• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বনশ্রীতে সুমনা খুন

পুলিশ বলেছে, স্ত্রী হত্যার পর নাটক সাজান রাসেল

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:২৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ফ্ল্যাটে গৃহবধূ জান্নাতুল বুশরা সুমনাকে (২৫) হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ রাসেল। এ তথ্য জানিয়ে পুলিশ বলেছে, স্ত্রীকে হত্যা করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটক সাজান রাসেল। আগেই নিচ থেকে একটি ইট নিয়ে যান তিনি। এরপর স্ত্রীকে অন্য এক যুবক হত্যা করেছে বলে চিৎকার করে পুরো বাড়ির মানুষকে জানান এবং বলেন, হত্যাকারীকে ধরতে গেলে তাঁকে ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ছাড়া রাসেল তাঁর দুই বন্ধুকেও ডেকে আনেন বাসায়।

পুলিশ জানায়, মঙ্গল ও বুধবার হেফাজতে রেখে রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি তাঁর স্ত্রী সুমনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হবে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পারেন রাসেল ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে বাসায় ফেরেন। অথচ ঘটনার পর তিনি দাবি করেছিলেন যে ৯টায় বাসায় ফিরেছেন। বাসায় ফেরার পর রাসেল নিচে নেমে একটি ইট নিয়ে যান। সেটা বাড়ির দারোয়ানসহ কয়েকজন দেখেছেন। অথচ রাসেল দাবি করেছিলেন, ঘাতক যুবক তাঁকে ইট দিয়ে আঘাত করার পর পালিয়ে গেছে।

পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, রাসেল ও সুমনার মধ্যে রাতে ঝগড়াঝাটি হওয়ার বিষয়টি আশপাশের লোকজনও টের পেয়েছে। উল্লেখ্য, রবিবার রাতে রামপুরার বনশ্রী এলাকার সাততলার একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে খুন করা হয় জান্নাতুল বুশরা সুমনাকে। ওই দিন রাত পৌনে ১০টার দিকে সুমনার স্বামী রাসেল ও তাঁর দুই বন্ধু তাঁকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমনাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই সময় রাসেল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রাত ৯টার দিকে বনানীর অফিস থেকে বাসায় ফিরে তিনি দরজায় নক করে স্ত্রীর সাড়া পাচ্ছিলেন না। পরে ফোনও করেন। কিন্তু তাতেও সাড়া পাননি। তখন বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার একপর্যায়ে দরজা খুলে এক যুবক বেরিয়ে আসেন। ওই যুবক নিজেকে একটি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী বলে পরিচয় দেন। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় তিনি ওই যুবককে আটক করতে গেলে তাঁকে ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে ছাদ টপকে পালিয়ে যান। এরপর বাসায় ঢুকে তিনি স্ত্রীকে পিছমোড়া করে হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন স্ত্রীর শরীরের নিচের দিকে পোশাক ছিল। এরপর তিনি নিচে নেমে চিৎকার করে তাঁর স্ত্রীকে হত্যার বিষয়টি লোকজনকে জানান।

তবে হাসপাতালে সুমনার আত্মীয়রা অভিযোগ করে, রাসেলই তাঁকে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর রবিবার রাতেই সুমনার বাবা রফিকুল ইসলাম রাসেলকে আসামি করে রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের হেফাজতে পায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে সুমনা। তাঁর বাবার গার্মেন্ট কারখানাসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর রাসেল হলেন সাধারণ ঘরের ছেলে। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে পরিবারের অমতে সুমনা গোপনে রাসেলকে বিয়ে করেন। বিষয়টি প্রায় এক বছর পর জানতে পারে সুমনার পরিবার। পরে রাসেল সুমনাকে তাঁদের চট্টগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর থেকে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।

সুমনার বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস রোমানা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাসেল তাঁর বোনকে নির্যাতন করতেন। তিনি আরো বলেন, একসময় সুমনা বাড়ি ছেড়ে আমাদের বাসায়ও চলে এসেছিল। আমরা বলেছিলাম তার (রাসেল) সঙ্গে ঘর না করার জন্য। কিন্তু সে স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। কিন্তু তারা বনশ্রীর বাসায় ওঠার পর থেকেই ঝগড়াঝাটির খবর পাচ্ছিলাম।

জানতে চাইলে রামপুরা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা  বলেন,আমরা তদন্ত করে দেখছি বিষয়টি। এখনই সব বলা যাবে না।

 

সর্বাধিক পঠিত