• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ : চাঁদপুর জেলা

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একুশ প্রার্থী এখন আরেক যুদ্ধে

প্রকাশ:  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর জেলার পাঁচটি আসনে এখনো বড় দুটি দল বা জোটের প্রায় প্রতিটি আসনে একের অধিক প্রার্থী রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক এগিয়ে। তবে আওয়ামী লীগের দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন এই একাধিক প্রার্থীর গ্যাঁড়াকলে। এই দুজন আওয়ামী রাজনীতিতে যেমনি বেশ শক্ত অবস্থানে, তেমনি দেশব্যাপী তাঁরা নানাভাবে বেশ আলোচিত।
    মনোনয়ন বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থী তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে, পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ২ জন করে ছয়জন, আর পাঁচটিতেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ২-৩ জন করে মোট ১১ জন । আবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন বৃহৎ জোটের হিসেব করলে এ সংখ্যা হয় ১৫। তাই বলা যাচ্ছে চাঁদপুর জেলার পাঁচটি আসনের পাঁচটিতেই একক প্রার্থীর জন্যে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। দোটানার মধ্যে থাকা এসব প্রার্থীর এখন ঘুম হারাম। তারা এখন আরেক যুদ্ধে নেমেছেন।
    এবারের নির্বাচনটি চাঁদপুরের প্রেক্ষিতে বলা যাচ্ছে বেশ আলোচিত। আর এ আলোচনা ও সমালোচনা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে। এ দিক দিয়ে অবশ্য বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তবে জেলার গ-ি ছাড়িয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। এঁরা হচ্ছেন চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং চাঁদপুর-২ আসনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। যিনি বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
    ডা. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন একই দলের মোঃ গোলাম হোসেন (এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান)। উভয়কেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ একজনকেই রাখা হবে। আর সেটি দেখার জন্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন বলতে গেলে দুজনের মধ্যে ভাগ্য পরীক্ষা চলছে। এটিকে মনোনয়ন টিকিয়ে রাখার যুদ্ধও বলা যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত কার প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি পড়ে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
    অপরদিকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম পড়ে গেছেন আইনী মারপ্যাঁচে। বাছাইতে তাঁর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করলেও তাঁর দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। কারণ, ইতঃমধ্যে তাঁর মনোনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রীট করা হয়েছে। একই সাথে মায়া চৌধুরীর নিজ আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অপর প্রার্থী অ্যাডঃ মোঃ নূরুল আমিন রুহুল গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইর দিন দুপুর আড়াইটায় জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদনে করেছেন মায়া চৌধুরীর মনোনয়নের বৈধতা প্রসঙ্গে। তিনি এ আবেদনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর সপক্ষে অ্যাডঃ রুহুল আমিন নানা ব্যাখ্যাসহ অ্যাটর্নী জেনারেলের উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। তাই মায়া চৌধুরী নির্বাচন করতে যোগ্য কি অযোগ্য সেটি এখন আদালতের রায়ের ওপর নির্ভরশীল।
    চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দু’জন। এঁরা হচ্ছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান। এখানে শামছুল হক ভূঁইয়া ‘ঋণখেলাপী’ এমন অভিযোগে তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় সাংবাদিক শফিকুর রহমানকে ২৭ নভেম্বর রাতে ‘বিকল্প’ প্রার্থী হিসেবে  মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন শামছুল হক ভূঁইয়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেন রিটার্নিং অফিসারের কাছে। রিটার্নিং অফিসার অনেকটা সময় নিয়ে উভয় দিকে কাগজপত্র ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন। তাই এ আসনেও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী সর্বশেষ কে হচ্ছেন তা শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
    এ তিনটি ছাড়া বাদবাকি দুটি তথা চাঁদপুর-৩ ও চাঁদপুর-৫ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে এখন আর কোনো প্রতিযোগিতা নেই, টেনশন নেই। এ দুটি আসনে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
    এদিকে দলগত প্রার্থী নিয়ে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনেই বিএনপি বেশ বেকায়দায় আছে। প্রত্যেক আসনেই দলের মনোনয়ন পাওয়া একের অধিক প্রার্থী রয়েছেন। এর বাইরে বিএনপির সাথে নির্বাচনী ভোটভুক্ত দল থেকেও প্রার্থী রয়েছেন তিনটি আসনে পাঁচজন। এর উপর অনেকটা ‘বজ্রপাতের’ মতো আঘাত হেনেছে ফরিদগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়নে। এ আসনে বিএনপি থেকে তিনজনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও মূল প্রার্থী হিসেবে এম এ হান্নাকেই সবাই ধরে নিয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপির সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ ২ ডিসেম্বর দলের মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন এবং এটি ঐদিনই দ্রুত জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৌঁছান। কিন্তু ততক্ষণে বাছাইতে তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির চিঠি সাথে জমা না দেয়ায়। তারপরও এ নিয়ে লায়ন হারুনের সংশ্লিষ্ট আপীল কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল করার সুযোগ রয়েছে। কারণ, তাঁর দলীয় মনোনয়নের চিঠি জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যে ডেক্স পৌঁছানো হয়েছে সেখানে সময় লেখা ২/১২/২০১৮ খ্রিঃ, সময় ৪টা ৫৭ মিনিট। যা সর্বশেষ সময়ের তিন মিনিট আগে। তাই ফরিদগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়ন আদালতের সিদ্ধান্তের উপর, যদি লায়ন হারুন এ নিয়ে আপীল করেন।
এছাড়া চাঁদপুর-৩ আসনেও শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক যে বিএনপির একক প্রাথী তা একেবারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এ আসনে বিএনপির সাথে জোটের কারণে নাগরিক ঐক্য থেকে অ্যাডঃ ফজলুল হক সরকারকেও ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আর নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির কাছে যে ক’টি আসন জোর দিয়ে চাচ্ছেন তার মধ্যে চাঁদপুর-৩ অন্যতম। এছাড়া চাঁদপুর-১, চাঁদপুর-২ এবং চাঁদপুর-৫ আসনে এখনো বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নিজেই। এ তিনটি আসনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী আছেন হেভিওয়েট ছয়জন। এঁরা হচ্ছেন-চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনম এহছানুল হক মিলন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মজুমদার, চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ড. জালাল উদ্দিন ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম নূরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা, চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে বিএনপির তিনবারের সাবেক এমপি এম এ মতিন ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক। সবশেষে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে কারা থাকছেন তা দলটির হাইকমান্ডের উপর নির্ভর করছে। এ জন্যে পাঁচটি আসনেই বিএনপির মনানয়ন পেয়েও এখন একক প্রার্থী হওয়ার যুদ্ধে এবং ভাগ্য পরীক্ষায় আছেন তাঁরা।

 

 

সর্বাধিক পঠিত