• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সু চি’র নীরবতার নেপথ্যে?

প্রকাশ:  ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেতা অং সান সু চি গত বছর একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকে তিনি এক গল্প শুনিয়েছিলেন যে কীভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী সংখ্যালঘু থাকার পর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরেকটি রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে মুসলিমরা। সু চি ওই কূটনীতিককে বলেন, তিনি চান না যে তার দেশও একই ভাগ্য বরণ করুক। তিনি আরও যোগ করেন, মিয়ানমারের অনেক অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু। অথচ, দেশটিতে মুসলিমদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শুরুটা ছিল এমনই।

‘বিহাইন্ড দ্য সাইলেন্স অব মিয়ানমার’স অং সান সু চি’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটিতে আলোচনা করা হয়েছে দেশটিতে চলমান রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে সু চি’র নিরবতার রহস্য কী, তা নিয়ে। গত কয়েক সপ্তাহে, সামরিক দমনপীড়নের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ওই সামরিক অভিযানের ফলে রাখাইন রাজ্যের অনেক গ্রামই মানবশূন্য। বাংলাদেশে পাড়ি জমানো রোহিঙ্গারা বর্ণনা করেছেন সৈন্যদের নৃশংস অত্যাচারের কথা। তারা বলছেন, সেনারা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। গুলি করে হত্যা করেছে অনেককে। ধর্ষণ করেছে বহু নারীকে। বাংলাদেশ সরকারের অনুমান, ২৫শে আগস্ট নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর থেকে ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

অব্যহত সহিংসতার, যাকে জাতিসংঘ বলছে ‘জাতিগত নিধনের আদর্শ উদাহরণ’, তার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন দেশটির সরকার প্রধান (স্টেট কাউন্সেলর) সু চি। তার আচরণ এমনই ছিল যে তার দীর্ঘদিনের সমর্থক, সহযোদ্ধা, নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব ও পশ্চিমা রাজনীতিকরাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছেন।

তার ঘনিষ্ঠ লোকজন বলছেন, তিনি যে সংযম বজায় রাখছেন, সেটি মূলত কৌশলগত সিদ্ধান্ত। সু চি মনে করেন, আরও কড়া ভাষায় কথা বললে সামরিক বাহিনী ক্ষুদ্ধ হবে। সামরিক বাহিনী একসময় দেশটি শাসন করতো। এখনও উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা তাদের হাতে। ফলে সামরিক বাহিনীকে ক্ষেপালে, বছরের পর বছর সংগ্রাম শেষে অর্জিত সীমিত গণতন্ত্রকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার মিশন ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
তাদের কথা হয়তো আংশিক সত্য। কিন্তু আরেক ব্যাখ্যাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। দেশটিতে অনেকেই মনে করেন মুসলিম সংখ্যাগুরুরা ছড়িয়ে পড়লে মিয়ানমারের ভঙ্গুর জাতিগত ও ধর্মীয় ভারসাম্য ভেঙ্গে পড়বে। অনেকেরই ধারণা, রোহিঙ্গারা হলো বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনুপ্রবেশকারী। তাদের উদ্দেশ্য দেশটিতে ইসলামের প্রসার ঘটানো। দৃশ্যত, এমন ধারণা সু চি নিজেও পোষণ করেন।

দেশটিতে সফররত এক কূটনীতিক যখন ২০১৩ সালে সু চি’র সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গা ইস্যু তুললেন, তখন স্পষ্টতই বিরক্ত হন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্লিজ, তাদেরকে রোহিঙ্গা বলবেন না। তারা বাঙ্গালি। তারা বিদেশী।’ প্রসঙ্গত, কাউকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বোঝাতে ‘বাঙ্গালি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় মিয়ানমারে। ওই আলোচনায় সু চি এ-ও অভিযোগ করেন যে, রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মুসলিমদের কাছ থেকে যেই হুমকির মুখোমুখি, সেটি আমলে নিচ্ছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

এই রিপোর্টের জন্য সাক্ষাৎকারের অনুরোধ জানালেও জবাব দেননি সু চি। তবে রোহিঙ্গাদের কী নামে ডাকা উচিৎ এমন প্রশ্নের জবাবে তার মুখপাত্র জ হতায় বলেন, ‘আমরা তাদেরকে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম বলে থাকি। আসলে তাদেরকে কী নামে ডাকা হবে, সেটা নির্ধারণ করা কঠিন। মাঝেমাঝে আমরা ‘বাঙ্গালি’ শব্দটি ব্যবহার করি, যখন পরিস্থিতি অনিবার্য হয়ে উঠে।’

এই সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত ছিলেন সু চি। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারতেন। সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, জাতিসংঘ অধিবেশনে ব্যতিক্রমী কিছু বললে, সেনাবাহিনী হয়তো তাকে দেশে ফিরতে দিত না, এমন উদ্বেগও ছিল। এর বাইরেও, সু চি বারবার রোহিঙ্গা বসতিতে আগুণ দেওয়ায় সেনাদের সমালোচনা করা থেকে বিরত ছিলেন।

