সদস্য সংগ্রহের সময় ফের বাড়ালো বিএনপি
দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচির সময়কাল ফের এক মাস বাড়িয়েছে বিএনপি। সোমবার দুপুরে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির সময়কাল দ্বিতীয় দফায় বাড়ানোর দলীয় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আমাদের দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার জন্য দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও পুরনো সদস্য নবায়নের কর্মসূচি সারা দেশে চলছে। এই কর্মসূচি দুই মাস ছিল, আমরা তা এক মাস বৃদ্ধি করেছিলাম, সেটাও গতকাল শেষ হয়েছে। আমরা নির্দেশ পেয়েছি, এটা আরো এক মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে... আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত।
‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের গুরুত্ব’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় দলের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির সময় বাড়ানোর এই কথা জানান বিএনপি নেতা রিজভী।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বিএনপির সুইডেন শাখা আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী সময়কাল ফের বাড়ানোর কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করলেও দলের দপ্তর শাখা থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় কর্মসূচির মেয়াদ দ্বিতীয় দফা বাড়ানো হয়েছে।
গত ১ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সদস্য সংগ্রহের দুই মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনীতে ওই কর্মসূচির মাধ্যমে এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিলেন দলটির চেয়ারপারসন।
গত ১ সেপ্টেম্বর কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ফের এক মাস বাড়িয়ে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি।
বিএনপির দপ্তর শাখা থেকে জানা যায়, ১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ফরমের দাম রাখা হয়েছে ১০ টাকা। সেই হিসেবে প্রায় ৭ কোটির মতো অর্থ বিএনপির তহবিলে জমা পড়েছে। উত্তরাঞ্চলসহ ২৭টি জেলায় ব্যাপক বন্যা ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটে সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে ভাষ্য একাধিক বিএনপি নেতার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদেরের সমালোচনা করে তাকে ‘তামাশা ম্যান’ বলেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি হচ্ছে প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ এবং প্রধান বিরোধী দলের প্রতি সকাল-সন্ধ্যা অনর্গল মিথ্যাচার করা। উত্তর কোরিয়ার শাসককে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (ডোনাল্ড ট্রাম্প) বলেছেন, রকেট ম্যান। আর বাংলাদেশে অরাজনৈতিক, অপসংস্কৃতির যত ধরনের সংস্কৃতি তৈরি করা দরকার- সেটা করেছেন প্রধানমন্ত্রী; আর তার ‘তামাশা ম্যান’ হচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনার সকল ধরনের অনাচারকে তিনি (কাদের) সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একজন উন্নতমানের ফেরিওয়ালার ভূমিকা পালন করছেন, হকারের ভূমিকা পালন করছেন। রাস্তাঘাট সব ঠিক বলছেন। বাস্তবে রাস্তাঘাটের কী ভয়ঙ্কর অবস্থা। অর্থাৎ ওবায়দুল কাদেররা যা বলবেন, ঠিক তার উল্টোটা জনগণকে বিশ্বাস করতে হবে, উল্টোটা বিশ্বাস করলে সত্যটা পাবেন। এটাই আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি।
আলোচনায় আসছে সংসদ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমি বলব, আন্দোলন বা সংগ্রামের কোনো বিকল্প নাই। আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত, অনিশ্চিত। কারণ এমন কোনো দেশি-বিদেশি শক্তিকে শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করতে পারেন নাই যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করতে গেলেও মাঠ থেকে সে ফেরত আসতে পারবে। সুতরাং আমরা ক্ষমতায় যাই বা না যাই, এই সরকারের আয়ু বেশি দিন নাই। এখন সরকার যাবে, সেই যাওয়ার পেছনে আপনাদের কোনো অবদান আছে কিনা জনগণের মাঝে তা যদি দৃশ্যমান না করেন, ফলাফল আপনাদের গোলায় নাও আসতে পারে।
সুইডেন বিএনপি শাখার উপদেষ্টা মিজান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।