• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে আইসিটি ডিভিশনের সতর্কতা

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০১ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

ব্লু হোয়েল সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক একটি ডিপওয়েব গেম। যেসব কম বয়সী ছেলেমেয়ে অবসাদে ভোগে তারাই সাধারণত এতে আসক্ত হয়ে পড়েন। ভারতে ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়ে আত্মঘাতী কয়েক তরুণের সুইসাইডাল নোটে লেখা হয়েছে, ব্লু হোয়েলে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। এই গেমটি থেকে দূরে থাকতে সবাইকে সতর্ক হবার আহ্বান জানিয়েছে সরকারের আইসিটি ডিভিশন।

জানা যায়, ব্লু হোয়েল গেমে ৫০টি ধাপ রয়েছে। ৫০টি ধাপ ৫০ দিনে অতিক্রম করতে হয়। প্রথমদিকের ধাপগুলোতে সহজ কিছু থাকে। এর প্রতিটি ধাপ একাধিক কিউরেটর দ্বারা চালিত হয়। কিউরেটরদের নির্দেশ মতো গেমের এক একটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। গেমটির বিভিন্ন ধাপে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা, সারা গায়ে আঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, ভোরে একাকী ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেললাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি। চ্যালেঞ্জ নেয়ার পর এসব ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়।

ব্লু হোয়েলের ২৭তম দিনে হাত কেটে ব্লু হোয়েলের ছবি আঁকতে হয়। একবার এই গেম খেললে কিউরেটরের সব নির্দেশই মেনে চলতে হয় গেমের নিয়ম অনুযায়ী। সব ধাপ পার হওয়ার পর ৫০তম চ্যালেঞ্জ হলো আত্মহত্যা। এই চ্যালেঞ্জ নিলে গেমের সমাপ্তি। ২০১৩ সালে রাশিয়ায় এই গেম তৈরি হয়। রাশিয়ায় শুরু হলেও এই গেমের শিকার এখন এশিয়ার অনেক দেশ। সাধারণভাবে গোপন গ্রুপের মধ্যে অপারেট করা হয় এ গেম। এক্ষেত্রে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো জনপ্রিয় স্যোশাল প্লাটফর্মকে কাজে লাগায় এডমিনরা। ফিলিপ বুদেইকিন নামে এই সাবেক মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীকে ভাবা হয় ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের অন্যতম অ্যাডমিন। 

ফিলিপের পরিচয় সম্পর্কে রাশিয়ার পুলিশ জানায়, ২১ বছর বয়সি ফিলিপ রাশিয়ারই বাসিন্দা। সে ভিকোন্তাক্তে নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’ নামের একটি সোশ্যাল গেমিং পেজের অ্যাডমিন ছিল। এই গেম-এ প্রতিযোগীদের মোট ৫০টি আত্মনির্যাতনমূলক টাস্ক কমপ্লিট করতে হতো। ভয়ঙ্কর ছিল সেই সমস্ত টাস্ক। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি ছিল মোটামুটি নিরীহ, যেমন মাঝরাত্রে ঘুম থেকে উঠে ভূতের সিনেমা দেখা। কিন্তু গেম-এর লেভেল যত এগোতো, তত কঠিন এবং ভয়ঙ্কর হতে থাকত টাস্কগুলি। একটি টাস্কে প্রতিযোগীকে নিজের শরীরে ৫০টি ইঞ্জেকশনের সূচ ফুটিয়ে সেই ছবি পোস্ট করতে হতো গেমিং পেজে। আর একেবারে শেষ অর্থাৎ ৫০তম টাস্কটিতে প্রতিযোগীকে নিজের প্রাণহরণ করতে হত।

জেরায় ফিলিপ স্বীকার করে, এই চ্যালেঞ্জের যারা শিকার তারা এই সমাজে বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আমি সমাজ সংস্কারকের কাজ করছি।

ব্লু হোয়েলে আসক্তদের চিনবেন কীভাবে?
যেসব কিশোর-কিশোরী ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদের সব সময় লুকিয়ে রাখে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনও আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে থাকে তারা।

