সিজারিয়ান অপারেশনের উপর ভর করে শাহরাস্তিতে বেড়েই চলছে বেসরকারি হাসপাতাল
শাহরাস্তি উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার জনগণের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ দীর্ঘদিন যাবৎ সেবা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় এ হাসপাতালটির স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে রোগীদের মাঝে রাগ-ক্ষোভ থাকলেও এ হাসপাতালটির উপর নির্ভর করা ব্যতীত অন্য কোনো উপায় ছিল না। চাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ার ফলে এখানকার অনেক রোগীকেই ডাক্তারগণ চাঁদপুরে না পাঠিয়ে কুমিল্লায় প্রেরণ করে থাকেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহরাস্তি উপজেলার জনগণের আস্থার জায়গা কুমিল্লা আর যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তারা ঢাকায় পাড়ি জমান। শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ ঘিরে বহু বছর ধরে বেশ কিছু প্যাথলজি গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এ সকল প্যাথলজি রিপোর্ট নিয়ে রোগীদের মাঝে আস্থার অভাব থাকলেও অন্য কোনো উপায় না থাকায় এ সকল প্যাথলজিতেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। প্যাথলজি মালিক সমিতির সূত্র মতে, শাহরাস্তি উপজেলায় বর্তমানে প্যাথলজি রয়েছে ১৮টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে আশপাশ ছাড়া প্যাথলজি রয়েছে দোয়াভাঙ্গা, কালিয়াপাড়া, বেরনাইয়া, উয়ারুক, চিতোষী, উঘরিয়া ও খিলা বাজারে। এ সকল প্যাথলজিতে রোগীদের আকৃষ্ট করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা হয়। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি রোগীগণ ঐ প্যাথলজিত পরীক্ষা করতে বাধ্য হন।
শুধু তাই নয়, এ সকল প্যাথলজির রিপোর্ট কুমিল্লা কিংবা ঢাকায় দেখানো হলে ডাক্তারগণ এ সকল রিপোর্টের উপর ভর না করে পুনরায় রিপোর্ট করার জন্যে প্রেরণ করেন। এভাবে রিপোর্ট করাতেই রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যে সকল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাহরাস্তিতে আসেন তারাই ঢাকাতে এ সকল রিপোর্ট পাত্তা দেন না। শুধু তাই নয়, রিপোর্টগুলোর মান নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগে। যারা এ রিপোর্ট করেন, তাদের কোনো যোগ্যতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন এলাকাবাসীর মনে। শাহরাস্তির প্রায় প্রতিটি প্যাথলজিতে এঙ্-রে একটি নিয়মিত পরীক্ষা। এঙ্-রে মেশিন ছাড়া যেন প্যাথলজি ব্যবসা বেমানান। কিন্তু প্রতিটি প্যাথলজিতে এঙ্-রে করার পর রোগীকে শুধু ফিল্ম বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ ফিল্ম নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হলে ডাক্তারগণ ফিল্ম দেখে ধারণাপূর্বক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে ফিল্ম দেখে ডাক্তার কোনো কিছু বুঝতে না পারলে রিপোর্ট করিয়ে আনতে বলেন। রিপোর্ট করাতে গেলে আবার প্যাথলজিতে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়। বলা হয় অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা কিংবা কুমিল্লা থেকে রিপোর্ট করিয়ে আনা হবে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। রিপোর্ট ছাড়া ফিল্মের কী মূল্য রয়েছে তা জানেন না প্যাথলজি মালিকরা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মানিক লাল মজুমদার জানান, প্যাথলজিগুলোতে তদারকির দায়িত্ব সিভিল সার্জনের। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। প্যাথলজিগুলোতে অনিয়ম হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কিছু করার থাকে না। তিনি আরও জানান, বেসরকারি প্যাথলজিগুলোতে সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা টেকনিশিয়ান থাকতে হবে। কিন্তু কিছু প্যাথলজিতে টেকনিশিয়ান থাকলেও বাকিগুলো নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
প্যাথলজির পাশাপাশি গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে শাহরাস্তি উপজেলায়। হাসপাতালগুলোর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো সিজারিয়ান অপারেশন। সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো অপারেশনের ব্যবস্থা নেই হাসপাতালগুলোতে। শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েসিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সফলতা অর্জন করায় পুরস্কারে ভূষিত হয় হাসপাতালটি। কিন্তু বর্তমানে এখানে সিজারিয়ান অপারেশন কমে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে ১৬, জুলাইতে ১৯ এবং আগস্টে ১৬টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্।ে পাশাপাশি শাহরাস্তি জেলারেল হসপিটালে মাসিক গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে। মেহের কালীবাড়ি বাজারে অবস্থিত শাহরাস্তি মেমোরিয়াল হাসপাতালে তথ্য নিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সকল তথ্য মালিক পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানা যায়। তবে অভ্যর্থনায় থাকা এক নারী কর্মীর কাছ থেকে জানা যায়, এ হাসপাতালে মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে। শাহরাস্তি উপজেলার উয়ারুকে অবস্থিত মেডিল্যাব হাসপাতাল অনুমোদনের ঝামেলা শেষ করে কার্যক্রম চলিয়ে যাচ্ছে। এ হাসপাতালে প্রতিদিন হচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশন। নতুন করে যাত্রা শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে শাহরাস্তি গেইট দোয়াভাঙ্গা নিউ অ্যাপোলো হাসপাতাল। ধারণা করা হচ্ছে এ হাসপাতালটিও সিজারিয়ান অপারেশনের উপর নির্ভরশীল হবে।
শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েসিজারিয়ান অপারেশন করতে নামমাত্র টাকা খরচ হয়ে থাকে। এখানে রয়েছে সরকারি মূল্যবান মেশিন। আর বেসরকারি হাসপাতালে এ অপারেশন করতে খরচ পড়ে সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে 'কেন এত অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে এ অপারেশন করে থাকেন রোগীরা'। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন মানিক বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে বেসরকারি মেডিকেলে অপারেশন করিয়েছি। সরকারি হাসপাতালে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা। বেসরকারি হাসপাতালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে আসতে হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, একটি অসাধু চক্র রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বাধ্য করে। এ জন্য তারা কমিশন পেয়ে থাকে। এমনকি প্যাথলজিগুলোর দালাল চক্র হাসপাতালের চারপাশে সারাদিন ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়।