যেভাবে নোবেল পুরস্কারের প্রার্থী নির্বাচিত হয়

গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কারের কথা ঘোষিত হয়েছে৷ সাধারণত এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে গণ্য করা হয়৷ দেখা যায়, অন্যান্য পুরস্কারের তুলনায় নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন ও নির্বাচন পদ্ধতি বেশ দীর্ঘ ও কঠোর।

নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট মনোনয়নপত্র রয়েছে। গোটা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ৩ হাজার জনকে এই মনোনয়নপত্র দেয়া হয় যাতে তারা তা পূরণ করে পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার নির্বাচনের জন্য এমন সব ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয় যারা এ বিষয়ে বিশেষ কর্তৃত্বের দাবিদার। যে বছর পুরস্কার প্রদান করা হবে সে বছরের ৩১ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র প্রদানের শেষ তারিখ। নোবেল কমিটি তাদের মধ্যে সম্ভাব্য ৩০০ জনকে মনোনীত করে। মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হয় না, এমনকি তাদেরকে জানানোও হয় না যে তারা মনোনীত হয়েছেন।

কলকাতা২৪ এর খবরে বলা হয়েছে, মনোনয়নের এসব নথি পুরস্কার প্রদান থেকে ৫০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।

এরপর নোবেল কমিটি বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকাসহ এই প্রতিবেদনটি নোবেল পুরস্কার প্রদানের সংস্থাগুলোকে পাঠানো হয়। সংস্থাগুলোকে সংখ্যাধিক্য ভোটের মাধ্যমে প্রত্যেকটি বিষয়ে বিজয়ী নির্বাচিত করতে হয়। ভোটের ঠিক পরপরই তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। একটি পুরস্কার সর্বোচ্চ তিনজন এবং দুটি ভিন্ন কাজের জন্য দেয়া যায়। নোবেল শান্তি পুরস্কার যেকোনো সংস্থাকে প্রদান করা যায়, তাছাড়া সকল পুরস্কার শুধু জীবন্ত ব্যক্তিকে দেয়া হয়ে থাকে। যদি শান্তি পুরস্কার দেয়া না হয়, তবে তার অর্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য পুরস্কারে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়। যা এযাবৎকালে ১৯ বার ঘটেছে।

যদিও মৃত্যু পরবর্তী মনোনয়ন অনুমোদিত নয়, তবুও যদি প্রার্থীর মৃত্যু মনোনয়ন প্রদান ও নোবেল কমিটির পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে হলে তবে তা নির্বাচিত হবার যোগ্য হবে। ইতিহাসে এমনটি দুইবার ঘটেছে - ১৯৩১ সালে সাহিত্যে এরিক এক্সেল কার্লফেল্ড এবং ১৯৬১ সালে শান্তিতে জাতিসংঘের মহাসচিব ড্যাগ হেমার শেল্ড। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এমনটি ভাবা হতো যে, অক্টোবরের ঘোষণা পর্যন্ত বিজয়ী বেঁচে থাকবেন। উইলিয়াম ভিক্রী নামক একজন নোবেল বিজয়ী ১৯৯৬ সালে পুরস্কার (অর্থনীতিতে) ঘোষণার পর কিন্তু প্রদানের আগে মারা যান। ৩ অক্টোবর ২০১১ চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়; সে পর্যন্ত কমিটি জানতো না যে, বিজয়ীদের একজন রালফ স্টেইনম্যান তিন দিন আগে মারা গেছেন। কমিটিতে রালফ স্টেইনম্যানের পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক চলছিল, কারণ মরোনোত্তর পুরস্কার নিয়মের পরিপন্থী। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত অক্ষুন্ন রাখার হয়।