বিচারপ্রার্থী নারীকে ইউপি পরিষদে আটকে রাতভর ধর্ষণ
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী এক নারীকে রাতভর ইউপি পরিষদে আটক রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের অভিযোগ ফাঁস করার কথা বলায় তাকে বেদম মারধর করেছে বলেও অভিযোগ করেছে ওই নারী। বুধবার রাত ১১টার পর থেকে এ তাণ্ডব শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন। ধর্ষিতা নারী (২৭) একই ইউনিয়নের মধ্যম চরবাটা গ্রামের বাসিন্দা।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, প্রতারণার বিচার চাইতে আসলে উল্টো চেয়ারম্যান দ্বারা ধর্ষিত হই। ওই ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার কথা বললে আমাকে রাতভর ইউপি পরিষদের একটি কক্ষে আটক রেখে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করে। এতে আমার পুরো শরীরে রক্তাক্ত জখম হয়।
তিনি জানান, নির্যাতনের পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। পরে দুপুরে চরজব্বার থানায় অভিযোগ করতে গেলে প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়নি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপের মুখে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করেন।
ওই নারী জানান, তিনি বিবাহিতা। তার একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু স্বামী ভরণ-পোষণ দেওয়া তো দূরের কথা দীর্ঘদিন ধরে কোনো যোগাযোগও করছে না। এরই মধ্যে হাতিয়া উপজেলার নঙ্গলিয়া গ্রামের ভূমিহীন বাজার সংলগ্ন রবিউল হোসেন নামে এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। শুরুতে ছেলেটি নিজেকে অবিবাহিত বললেও সম্প্রতি ছেলেটি বিবাহিত বলে জানতে পারেন তিনি। পরে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন ওই নারী। বেশ কিছুদিন যোগাযোগ না করায় ছেলেটি গত বুধবার রাতে তাদের বাড়িতে আসলে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়।
পরে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ওই ছেলে, অভিযোগকারী নারী, তার তিন ভাই ও বোনকে পরিষদে ডেকে আনে। একপর্যায়ে নারীর অভিযোগ শোনার পর চেয়ারম্যান উল্টো তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং ছেলেকেও মারধর করেন। পরে অন্য সকলকে বের করে দিয়ে ওই নারীকে একটি কক্ষে আটক রেখে জোর করে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে। বিষয়টি তিনি বাহিরে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ সকলকে জানাবে বলায় একটি লাঠি দিয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই তাকে বেদম মারধর করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তবে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অবশ্য এর আগে দুপুরের দিকে চেয়ারম্যান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই নারী দুশ্চরিত্রা। এর বেশি কিছু না বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
জানতে চাইলে চরজব্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ধর্ষণের বিষয়টি মেডিকেলের রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ওই নারীর শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের বেশকিছু চিহ্ন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।