এর থেকে বাঁচতে কী করা যায়?
এই মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। সেগুলো হচ্ছে- প্রথমতো আপনাকেই সচেতন হতে হবে। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় কাজ করবেন। আপনি যাকে কখনও দেখেননি, যার পরিচয় জানেন না, তার কথায় কেন চলবেন বা তার কথামতো কেন কাজ করবেন- সেটি নিজেকেই চিন্তা করতে হবে।

এরকম কোনো লিংক সামনে এলে তাকে এড়িয়ে চলতে হবে। সমাজের তরুণ-তরুণীদের মাছে এই গেমের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে। সন্তান, ভাই-বোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা।

সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে তারা আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপ- এটা বুঝতে পারে। সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা- সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া। কৌতূহলি মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতূহল থেকে এটি  নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার মৃত্যু।

ঢাকায় ‘ব্লু হোয়েল
মারণ গেম ব্লু হোয়েল নিয়ে বিভ্রান্তি না ছাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, এই গেমটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন জন মেসেঞ্জারে বিভিন্ন লিঙ্ক দিচ্ছে, এসএমএস দিচ্ছে। এগুলো সব কিছু কিন্তু সঠিক নয়। দয়া করে আপনারা বিভ্রান্ত ছড়াবেন না।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ব্লুহোয়েল নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন লিঙ্ক ছড়াচ্ছে। আমরা সেটা সব সময় নজরদারিতে রাখছি।  আমরা সব সময় খেয়াল করছি কতগুলো লিঙ্ক থেকে এগুলো করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যতগুলো সম্ভব বন্ধ করে দেয়ার জন্য। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিটিআরসির সঙ্গে লিঙ্ক গুলো ব্লক করে দেয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আইসিটি ডিভিশনও নজর রাখছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটা কথাই বলবো আমাদের পরিবার, সামাজিক ভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং গণমাধ্যমে এই ব্লুহোয়েলের মত যত ধরণের ক্ষতিকারক গেম আছে তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সাবধান! অন্য নামে ফিরছে ব্লু হোয়েল!
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মর্মে ঘুরছে একটি ফোন নম্বর ও একটি ইন্টারনেট লিঙ্ক। ওয়েব হোক্স ধরার বিভিন্ন সাইট সম্প্রতি জানিয়েছে যে, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে popcorncarnival নামে কোনও লিঙ্ক এলে সাবধানে থাকাই উচিত। বিখ্যাত সাইট হোক্স স্লেয়ার জানাচ্ছে, প্রথমে একটি ভিডিও লিঙ্ক হিসেবে popcorncarnival হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের মেসেজ বক্সে ঢোকে। তারপরে তাতে ক্লিক করলেই তা পৌঁছায় হ্যাকারদের হাতে।

তবে হোক্স স্লেয়ার-এর মতে, এটা হ্যাকিংয়ের চাইতে বেশি কিছু নয়। কিন্তু টেক স্যাটায়ার নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল সম্প্রতি দাবি করেছে- এই হ্যাকারদের সঙ্গে যোগ রয়েছে ব্লু হোয়েল গেম-কর্মকর্তাদের। মোবাইল হ্যাক করে তারা গোপন তথ্য সংগ্রহ করে এবং ব্ল্যাকমেলের ভয় দেখিয়ে ব্লু হোয়েল গেম খেলতে বাধ্য করছে বলেই জানিয়েছে তারা। এখানেই শেষ নয়। +917574999093– এই মোবাইল নম্বরটিও বার বার উঠে আসছে এই প্রসঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই মুহূর্তে এই নম্বরটি ভাইরাল।

জানানো হচ্ছে, এই নম্বর থেকে কোনও উড়ো ফোন বা মেসেজ আসতে পারে যখন-তখন। সেই কল রিসিভ করলে বা মেসেজটি ক্লিক করলে হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট। এবং সেই হ্যাকিংও ঠেলে নিয়ে যেতে পারে মারণ খেলা ব্লু হোয়েল-এর দিকে। সুতরাং সকলকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছে আইসিটি ডিভিশন।