১৯শে সেপ্টেম্বর রাজধানী নপিতাওয়ে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, তার সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘণের সব অভিযোগ তদন্ত করবে। শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন তিনি, যদি তারা নিজেদের পরিচয়ের প্রমাণ দিতে পারে। কিন্তু নিজেদের পরিচয় প্রমাণের সুযোগ অনেক রোহিঙ্গারই নেই। কারণ, অনেকে আক্রমণের মুখে এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়েছেন।

নাগরিকত্ব অথবা ভোটাধিকার বিহীন রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষ মিয়ানমারে বহু দশক ধরে বিদ্যমান। অনেক রোহিঙ্গা বলেন, তারা পশ্চিমাঞ্চলীয় মিয়ানমারের উপকূলীয় অঞ্চলের মূল বাসিন্দা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা সেখানে আসার আগ থেকে তারা সেখানে থাকতেন। বৃটিশ শাসন চলাকালে বৃটিশরা রোহিঙ্গাদেরকে বার্মায় (মিয়ানমারের সাবেক নাম) যেতে উৎসাহিত করতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, রোহিঙ্গারা পিছু হটা বৃটিশ বাহিনীর পক্ষ নেয়। অপরদিকে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা স্বাধীনতার আশায় জাপানিদের সঙ্গে যোগ দেয়। তখন থেকেই রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গত বছরের অক্টোবরে, স্বল্প পরিচিত একদল রোহিঙ্গা বিদ্রোহী রাখাইন রাজ্যের এক পুলিশ চৌকিতে আক্রমণ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্য সেবার নিহত হয়। মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং হাইং ‘ফোর কাটস’-এর নির্দেশ দেন। সত্তরের দশকে চালু হওয়া এই সামরিক কৌশল হলো বেসামরিক এলাকায় অভিযান চালানোর মাধ্যমে বিদ্রোহীদের খাবার, অর্থ, সদস্য সংগ্রহ ও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া বন্ধ করা। জেনারেল হাইং ওই অভিযানকে পরে বর্ণনা দেন ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অসমাপ্ত অধ্যায়’ হিসেবে।

সু চি’র ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, সামরিক বাহিনীকে উস্কানি দিলে তারা পুনরায় সম্পূর্ণ ক্ষমতা দখলে নিতে পারে। এমন এক ব্যক্তি বলেন, ‘বেসামরিক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েই এই দুশ্চিন্তা রয়েছে।’ সু চি অবশ্য বলেছেন, বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত করতে সংবিধান সংশোধন করা হলো তার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য।

এছাড়া খ্রিস্টান ও চীনা গ্রুপগুলোকে আরও স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার মাধ্যমে তিনি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনয়ন করতে চান। তাদের গেরিলা বাহিনী চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড সীমান্তে কয়েক দশক ধরে বার্মিজ সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছে। সু চির পিতারও একই লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এই লক্ষ্যে অন্তর্ভূক্ত নেই রোহিঙ্গারা।

অনেক মানবাধিকার কর্মী ও কিছু কূটনীতিক এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, মূলধারার রাজনীতিবিদের চেয়ে সু চি বিরোধীমতের আইকন হিসেবেই বেশি মানানসই ছিলেন। নোবেল বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু সম্প্রতি তাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘যদি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আপনার আরোহণের রাজনৈতিক মূল্য হয় নীরবতা, তাহলে এই মূল্য অত্যন্ত চড়া।’ তার মতো অনেকের মনোভাবই এমন।
অতীতে, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সু চির বীরত্ব বিশ্বব্যাপী অনেক ভক্তির জন্ম দিয়েছে। উইন হতেইন নামে তার দলের এক জ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, সু চির এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে কর্তৃত্বপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এই বৈশিষ্ঠ্য দেশটির সাবেক সামরিক শাসনের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই গুণের কারণেই তিনি বছরের পর বছর গৃহবন্দী থেকেও দৃঢ় রয়ে গিয়েছিলেন। যেমন, একবার সু চির বাড়ির সামনে একদল নিরস্ত্র সমর্থক দাঁড়িয়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে জানাচ্ছিল। তখন এক সেনা কমান্ডার তার সৈন্যদেরকে ওই প্রতিবাদকারীদের ওপর বন্দুক তাক করে রাখার নির্দেশ দেন। সু চি ওই সেনা কমান্ডারের দিকে এগিয়ে যান। গিয়ে বলেন বন্দুক সরাতে। ওই কমান্ডার অনেকটা নির্দেশ পালনের মতো তার কথা পালন করেছিলেন।

অক্সফোর্ডে তার বৃটিশ স্বামী মাইকেল অ্যারিস যখন ক্যান্সারে কাতরাচ্ছিলেন, তখন সু চি’র সুযোগ ছিল মায়ানমার ছেড়ে তার পাশে থাকার। কিন্তু তিনি রয়ে যান দেশে, কারণ তার আশঙ্কা ছিল সামরিক জান্তা হয়তো তাকে ফিরতে দেবে না। সু চিকে খুব ভালো করে জানেন এমন এক কূটনীতিক বলেন, ‘একসময় তার যেই চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যকে বলা হতো শক্তি ও দৃঢ়তার প্রতীক, ঠিক সেটাকেই এখন বলা হচ্ছে অযোগ্যতা। আসলে মানুষ হিসেবে তিনি আগের সেই সু চিই রয়ে গেছেন।’

