হাজীগঞ্জে দু গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা
গত কয়েকদিন ধরে হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দসার গ্রামে ঘটছে একের পর এক সংঘর্ষ। সর্বশেষ গত শনিবার এক পক্ষের এক যুবককে প্রতিপক্ষের লোকেরা কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে এখন আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক শান্ত রয়েছে বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মান্নান।
রাজারগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রহিম বকাউল (৭৫) জানান, একই ইউনিয়নের সিঙ্গাইর গ্রামের বকাউল বাড়ির মৃত আবুল বাসার বকাউলের ছেলে জিসানের (৩০) নেতৃত্বে শুভ খান (২২), রবিউল (৩০), অমি (২০), হাছান (২৬), হামজা (২০), মিজান (২৮), ডেবিট বাশারসহ (২৫) একদল যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত দু তিন বছর ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে।
তিনি বলেন, মাদক বিক্রি ও সেবনসহ উপরোক্ত ছেলেরা পথে-ঘাটে এলাকার লোকজনকে আটকিয়ে জোরপূর্বক টাকা ও মোবাইল রেখে দেয়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অথবা ছেলে-মেয়ে একসাথে হেঁটে গেলে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে এবং আটকিয়ে টাকা আদায়, চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে তারা। এদের ভয়ে গ্রামের মেয়ের স্কুলে যেতে চায় না। এমনকি স্কুলেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এমন মেয়েও এলাকায় রয়েছে। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে তারা।
রহিম বকাউল আরো জানান, জিসান তার দলবলকে সাথে নিয়ে কয়েকদিন আগে এলাকার জামাই পপনকে মারধর করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এ বিষয়ে এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে তারা এলাকার মানুষকে দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে এলাকার সবাই একজোট হয়ে জিসানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং পুলিশকে জানায়। যার ফলে শুক্রবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ আফজাল হোসেনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা এখানে এসেছেন এবং ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাদীকে বিষয়টি দেখার জন্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জিসান উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, গত তিন বছর আগে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ওই মামলা থেকে খালাস পাই। তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলাকারীদের একজনকে মামলা করার কারণ জানতে চাইলে সে বিস্তারিত বলে দেয় এবং এই মিথ্যা মামলার সাথে কারা জড়িত তা জানায়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাইলে ওই এলাকার মানুষ একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটায়।
তিনি বলেন, এছাড়া সম্পত্তিগত বিরোধের ফলে পপনের সাথে আমার কথা বাদানুবাদ হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর জনৈক আউয়াল মিয়ার সাথে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা আমি দেখে স্থানীয়দের মোবাইলে অবহিত করি। তারপর ওই এলাকার লোকজন আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এবং তারা একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ৫ ডিসেম্বর আমাদের ঘরে হামলা চালায়। এ ঘটনায় আমার মা সীমা বেগম বাদী হয়ে ৬ ডিসেম্বর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুল হাদী মিয়া জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ আফজাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেন। তিনি এলাকার গণ্যমান্যদের সাথে নিয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শনিবারের ঘটনায় আহত হাছান মামলা করেছেন। আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মোঃ আফজাল হোসেন জানান, আমি ওই এলাকায় গিয়ে দু’পক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করায় এলাকার গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছি।