নিত্যপণ্যের দামে নাভিশ্বাস
বাজারে চালের দামে অস্বস্তি। মাছ-মাংসসহ সবজির দাম চড়া। স্বস্তি নেই অন্যন্য নিত্যপণ্যের দামেও। নানা অজুহাতে এসব পণ্যের দাম বাড়লেও দাম কমে খুব কমই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ক্রেতাদের।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত তদারকির অভাবে বাজারে অনেক পণ্যের অস্বাভাবিক দাম রয়েছে। কোনো কোনো পণ্যে অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের পর থেকে ক্রমাগত চালের দাম বাড়ায় যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তার রেশ এখনও কাটেনি। কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়লেও এখন আর আগের দামে পাওয়া যাচ্ছে না চাল। ব্যবসায়ীরা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও দাম কমেছে অল্পই। এদিকে চালের দামের সঙ্গে বাজারে শাক সবজির দামও চড়া।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দু’একটি সবজি ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। বন্যার অজুহাতে অনেকদিন ধরেই কিছুটা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি। এরপরও গত সপ্তাহে নতুন করে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে অনেকেই দরাদরি করতে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতেও জড়িয়ে পড়ছেন।
সবজির দরবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো সরবরাহের ঘাটতিকে অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে অনেক সবজির ক্ষেত মরে গেছে। নতুন করে আবাদ করা সবজি এখনও পুরোপুরি আসেনি, ফলে দাম বাড়ছে। রাজধানীর বাজারে ৫০-৬০ টাকার নিচে মিলছে না তেমন কোনো সবজি। সপ্তাহ ব্যবধানে পেপে ও পটোল ছাড়া অন্য সবজির দাম বেশ চড়া। দরবৃদ্ধিতে সবার উপরে রয়েছে কাঁচামরিচ। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে কোথাও কোথাও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা।
বাজারে সিমের কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও তা ১২০ টাকা ছিল। প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বেগুন ধরনভেদে ৯০-১০০ টাকা হয়েছে। এখন গাজর ও টমেটো ১০০-১২০ টাকা কেজি; যা আগের সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। প্রতি কেজি বরবটি ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পটোল ও করলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মূলা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, লালশাক প্রতি আঁটি ৩০, ডাঁটাশাক ৩০, কলমিশাক ২০, পুঁইশাক ৬০ ও পাটশাক ১৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সপ্তাহজুড়ে মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে পিয়াজের দাম। প্রতি কেজি ভারতীয় পিয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ ও দেশি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মজিদ বলেন, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন আড়ত ও মোকাম থেকে সবজির সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি ওইসব অঞ্চলেও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। এর প্রভাবে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোয় প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ২২-২৬ টাকায়।
এদিকে ৩৮ টাকা কেজি দরের মোটা চালের দাম বেড়ে ৫৪ টাকায় বিক্রি হলেও তা এখন কিছুটা কমেছে, তবে তা ৪৮ টাকার নিচে নামেনি। সরু চালের কেজি এখনো ৬৫ টাকা। এ সময়ে কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে আটার দাম। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় প্রতি কেজি সরু চাল ৬০-৬৮ টাকা, সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট ৬০-৬৫, উন্নতমানের নাজির ও মিনিকেট ৬৫-৬৮, মাঝারি মানের চাল ৫৪-৫৮, সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা ৫৪-৫৬, উন্নতমানের পাইজাম ও লতা ৫৬-৫৮ এবং মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫২ টাকায়। টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, সপ্তাহ ব্যবধানে সরু ও নাজির চালের দাম কমেছে কেজিতে ২ টাকা। অন্য চালের দর স্থিতিশীল।
এদিকে বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দামও। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনে দুই টাকা করে দাম বেড়েছে। টিসিবির হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ টাকা পর্যন্ত। আগে যে সয়াবিন বিক্রি হতো ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা লিটার, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৮ টাকায়।
প্রজনন মৌসুমের কারণে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশ ধরা ও বিপণনের ওপর চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এর প্রভাবে বাজারে ইলিশের দাম তো বেড়েছেই, সঙ্গে বেড়েছে অন্য মাছের দামও। প্রতি কেজি বড় আকারের ইলিশ (৮০০ গ্রামের উপরে) দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রায় মাসখানেক ধরে তুলনামূলক সস্তায় থাকা ছোট আকারের ইলিশের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা। বর্তমানে ছোট আকারের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে। একইভাবে প্রতি কেজি রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ ও শিং ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সপ্তাহজুড়ে মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। রাজধানীতে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৮০-৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া প্রতি কেজি খাসি ৭০০-৭৫০, ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩০ ও দেশি মুরগি ৩৭০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।