২০১০ সালে সু চিকে মুক্তি দেয় জান্তা। এরপর গণতন্ত্রের পথে একটি রূপরেখাও বাস্তবায়ন করে সেনাবাহিনী, যদিও অনেক ক্ষমতা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছিল তারা। তখন সু চি এক কূটনীতিককে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের মিথ্যে আবরণ নিশ্চিতভাবেই একনায়কতন্ত্রের চেয়ে খারাপ।’ কিন্তু পরে সু চি সিদ্ধান্ত নেন মিয়ানমারকে পূর্ণ গণতন্ত্রে পরিণত করতে সীমিত ক্ষমতা গ্রহণ করাটাও খারাপ নয়। পরে অনেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আদর্শবাদী নেত্রী বা মানবাধিকার আইকনের চেয়ে তিনি রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হতে চান বেশি।

মিয়ানমারে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন ডেরেক মিচেল। তিনি বলেন, ‘সু চি দেখতে পান যে, মিয়ানমারে গণতন্ত্রে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার সুযোগ রয়েছে।’ মুক্তি পাওয়ার পর সেনা সদস্যদেরকে নিজের ‘ভাই’ হিসেবে বর্ণনা দেন তিনি। ২০১৩ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি খুবই অনুরক্ত। সশস্ত্র বাহিনী দিবস কুচকাওয়াজে তিনি জেনারেলদের পাশে আসন গ্রহণ করেন। তাকে চেনেন এমন মানুষজন বলছেন, সু চি আসলে সাংবিধানিক সংশোধনীর পক্ষে সমর্থন গড়ার কাজ করছেন।

সু চি’র সঙ্গে আলাপ হয়েছে এমন ব্যক্তিরা বলছেন, সু চি বলেছেন সেনাপ্রধানের ওপর তার প্রভাব খুবই কম। মিয়ানমারের বহুধাবিভক্ত জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে বৃহত্তর শান্তি চুক্তি করার যে আশা তিনি জাগিয়েছিলেন, সেটি এরমধ্যেই নিভু নিভু করছে। তিনি ক্ষমতাগ্রহণের পর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ উদ্ধাস্তুর সংখ্যা বেড়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আস্থা অর্জনে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, অনেক গোষ্ঠীই মনে করে সামরিক বাহিনীর কাছেই রয়েছে আসল ক্ষমতা।

তবে সু চি’র মুখপাত্র জ হতায় বলছেন, তার সরকারের শান্তি পরিকল্পনায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পূর্বের সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার অনেকগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছিল। অপরদিকে সু চি আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হয়েছেন।

সু চির দল ২০১৫ সালের নির্বাচনে কোনো মুসলিমকে প্রার্থী হিসেবে রাখেনি। এ নিয়ে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো কড়া সমালোচনা করেছে। আবার রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বল্প প্রতিক্রিয়া নিয়েও ক্ষুদ্ধ তিনি। জাতিসংঘ যখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সংবরন বজায় রাখতে বললো, তখন তিনি রাজধানীতে কর্মরত জাতিসংঘের এক কর্মকর্তাকে ডেকে শাসান। ওই কর্মকর্তা সেই আলাপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘তিনি (সু চি) আমাকে বলেন যে, ‘আপনারা কেন হামলাগুলোর আরও কড়া নিন্দা জানাচ্ছেন না? সেখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে।’’ আরেক কূটনীতিক জানান, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতেও অনাগ্রহী সু চি। তার যুক্তি, এর ফলে বাংলাদেশ থেকে আরও মুসলিম মিয়ানমারে ঢুকবে।

সু চি’র সাবেক মিত্রদের কেউ কেউ মনে করেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা বণ্টনের চুক্তি করে তিনি ঠিক আগের মতো গৃহবন্দীই রয়ে গেলেন। ইয়াঙ্গুন কেন্দ্রীক একটি থিংকট্যাংকের পরিচালক খিন জ উইন ছিলেন সু চি’র এমন এক পুরোনো সহযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর প্রতি সু চি যে ছাড় দিয়েছেন, তার অর্থ হলো, অদূর ভবিষ্যতে মিয়ানমার আদৌ পূর্ন গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (সু চি) সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নিজেকে বেঁধে ফেলছেন, কারণ উভয় পক্ষ বুঝতে পারছে যে তাদের একে অপরকে ছাড়া চলবে না। আর সু চি’র অতীতের আর বর্তমানের শত বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও বলতে হয়, সামরিক বাহিনীর ওপর তার প্রভাব শূন্য।’

(ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিহারিকা মানঢানা ও জেমস হুকওয়ে।)

সর্বাধিক পঠিত