চাঁদপুর মুক্ত দিবসে ২৭তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
আমি আপনাদের দোয়া চাই যেনো স্বপ্নের চাঁদপুর গড়তে পারি : ডাঃ দীপু মনি এমপি
৮ ডিসেম্বর ‘চাঁদপুর মুক্ত দিবস’ উদ্যাপন ও ২৭তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের লেকের উপর স্থাপিত স্বাধীনতার স্মৃতি স্তম্ভ ‘অঙ্গীকার’-এর সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে চাঁদপুরের গৌরব ও ঐতিহ্যের ২৭তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিজয় মেলার প্রধান উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। আর বিজয় মেলার পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ। পরে ডাঃ দীপু মনিসহ অন্য অতিথিরা অঙ্গীকার বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধান অতিথি চাঁদপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় মেলার প্রধান গেটে ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন।
বিজয় মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় চাঁদপুর মুক্ত দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০১৮-এর উদ্বোধনী আলোচনা সভা। বিজয় মেলার উপদেষ্টা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের সভাপ্রধানে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডাঃ দীপু মনি এমপি। উদ্বোধকের বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও বিজয় মেলা স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান (চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্বে)। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ আহম্মদ মজুমদার, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ¦ রোটাঃ অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন পাঠান, ভাইস চেয়ারম্যান অজিত সাহা,
মেলার সাহিত্য ও প্রকাশনা পরিষদের আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বডুয়া, সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বায়ক তপন সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক কৃষ্ণা সাহা, অভ্যর্থনা পরিষদের সদস্য সচিব ইসমত আরা সাফী বন্যা, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি সামীম আহমেদ খানসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিজয় মেলা স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ ও মহাসচিব হারুন আল রশীদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের কন্যা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ ডাঃ দীপু মনি এমপি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাত থেকে যেদিন চাঁদপুর মুক্ত হয়েছে, আমরা সে দিনটি আজকে পালন করছি। মেলার আয়োজকরা এ দিনটিতে আমাকে আহ্বান জানিয়েছে। তাই আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি রাজনীতির লোক। যেখানে যাব কিংবা দাঁড়াবো সেখানে রাজনীতির কথাই আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। আমাদের বিজয়, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এটা কি রাজনীতি নয়? জাতির পিতার ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীনতা। যারা বলে বিজয় মঞ্চকে রাজনৈতিক মঞ্চ করা যাবে না, তারা রাজনীতিই বুঝেন না। আমাদের চলার শক্তি ও সাহস যে দল যুগিয়েছে আমরা সেই দলের সদস্য। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে বাংলাদেশ তৈরি করতে যুদ্ধ করেছিলেন, আজকে সে দিকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আর কোনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক চাই না। এসব আর যেনো ছোবল মারতে না পারে সেজন্য সবার দৃষ্টি রাখতে হবে। আমি আপনাদের দোয়া চাই যেনো স্বপ্নের চাঁদপুর গড়তে পারি।
উদ্বোধকের বক্তব্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও বিজয় মেলা স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ বলেন, ৮ ডিসেম্বর কেনো উদ্যাপন করা হয় তা অনেক প্রজন্মই জানে না। সে দিন বাংলার দামাল ছেলেরা চাঁদপুরকে হানাদার মুক্ত করেছিল। আমরা যুদ্ধ করে চাঁদপুরকে শত্রু মুক্ত করি। ১৯৯২ সাল থেকে এই মাঠে বিজয় মেলার বীজ বপণ করা হয়। এ মেলায় অনেক দেশ বরেণ্য ব্যক্তিরা এসে এই মঞ্চে স্মৃতিচারণ করেছেন। এই মাঠে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ হয়েছে বলে মাঠটি স্মৃতি বিজড়িত মাঠ হওয়ায় এখানে বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শওকত ওসমান বলেন, বর্তমান সরকার এ বছরই প্রথম বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ৫ হাজার টাকা করে ‘বিজয় উৎসব ভাতা’ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। বিজয় মেলা মঞ্চ করা হয়েছে প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার জন্যে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে আপনাদেরকে জানানোর জন্যে ৩০ ডিসেম্বর আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে স্ব স্ব ভোট প্রদান করে আগামী দিনগুলোতে দেশ পরিচালনার জন্যে একটি সরকার গঠন করবেন। ২৭ বছর যাবৎ এ বিজয় মেলা উদ্যাপন করা হচ্ছে। আগামীতেও এ মেলা হবে। বাংলাদেশের কোনো জেলাতে এমন সুন্দর পরিবেশে বিজয় মেলা করা হয় কি-না তা আমাদের জানা নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শুরুতেই চাঁদপুরের বিজয় মেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম, এখনও আছি। তিনি বলেন, একসময় বাঙালি জাতি ছিল নিপীড়িত, নির্যাতিত ও ঘুমন্ত জাতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই জাতিকে জাগ্রত করেছিলেন, তাদের জাগ্রত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন করেছেন। এই স্বাধীনতা অনেক মূল্য দিয়ে কেনা। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ বিশ^াস করত না। তা সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম তাঁর ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ প্রবন্ধে লিখেছেন। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি। তারা জামায়াতে ইসলামকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছে। তখন যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দিয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরি করব।
আলোচনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০১৮-এর উদ্যাপন পরিষদ থেকে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘বিজয়’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরে অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী অনলাইন রক্তদাতা সংস্থা ‘জীবনদীপ’-এর আলোচনা এবং মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক কমান্ড চাঁদপুর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। অগণিত দর্শক মেলা মাঠে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং মেলার কার্যক্রম উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, ১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০১৮-এর শুভ সূচনা হয়েছে।