• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বঙ্গবন্ধুর নাম বদলে এমপির নামে কলেজ: দ্বিতীয় মামলাও খারিজ

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:১৭
দিনাজপুর প্রতিনিধি
এপিপি মিন্টু পাল
প্রিন্ট

দিনাজপুর- ১ ( বীরগঞ্জ - কাহারোল) আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নামে করা কলেজের নাম পরিবর্তন করার অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলা খারিজের পর মানহানীর মামলাটিও খারিজ করে দিলেন আদালত।  

সোমবার বিকাল ৩ টায় দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-২ এর বিচারক মো. লুৎফর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৩ ধারায় অভিযোগটি খারিজ করে দেন। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর নামে করা কলেজের নাম পরিবর্তনের মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারায় অভিযোগটি খারিজ করে দেন আদালত।

সরকারি এপিপি মিন্টু পাল জানান, দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের বিরুদ্ধে বীরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য অজিবুল ইসলাম দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-২ এ পৃথক দুটি আবেদন করেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আবেদন দুটির ওপর অভিযোগকারী অজিবুল ইসলামের ২০০ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে করা কলেজের নাম পরিবর্তনের অভিযোগটি (অভিযোগ নং-২৪৪/১৭, ২০০১ সালের ৪ ধারা) স্বেচ্ছায় প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

পরে বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লুৎফর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারায় অভিযোগটি খারিজ করে দেন।

মিন্টু পাল জানান, ২০০১ সালের এ আইনটি ২০০২ সালে বাতিল করা হয়েছে। ফলে এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।

একই বাদী বঙ্গবন্ধুর মানহানি ঘটানোর অভিযোগ তুলে আরও একটি আবেদন করেন (যার নং-সিআর ২৪৫/১৭ ধারা ৫০০/৫০১)। বিচারক এই মামলাটির আদেশের জন্য ২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। বাদীর জবাববন্দি পর্যালোচনা করে বিচারক মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৩ ধারায় অভিযোগটি খারিজ করে দেন।

এ বিষয়ে দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল জানান, পলাশবাড়ী আদর্শ মহাবিদ্যালয়কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের বিষয়ে আমি ডিও লেটার দেই। বঙ্গবন্ধু কল্যাণ ট্রাস্ট-এর অনুমতি না পাওয়ায় কলেজের ম্যানেজিং কমিটি পরে অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। মামলা খারিজের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনায়ন করা হয়েছিল তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। বাদী কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ আদালতে উত্থাপন করেছিলেন।

এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. নুর ইসলাম নুর জানান, একজন জনপ্রিয় সংসদ সদস্যের নামে মিথ্যা মামলার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। যাতে সাধারন মানুষের কাছে এমপি জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়। এটি একটি মিথ্যা মামলা, যার কোন ভিত্তি নাই। এই মামলার রায় শোনার জন্য বীরগঞ্জ-কাহারোলবাসী অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। আজ বিজ্ঞ আদালত এই মিথ্যা মামলার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমরা এ  রায়ে সন্তুষ্ট।

এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. হবিবর রহমান জানান, তারা অভিযোগ দুটি বাদী প্রত্যাহার করে নিয়েছে জানতে পেরেছি। তা ছাড়া আদালতে যে অভিযোগ করা হয়েছিল তা সঠিক ছিল না। কারণ কলেজটি ২০০৩ সালে পলাশবাড়ী আদর্শ মহাবিদ্যালয় হিসাবে স্থাপিত হয়। ২০০৯ সালে পাঠ দানের অনুমোদন পায়। এরপর ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু আদর্শ মহাবিদ্যালয় নামকরণ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের সম্মতিসুচক ডিও লেটাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু কল্যান ট্রাস্ট ও দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করা হয়। কিন্তু ঐ মুহুর্তে বঙ্গবন্ধুর নামে কোন প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হবে না বলে কলেজের আবেদন নামঞ্জুর করেন বঙ্গবন্ধু কল্যাণ ট্রাস্ট। ফলে বঙ্গবন্ধুর নামে ওই কলেজের নামকরণ করা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে কলেজটি ২০১৩ সালে পলাশবাড়ী আদর্শ মহাবিদ্যালয় হিসাবে অনুমোদন লাভ করে। এরপর কলেজ পরিচালনা কমিটি কলেজটির উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সম্মতিক্রমে ২০১৫ সালে কলেজের নাম পলাশবাড়ী এম এস গোপাল মডেল কলেজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে এমপি সাহেবের সম্মতি ছিলনা। তারপরও সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী কলেজ কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে কলেজটি পলাশবাড়ী এম এস গোপাল মডেল কলেজ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। কাজেই বঙ্গবন্ধুর নাম কাটার কোন প্রশ্নই উঠেনা। তা ছাড়া কলেজ পরিচালনা কমিটির সাথে এমপির কোনো সম্পর্ক নেই। এখন যে অভিযোগ করা হয়েছিল তা শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণে। কেউ বাদীকে প্রভাবিত তরে রাজনৈকিত ফায়দা নেয়ার জন্য এই মামলা করিয়েছিলেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

এ ব্যাপারে মামলার বাদীর যুবলীগ নেতা অজিবুল ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে খুজে পাওয়া যায়নি।

 

সর্বাধিক পঠিত