বাংলাদেশে আরো রোহিঙ্গা প্রবেশের শঙ্কা জাতিসংঘের
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের সহিংসতা বন্ধ হয়নি। শুক্রবার ও আগের দিন বৃহস্পতিবারও বেশ কযেকটি বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নির্যাতন ও হুমকি অব্যাহত আছে। সেইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে চলাচলে। এমতাবস্তায় বাংলাদেশে আরো রোহিঙ্গা মুসলমানের ঢল নামবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। এখনও প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক শুক্রবার এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি সেখানে ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দিতে আবারো দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তর রাখাইনে অবরুদ্ধ রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিরতণ করতে যাওয়ার কোনো অনমুতি নেই মিয়ানমার সরকারের। এমনকি অবরুদ্ধরাও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে বের হতে পারছে না। ফলে সেখানে মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি বলে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করে আলজাজিরা।
জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে লোকক বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়নি। তাছাড়া মিয়ানমারে এখনো যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। স্বাভাবিকভাবেই আরো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসবে ধরেই আমরা প্রস্তুতি নিতে চাই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা মিয়ানমার সফর করবেন বলেও জানান লোকক। পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলেছে, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি চেকপোস্টে বিদ্রোহীরা হামলা চালায়। এতে ১২ জন নিহত হয় বলে দাবি দেশটির। ওইদিন থেকেই রাখাইন রাজ্যের মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। আর তাতে যোগ দেয় স্থানীয় বৌদ্ধরা। তাদের সহিংসতায় ইতোমধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মারা গেছে। যদিও নিহতের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে না। আর জীবন বাঁচাতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সোয়া ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা লোকজনের পালানো ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যারা মিয়ানমারের নাগরিক নয় তারা পালিয়ে যাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, শুক্রবার মিয়ানমারের সরকারি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্ত অতিক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ওই সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, জীবিকার সমস্যা, চিকিৎসা সমস্যা এবং সংখ্যালঘু হওয়ায় নিরাপত্তার ভয়ে তারা এটি করছে।
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যের যুগের যুগ ধরে বাস করে আসছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক অধিকার আজ পর্যন্ত দেয়নি। দেশটির দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে পালিয়ে গেছে। যদিও এ দাবির পক্ষে যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেনি নেইপিদো। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান সহিংসতাকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, উত্তর রাখাইনে চার শতাধিক রোহিঙ্গা গ্রামের বেশিরভাগই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশটি বলছে, তারা ‘সন্ত্রাসী’দের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।