‘চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আত্মঘাতী নৌ কমান্ডো শাহজাহান কবির বীর প্রতীকের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এ মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের মত গর্বিত জাতি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। আমরা প্রত্যেকে যদি প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সঠিক দায়িত্বটুকু পালন করি, তাহলে এ দেশ একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলি। কিন্তু তারপরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করছিল। তাদের সে খবর তৎকালীন সরকার রাখেনি। অথচ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে ভাতাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা গর্বিত জাতি বীরের জাতি। আমরা ভাষার জন্যে যুদ্ধ করেছি। ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা ওই হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করতে পেরেছেন। তাই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে অনেক কিছু হতে পারবো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবো না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ বার বার হবে না। মুক্তিযুদ্ধ একবারই হয়েছে। বিগত দিনে সরকারের দায়িত্বে থাকা দলগুলো এদেশকে লুণ্ঠন করেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে কিছু করে নাই। আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যে কাজ করা। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে পর্যাপ্ত করেছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রকার ট্যাক্স মাফ করে দিয়ে তাঁদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।
শহীদ পরিবারের সন্তান ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খানের সভাপতিত্বে এবং চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক ও চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাতের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকলে তাঁদের কাছ থেকে বর্তমান প্রজন্মের সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা ভূমিকা রেখেছে বলেই আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, নতুন বাজার লন্ডনঘাট এলাকায় পাক বাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলো চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা। ঐ সময়কার পাক বাহিনী এ খবর পাওয়ার পর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইব্রাহীম বিএ বিটিসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তিনি বলেন, আমি গর্বিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয় হতে পেরে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করবো ৩০ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হবে ও ক্ষমতায় যাবে। মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই স্বপ্নই বাস্তবায়ন করবে আওয়ামী লীগ সরকার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, শাহজাহান কবির বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একটি বই উপহার দেয়ায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হতে পেরে নিজেকে সর্বদা গর্বিত মনে করি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সাঁতারু সানাউল্লা খান। কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিনউল্লাহ পাটওয়ারী বীর প্রতীকের স্ত্রীর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক শাহজাহান কবির তাঁর রচিত গ্রন্থটির পরিচিতি লিখিত আকারে তুলে ধরে সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্থানীয় ও জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও সুধীজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ৪১৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ নামক বইটি প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়ক।