• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শেখ হাসিনার প্রতি মিয়ানমারের শিক্ষাবিদের শ্রদ্ধা

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২১:০৭ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২১:১৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

মিয়ানমারের ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারের প্রবক্তা ড. মং জার্নি নিজ দেশের নেত্রী অং সান সূ চী-কে ‘হৃদয়হীনা’ আখ্যা দিয়ে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দেখতে ছুটে গেছেন। সু চি বিপন্ন মানুষের পাশে যাননি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষ খেতে পারলে আরও ৫ লাখ খেতে পারবে। বিপন্ন ব্যক্তিদের দেখে তাঁর মধ্যে আমরা একটা পরিবর্তন দেখলাম। সব রাজনীতিকই একটা হিসাব-নিকাশ করেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা তাঁদের বিবেক বা হৃদয় সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলবেন। তাই সু চির থেকে শেখ হাসিনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা মিথ্যা বলেননি। অন্যদিকে সু চি বিবিসিকে বলেছিলেন, তারা আমাদের নয়, তাই কেন তাদের সুরক্ষা দেব? তিনি নিজেকে এক হৃদয়হীনায় পরিণত করেছেন।’

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মং জার্নি এ কথা বলেন। মালয়ৈশিয়ার কুয়ালালামপুরে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান। এতে ড. মং জার্নি অনেক কৌতুহলোদ্দীপক কথা বলেছেন, যা পড়ে পাঠক চমৎকৃত হবেন।

ড. মং জার্নির জন্ম ১৯৬১ সালে, মান্দেলেতে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ডে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। ৩০ বছর ধরে মিয়ানমারের মানবাধিকারের প্রবক্তা হওয়ার কারণে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনিই একমাত্র বর্মি বৌদ্ধ বিশেষজ্ঞ, যিনি রোহিঙ্গা নিধনের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে সোচ্চার।

ড. মং জার্নি জানান, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দিনগুলোতে সূ চী উত্তর রাখাইন পরিদর্শন করেছেন। ১৯৮৯ সালে এনএলডির পক্ষে প্রচারণা চালাতে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রোহিঙ্গারা রাখাইনে এনএলডির কার্যালয় খুলেছেন। তবে ২০১৫ সালে তিনি (সূ চী) নিশ্চিত করেন যে সংসদে যাতে কোনো মুসলমান না আসে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্মি সামরিক বাহিনীর মূল আপত্তিটা কোথায় জানতে চাইলে মং জার্নি বলেন, বর্মি জেনারেলরা রোহিঙ্গা ইস্যুকে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক পটভূমি থেকে মূল্যায়ন করে থাকে। তাঁরা ভুলভাবে মনে করে থাকে, পশ্চিম বার্মায় কখনো মুসলমান উপস্থিতি ছিল না। তাই রোহিঙ্গারা বার্মার কেউ নয়, বরং রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বার্মার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি একটি হুমকি।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক প্রসঙ্গে মং জার্নি বলেন, বাংলাদেশের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাবের দুটি কারণ বলতে চাই। প্রথমত, পাকিস্তান ও বর্মি আর্মির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পাকিস্তান আর্মি অব্যাহতভাবে শত শত বর্মি সামরিক গোয়েন্দাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জেনারেলগণ কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা এবং ক্ষমতা নিরঙ্কুশকরণে বিশ্বাসী। তাঁরা নীতিগত ও বাস্তবে কোনো ধরনের অঞ্চলগত বিচ্ছিন্নতার বিরোধী।

তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে বার্মা-বাংলাদেশ সম্পর্ক আসলে কখনোই সত্যিকার অর্থে ভালো ছিল না।

রোহিঙ্গারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪২-৪৫) জাপানিদের সমর্থন করেছিল এবং সাতচল্লিশের ভারত ভাগকালে পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল মর্মে প্রচলিত ধারণাটিকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে ড. মং জার্নি বলেন, রোহিঙ্গারা নয়, বরং রাখাইন বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরাই ফ্যাসিস্ট জাপানি দখলদারি শক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, ১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার প্রাক্কালে ব্রিটিশ আর্মিতে থাকা একজন রোহিঙ্গা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি উপদল পূর্ব পাকিস্তানে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা এই বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে বর্মি সামরিক বাহিনীর পাশে ছিল। সে কারণে বর্মি সামরিক বাহিনী স্বাধীনতার পর একটি শান্তিকামী সংখ্যালঘু হিসেবে তাদের মর্যাদা স্বীকার করে নিয়েছিল।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের একজন মন্ত্রীর ঢাকা সফর সম্বন্ধে মং জার্নি বলেন, তিনি (মন্ত্রী) সু চির নিয়োগ করা তিন বেসামরিক কূটনীতিকের একজন। তাদের সারা জীবন কেটেছে আন্তর্জাতিক ফোরামে সামরিক বাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করে। তারা প্রত্যেকে ধূর্ত এবং মুসলমানবিদ্বেষী, বর্ণবাদী। তাঁদের কারও হৃদয়ে এক তোলা পরিমাণ নীতিবোধ কিংবা মানবিক অনুভূতি নেই।

ড. মং জার্নি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের প্রস্তাব একটা কৌশলমাত্র। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর আড়াল করা এবং শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে প্রতারণাই এর লক্ষ্য। তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তা, তার ইতিহাস, পরিচিতি ও আইনগত অবস্থান ধ্বংস করা। আপনাদের মনে যদি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ দানা বাঁধে, তাহলে গত ২৫ বছরের জাতিসংঘের নথিগুলো, মানবাধিকারের নথিপত্র এবং ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রেস ক্লিপিংগুলো পাঠ করুন।

সর্বাধিক পঠিত