার বাবা মরহুম এমএ ওয়াদুদ পাটওয়ারী একজন ভাষা সৈনিক এবং ইত্তেফাক পত্রিকা প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এই ইত্তেফাক পত্রিকার একদিনের কাগজের টাকা আমার বাবা তাঁর রক্ত বিক্রি করে জোগাড় করেছেন। আর না হয় পরদিন পত্রিকাটি বের হতো না। তিনি নিজে সাইকেল চালিয়ে ইত্তেফাক বিলিও করেছেন। কারণ, তখন ইত্তেফাকই ছিলো বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের একমাত্র মুখপত্র। এ সব কিছু আমার বানানো কথা নয়। এগুলো বিশিষ্ট কলামিস্ট জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখনি থেকে পাওয়া। অতএব আমার এবং আমার দলের প্রার্থীদের সম্পর্কে ভেবে চিন্তে মন্তব্য করতে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর প্রতি অনুরোধ করবো।
    দীপু মনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরা পুরাণবাজার কবরস্থান রোডে নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। আজ (গতকাল) ডাক্তারদের একটি টিম বড় স্টেশন ও ৫নং ঘাট এলাকায় নৌকার গণসংযোগকালে বিএনপি নেতা আলী আহম্মদ সরকারের নেতৃত্বে বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের পোস্টার তারা ছিঁড়ে ফেলছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেণ, আপনারা সচেতন, আপনারা সব কিছুই দেখছেন। আমরা সত্যের পথের পথিক, আপনারাও সত্যের পথের পথিক। আপনারা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।
    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, প্রত্যেক নির্বাচনের পূর্বেই সুষ্ঠু পরিবেশের জন্যে অভিযান চালানো হয়। যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী এবং যাদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। আর এটিকে নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা। সেই অশুভ শক্তি দেশকে আবার পেছনে নিয়ে যেতে যড়যন্ত্র করছে। তাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
    চাঁদপুর-৩ আসনে মহাজোটের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি দায়িত্বশীল দল। আমরা আইনের শাসনে বিশ^াস করি। আমরা কখনো কারো উপর আক্রমণ করি না, আমরা আক্রান্ত হলে প্রতিহত করি। যে সব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্বাচন থেকে সরে যেতে নানা অজুহাতমাত্র।
    নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেছেন. চাঁদপুরে খুব সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষ থেকে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক।
    এই সাংবাদিক সম্মেলনে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সকল সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। 

সর্বাধিক পঠিত