তুচ্ছ ঘটনায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে মঙ্গলবার রাতে তুচ্ছ ঘটনায় এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করেছেন সাবেক এক ছাত্র। তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যায়ের পপুলেশন সাইন্সেস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র গুরুতর আহত ফারুক হোসাইনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জানা যায়, তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-২০১০ সেশনের দর্শন বিভাগের ছাত্র আবু তালহা ওই ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনার পর থেকে আবু তালহা পলাতক রয়েছেন।
হল শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে হলের ডাইনিংয়ে আবু তালহার ছোট ভাইয়ের সাথে ডাইনিংয়ের কয়েকজন সদস্যর কথা কাটাকাটির হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডাইনিংয়ের বর্তমান ম্যানেজার ও হলের আবাসিক ছাত্র ফারুক হোসাইন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফারুক তালহার ছোট ভাইকে ঝগড়া করতে নিষেধ করেন এবং তালহাকে ডাইনিংয়ে ডেকে পাঠান।
এই ঘটনার জের ধরে আবু তালহা তার রুম থেকে একটি ধারালো ছুরি নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং ফারুককে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। এই সময় ডাইনিংয়ের সদস্য গোলাম কিবরিয়া ও আসাদ তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কোনো বাধা না মেনে ফারুকের পাকস্থলি ও হাতে ছুরিকাঘাত করেন। পরে ফারুককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
হলের একটি সূত্রে জানা যায়, আবু তালহা এস এম হল ছাত্রলীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন আনুর অনুসারী। তাই পড়ালেখা শেষ হলেও হলে থাকতে তার কোনো সমস্যা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে আবু তালহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ঘটনার পরপরই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীর একটি গ্রুপ লাটি-সোটা ও লোহার রড নিয়ে ১৬৬ নাম্বার রুমের তালহার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা রুমের দরজা ভেঙে ফেলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ বলেন, আমরা জেনেছি যে আবু তালহা নামে ওই ছেলেটির মাস্টার্স ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, তারপরও সে অবৈধভাবে হলে থাকত। আমরা তাকে খুঁজছি, কিন্তু ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করবে। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলেন, মামালার পাশাপাশি তাকে একাডেমিকভাবেও শাস্তি ভোগ করতে হবে।
হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হলের চারজন আবাসিক শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের সভাপতি তাহাসান আহমেদ রাসেল বলেন, সে ছাত্রলীগের কেউ না। তাছাড়া এই ঘটনা কোনো স্বাভাবিক মানুষের দ্বারা হতে পারে না। এই ঘৃণ্য অপরাধের জড়িত তালহার আমরা বিচার চাই। আশা করি, হল প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সুরাহা করবেন।’ এক্ষেত্রে হল ছাত্রলীগ প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে জানান তাহাসান।
তাহাসান জানান, হলে যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য এস এম হল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সবধরনের পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।